গত বুধবার ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এর প্রথম পাতায় ছয় কলামজুড়ে প্রকাশিত ছবিটি দেখে আমরা একই সঙ্গে ক্ষুব্ধ ও বিপন্ন বোধ করছি।
ছবিতে দেখা যায় একজন নিরস্ত্র তরুণের ওপর পাঁচ-ছয়জন পুলিশ কমান্ডো কায়দায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে। পেছন থেকে একজন পুলিশ তরুণটিকে পাকড়াও করে কনুই দিয়ে সজোরে তাঁর ঘাড় চেপে রেখেছে, যাতে তিনি পালিয়ে যেতে না পারেন। আরেকজন পুুলিশ সামনের দিক থেকে তরুণটির শরীরের মাঝ বরাবর সবুট লাথি মেরে শক্তি প্রদর্শন করছেন, তাঁর ডান হাতে ধরা আগ্নেয়াস্ত্র। আঘাত থেকে রক্ষা পেতে তরুণটি দুই হাত দিয়ে তাঁর লাথি মারা পা আঁকড়ে ধরছেন।
লাথি মারছেন তাঁর বাঁ পাশে থাকা পুলিশ সদস্যটিও। আরেক পুলিশ খানিকটা দূর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে আছেন তরুণটির দিকে। তাঁদের পেছনে আরও কয়েকজন পুলিশ তরুণটির দিকে এগিয়ে আসছেন। একেবারে যুদ্ধপ্রস্তুতি। ডেইলি স্টার ছবির শিরোনাম দিয়েছে ‘কপস অর ক্রিমিনাল।
’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য না অপরাধী?
পত্রিকায় ছবি ছাপা হওয়া ওই তরুণের মতো হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। চিন্তিত তাঁদের অভিভাবকেরাও। এত দিন এইচএসসি পাস করার পর শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের মতো মেডিকেলে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিয়ে আসছিলেন (প্রকৌশল, কৃষি ও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো যথারীতি ভর্তি পরীক্ষা চালু আছে)। হঠাৎ সরকার জানিয়ে দিল এ বছর মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা হবে না। এসএসসি ও এইচএসসির নম্বরের ভিত্তিতেই ভর্তি করা হবে।
এক দেশে দুই আইন, একই শ্রেণীতে ভর্তির জন্য দুই বিধান নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সরকার যদি মনে করে থাকে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষার প্রয়োজনই নেই, তাহলে সেই নিয়ম সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সব বিভাগের জন্য প্রযোজ্য হওয়া উচিত। কেবল মেডিকেলে ভর্তির জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা কেন? অন্যান্য উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষা চালু থাকলে মেডিকেলে সেই পদ্ধতি তুলে নেওয়ার কী যুক্তি থাকতে পারে?
পুলিশের কাজ নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হওয়া নয়, জনজীবনে শান্তি রক্ষা করা। তাদের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। সেই দায়িত্ব তারা পালন করলে মানুষ এভাবে ঘরে-বাইরে বেঘোরে সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ হারাত না।
পুলিশ সন্ত্রাসী, খুনি-দস্যুদের ধরতে পারে না। যত শক্তি প্রদর্শন নিরীহ ও দুর্বল মানুষের ওপর।
শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে এখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক বলছেন, আদালতের রায়ের পর মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, তিনি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেডিকেলে শিক্ষার্থী ভর্তির পক্ষে। তাহলে সময়ক্ষেপণ কেন? এখনই সিদ্ধান্ত নিন।
এই যে হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী প্রতিবছর মানসিক যন্ত্রণায় ভোগেন, কোথায় তাঁরা ভর্তি হবেন, কীভাবে ভর্তি হবেন, এর স্থায়ী প্রতিকার হওয়া উচিত। সরকার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্তটি এক বছর আগে নিলে এত হাঙ্গামা হতো না। তাতে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতেন। যেমনটি সরকার করেছে সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের বেলায়। একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কাজ সমস্যা বাড়ানো নয়, সমস্যা কমানো।
ছবি মিথ্যে কথা বলে না। একজন নিরীহ শিক্ষার্থীর ওপর যেভাবে পুলিশ সদস্যরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তা আইনের চোখে অপরাধ। ছেলেটি কোনো অপরাধ না করেও কেন পুলিশি নির্যাতনের শিকার হলেন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জবাব চাই।
আইনের রক্ষক বলে দাবিদার পুলিশ সদস্যরা যদি এভাবে ক্রমাগত আইন লঙ্ঘন করে চলেন, মানুষের অধিকার ও মর্যাদার ওপর আঘাত হানেন, তাহলে তাঁদের হাতে রাষ্ট্র ও মানুষ—কেউ নিরাপদ নয়।
(প্রথম আলোর একটি লেখা থেকে কিছুটা সংক্ষেপিত ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।