আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেন এত আত্মহত্যা! প্রফেসর ডা. এ কে এম নাজিমুদ্দৌলা চৌধুরী

http://www.monojagot.ws/2010/07/ এখান থেকে পাওয়া কেন মানুষ আত্মহত্যা করে? আত্মহত্যার প্রচেষ্টার পরিষকার প্রমাণ যে, একজন মানুষের জীবনে কিছু একটা ভয়াবহভাবে ভুল হয়ে যাচ্ছে। তাতে লোকটির বংশ বা বয়স যাই হোক না কেন, কতটা সে ধনী বা গরিব। এটা সত্য যে, বেশির ভাগ আত্মহত্যাকারী লোকের একটা মানসিক অথবা আবেগী বৈকল্য থাকে। বেশির ভাগ সাধারণ বৈকল্য হয়ে থাকে ডিপ্রেশন। ৩০ থেকে ৭০% আত্মহত্যাকারী ভিকটিম ভুগে থাকে মেজর ডিপ্রেশনে অথবা বাইপোলার বৈকল্যে।

কেউ আত্মহত্যার কথা বিবেচনা করলে তার জন্য হুঁশিয়ার সংকেত নিম্নলিখিত লক্ষণসমূহের লোকেরা কখন আত্মহত্যা করবে বোঝা যায় না, কিন্তু এই সিগন্যালের অনেকগুলোর অর্থই হতে পারে সাহায্যের প্রয়োজন। মৌখিক আত্মহত্যার হুমকি, যেমন তুমি আমাকে ছাড়াই ভালো থাকবে। অথবা হতে পারে আমি আর তোমার পাশে থাকব না। আশাহীনতা ও সাহায্যহীনতার কথা বলা বিগত দিনের আত্মহত্যার প্রচেষ্টা ডেয়ারিং অথবা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন ডিপ্রেশন মূল্যবান সম্পদ অন্যকে বিলিয়ে দেয়া ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় উৎসাহের অভাব মনে রাখবেন ১০ জনের মধ্যে ৮ জন আত্মহত্যাকারী লোক তাদের মতলবের কিছু চিহ্ন পূর্বেই প্রকাশ করে। যেসব লোক আত্মহত্যার কথা বলে, আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি দেয় অথবা সুইসাইড ক্রাইসিস সেন্টারে ফোন করে তাদের আত্মহত্যার সম্ভাবনা ৩০% বেশি ওদের চেয়ে যারা গড় আত্মহত্যা করতে চায়।

যদি মনে করেন কেউ আত্মহত্যা করবে তখন কী করবেন আপনার সহজ বোধকে বিশ্বাস করুন যে লোকটি অসুবিধার মধ্যে আছে। লোকটির সাথে কথা বলুন, আপনার ভাবনা নিয়ে আদান-প্রদানের মধ্যে তার কথা শোনাও আছে। সরাসরি তাকে জিজ্ঞেস করুন বিচার-বিবেচনা ছাড়াই। ঠিক করুন যদি লোকটির একটি বিশেষ পরিকল্পনা থাকে আত্মহত্যা করার জন্য। পরিকল্পনা যত বিস্তারিত হবে ঝুঁকিটা তত বেশি হবে।

লোকটি বাধা দিলেও পেশাদারি ডাক্তারের সাহায্য নিন। লোকটিকে একা ছাড়বেন না। কোনো কিছু গোপন করার প্রতিশ্রুতি দেবেন না। কোনো আঘাত দেয়ার মতো বা বিচার করার মতো কাজ করবেন না। আপনি নিজে লোকটিকে কোনো পরামর্শ দেবেন না।

আত্মহত্যার পরিসংখ্যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আত্মহত্যা হচ্ছে মৃত্যুর ৮ম বৃহত্তর কারণ। তাতে সমস্ত মৃত্যুর ১%-এর বেশি হিসাব করে। হৃদরোগ ও ক্যান্সার ছাড়া অন্য যে কোনো একক কারণের চেয়ে অনেক বেশি জীবন-বছর হারিয়ে যায় আত্মহত্যার কারণে। বছরে ৩০,০০০ আমেরিকান আত্মহত্যা করে, অতিরিক্ত আরো ৫০০,০০০ আমেরিকান আত্মহত্যার চেষ্টা করে থাকে। প্রকৃত আত্মহত্যাকারী ও আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর গড় হচ্ছে সম্ভবত কমপক্ষে ১০ থেকে ১।

