আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মরন ব্যাধি এইচআইভি বা এইডস সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই কমবেশি জানা আছে । কিন্তু আমাদের প্রতিদিনের জানার বিষয়বস্তু এত বেশি যে , পুরোনো জানা বিষয় গুলো আমরা প্রায় ভুলেই জযাই । তাই আসুন এই মারাত্বক ব্যাধিএইডস সম্পর্কে সবাই মিলে আরেকবার জেনে নেই এবং অন্যকেও জানাই

পৃথিবীটা যদি একটা বিশাল নদী হয় , তবে আমি ভাববো পৃথিবীর উপর আমি একটি ভাসমান নৌকা । যার ধর্মই হচ্ছে বয়ে চলা । এইচআইভি বা এইডস হলো জীবনহানিকর একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। এখন পর্যন্ত এইচআইভি/এইডসের কোন কার্যকর চিকিৎসা আবিস্কার হয়নি। এইডসের সংক্রমণ প্রতিরোধ সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এর প্রতিরোধ, চিকিৎসা এবং এইডস সম্পর্কে পড়াশুনা ও সচেতনতা।

এইডস কি ? এইডস একটি সংক্রামক রোগ যা এইচআইভি (Human Immunodeficiency Virus) ভাইরাসের সংক্রমণের মাধ্যমে হয়। এটি মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। এইচআইভি সংক্রমণের ফলে অন্যান্য রোগ যেমন-নিউমোনিয়া, মেনিননজাইটিস এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। এইচআইভি সংক্রমণের পরের ধাপকেই এইডস (Acquired Immunodeficiency Syndrome) বলা হয়। এইডস হয়েছে কি করে বুঝছেন সংক্রমণের ধাপের উপর নির্ভর করে এইচআইভি ও এইডসের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো পৃথক হয়ে থাকে।

এইডস এর লক্ষণ ও উপসর্গ সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত: * জ্বর * মাথা ব্যথা * গলা ভাঙ্গা * লসিকাগ্রন্থি ফুলে উঠা (Swollen lymph glands) * শরীরে লালচে দানা (Rash) ইত্যাদি লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়। সংক্রমণের পরবর্তী সময় সাধারণত: * অস্থিসন্ধি ফুলে উঠা (Swollen lymph nodes) * ডায়রিয়া * শরীরের ওজন কমা *জ্বর * কাশি এবং শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়। সংক্রমণের শেষ পর্যায়ে সাধারণত: * রাতের বেলা খুব ঘাম হওয়া * কয়েক সপ্তাহ ধরে ১০০ ফারেনহাইট (৩৮ সে.) বা এর অধিক তাপমাত্রার জ্বর অথবা কাঁপুনি * শুকনা কাশি এবং শ্বাস কষ্ট * দীর্ঘদিন ধরে ডায়রিয়া * মুখ অথবা জিহ্বা বেঁকে যাওয়া অথবা সাদা দাগ পড়া * মাথা ব্যথা * সবকিছু অস্পষ্ট ও বিকৃত দেখা * তীব্র অবসাদ অনুভব * তিন মাসের অধিক সময় ধরে অস্থিসন্ধি ফুলে থাকা ইত্যাদি লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এইচআইভি’র লক্ষণ * ওজন বৃদ্ধি না পাওয়া * স্বাভাবিক বৃদ্ধি না হওয়া * হাঁটতে সমস্যা * মানসিক বৃদ্ধি দেরীতে হওয়া * কানের সংক্রমণ, নিউমোনিয়া এবং টনসিলের মতো সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যার প্রকট আকার ধারণ করা কিভাবে এইডস ছড়ায় * শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে * এইচআইভি সংক্রমিত রক্ত আদান-প্রদানের মাধ্যমে * কারো ব্যবহৃত সুচ এবং সিরিঞ্জ ব্যবহারে মাধ্যমে * সিরিঞ্জ এর মাধ্যমে দুর্ঘটনা জনিত কারণে * গর্ভবতী মা এইচআইভিতে আক্রান্ত হলে, ডেলিভারীর সময় এবং আক্রান্ত মায়ের দুধ পান করলে শিশুর এই রোগ হতে পারে। শরীরের কোন অঙ্গ বা কলা প্রতিস্থাপন করলে অথবা জীবাণুমুক্ত করা হয়নি এমন সরঞ্জাম দিয়ে দাঁতের চিকিৎসা বা অপারেশন করলে।

কি করলে এইডস ছড়ায় না * আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে খাওয়া দাওয়া করলে * আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত পায়খান (Toilet) ব্যবহার করলে * আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে হাত মিলালে * আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে খেলাধূলা, কোলাকুলি করলে * একই থালায় ভাত খেলে কখন ডাক্তার দেখাবেন রোগের প্রাথমিক ও পরবর্তী পর্যায়ের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো দেখা দেয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। কোথায় চিকিৎসা করাবেন * মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল * সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল * বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় * বেসরকারী হাসপাতাল * এনজিও পরিচালিত বিশেষায়িত স্বাস্থ্যকেন্দ্র কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে * রক্তের পরীক্ষা (ELISA and Western blot tests) * মুখের শ্লেষ্মা পরীক্ষা (Oral Mucus) কি ধরণের চিকিৎসা আছে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন এবং অন্যান্য নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। * এইচআইভি/ এইডস আক্রান্ত হলে জীবন-যাপন পদ্ধতি শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন না করা * গর্ভধারণ না করা * বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখানো ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন ও নির্দেশনা মেনে চলা * প্রতিষেধক গ্রহণ * সুষম খাদ্য যেমন-তাজা শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি খাওয়া * যেসব খাবার খেলে সংক্রমণ হতে পারে যেমন-কাঁচা খাবার সেগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকা * বিশুদ্ধ পানি পান করা * নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা * পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম * ধূমপান ও মদপান থেকে বিরত থাকা * হাত ভালোমত পরিষ্কার করা এইডস কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় * নিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন * এইচআইভি আক্রান্ত কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা থেকে বিরত থাকা * অপরিষ্কার এবং কারো ব্যবহৃত সুচ ব্যবহার না করা * কারো থেকে রক্ত গ্রহণ করতে হলে সেটা এইচআইভি সংক্রমিত কিনা পরীক্ষা করে দেখা * নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করা * এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির ব্লেড এবং টুথব্রাশ ব্যবহার না করা * গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে সঠিক যত্ন নেয়া * সতর্কতার সাথে নিজের শারীরিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রতি খেয়াল রাখা সচরাচর জিজ্ঞাসা প্রশ্ন. ১ . এইডস কেন হয় ? উত্তর. বিশেষ এক ধরণের জীবাণু এইচআইভি (Human Immunodeficiency Virus) দ্বারা সংক্রমণের মাধ্যমে এইডস হয়। প্রশ্ন. ২. কাদের এইডস হবার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে ? উত্তর. যাদের এইডস হবার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে তারা হলেন : * যারা একের অধিক সঙ্গীর সাথে অনিরপদ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন * যাদের এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে * সিফিলিস (Syphilis), হার্পিস (Herpes), ক্ল্যামাইরিয়া ( Chlamydia), গনোরিয়া (Gonorrhea) অথবা Bacterial vaginosis এর মত যৌনবাহিত রোগ ( Sexually Transmitted Disease) হলে অন্যের ব্যবহৃত সুচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করলে * এইচআইভি আক্রান্ত মায়েদের গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া শিশু প্রশ্ন .৩. এইডস হলে কি ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে ? উত্তর. এইডস হলে নিচের জটিলতাগুলো দেখা দিতে পারে : ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ * ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া (Bacterial Pneumonia) * মাইকোব্যাকটেরিয়াম এভিয়াম কমপ্লেক্স বা ম্যাক (Mycobacterium Avium complex) সংক্রমণ * যক্ষা (Tuberculosis) * সালমোনেললোসিস (Salmonellosis) * ব্যাসিলারী এনজিওম্যাটোসিস (Bacillary angiomatosis) ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ * সাইটোমেগালো ভাইরাস (Cytomegalovirus) * ভাইরাল হেপাটাইটিস (Viral hepatitis) * হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস (Herpes simplex virus) * হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (Human papillomavirus) * প্রোগ্রেসিভ মালটিফোকাল লিউকোএনসিফ্যালোপ্যাথি (Progressive Multifocal Leukoencephalopathy (PML) ছত্রাকজনিত সংক্রমণ * ক্যানডিডিয়াসিস (Candidiasis) * ক্রিপটোকক্কাল মেনিনজাইটিস (Cryptococcal meningitis) জীবাণু সংক্রমণ * নিউমোসিসটিস কারিনি নিউমোনিয়া (Pneumocystis carnii Pneumonia (PCP)) * টক্সোপ্লাজমোসিস (Toxoplasmosis) * ক্রিপটোস্পোরিডিওসিস (Cryptos poridiosis) ক্যান্সার সংক্রান্ত জটিলতা * কাপোসিস সারকোমা (Kaposi’s Sarcoma) * নন-হডকিনস লিম্ফোমা (Non-Hodgkin’s Lymphoma) অন্যান্য জটিলতা * শরীরের ওজন কমে যাওয়া এবং ডায়রিয়া,দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতা এবং জ্বর(Wasting syndrome) * স্নায়ুগত জটিলতা (Neurological Complications) * মৃত্যূ বরণ সূত্রঃ জাতীয় ই-তথ্যকোষ এইচআইভি বা এইডস যতবড় মারাত্বক ব্যাধি হোক না কেন , আমরা যদি একটু সচেতনতা ও সাবধানতা অবলম্বন করি তাহলে এমন কঠিন ব্যাধি আমাদের কিছুই করতে পারবে না । মনে রাখবেন আপনার একটু অসাবধানতাই আপনাকে টেনে নিবে মরনের পথে ।

তাই আসুন এইডস থেকে নিজে বাচি , অন্যকে বচাই । আমাদের দেশে অনেক এইডস আক্রান্ত রোগী আছে , আসুন সবাই মিলে তাদের জন্য দোয়া করি , যেন জীবন যুদ্ধে এইডস এর কাছে তাদের হার না মানতে হয় । মহান আল্লাহ্‌ উনাদের সহায় হোক । ধন্যবাদ সবাইকে ।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।