যারা আত্মহত্যা করে তাদের ৩০ থেকে ৪০% লোক এর পূর্বেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। প্রথম আত্মহত্যার প্রচেষ্টার পর সম্পূর্ণ আত্মহত্যার ঝুঁকি প্রথম বছরের মধ্যে সাধারণ গড়ের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি, ৮০ গুণ বেশি নারীদের জন্য, ২০০ গুণ বেশি পুরুষের জন্য, ২০০ গুণ বেশি ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বের লোকের জন্য, ৩০০ গুণ বেশি শ্বেতাঙ্গ ৬৫ বছর ঊর্ধ্বের লোকের জন্য। আত্মহত্যার গড় সর্ববৃহৎ বৃদ্ধ বয়সে। ২০% লোকসংখ্যার মধ্যে এবং ৪০% আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে হচ্ছে ৬০ বছর ঊর্ধ্বের। ৭৫ বছর বয়সের পরে এর গড় বেড়ে যায় তিনগুণ সাধারণ গড়ের চেয়ে এবং শ্বেতাঙ্গ ৮০ বছর বয়সের ঊর্ধ্বের পুরুষের জন্য এটা গড়ের চেয়ে ৬ ভাগ বেশি।

পদার্থের অপব্যবহার হচ্ছে আর একটি আত্মহত্যার বড় প্রলুব্ধকারী প্ররোচক। সমস্ত ঘটনার অর্ধেক ঘটনায় এটা জড়িত থাকতে পারে। প্রায় ২০% আত্মহত্যাকারী হচ্ছে মাদকের অপব্যবহারজনিত কারণে। মদ্যপেরা সাধারণ গড়ের চেয়ে কমপক্ষে তিন থেকে চারগুণ বেশি। সম্পূর্ণ আত্মহত্যার সম্ভাবনা বেশি হচ্ছে ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বের পুরুষদের, যারা হচ্ছে ডিপ্রেসড অথবা মদ্যপ।

আত্মহত্যা প্রতিরোধ যদিও তারা প্রতিরোধ কেন্দ্রে খবর দেয় না, আত্মহত্যাকারী লোকেরা সাধারণত সাহায্য চায়। উদাহরণস্বরূপ প্রায় তিন-চতুর্থাংশ আত্মহত্যাকারী লোক তাদের মৃত্যুর চার মাস পূর্বে ডাক্তারের কাছে যায় এবং অর্ধেক যায় এক মাস পূর্বে। আত্মহত্যাকারীকে সাহায্য করা প্রত্যেকটি আত্মহত্যাকারী লোকের জন্য একই ধরনের থেরাপি চিকিৎসা উপযুক্ত নয়। আত্মহত্যার সাথে সবেচেয়ে বেশি অন্য রোগ জড়িত থাকলে তার চিকিৎসা হয় ওষুধ দ্বারা, কথার থেরাপি অথবা দুটোর সমন্বয়ে। কগনেটিভ এবং বিহেভিয়ারাল থেরাপির উদ্দেশ্য রোগীর আশাশূন্যতাকে দূর করা, তাদের প্রতিকার দেখিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা এবং তাদের নিজেদের জন্য নতুন পথে চিন্তা-ভাবনা করতে শিখিয়ে দেয়া।

বিহেভিয়ারাল মেথড যেমন নিশ্চয়তার বিষয়ে প্রশিক্ষণ, সমস্যার সমাধান, সামাজিক নৈপুণ্য শিখিয়ে দেয়া এবং পেশির শিথিলতা ডিপ্রেশন কমাতে পারে, কমাতে পারে দুশ্চিন্তা এবং সামাজিক অনুপযুক্ততা। বুদ্ধিবৃত্তিক ও আচরণগত বাড়ির কাজের পরিকল্পনায় রোগীকে সাথে নিলে এবং পরীক্ষামূলকভাবে তার কাছে সব ব্যাখ্যা করে বললে পরিকল্পনাটা যদি ব্যর্থও হয়ে যায় তা হবে অনেক শিক্ষণীয়। থেরাপিস্টরা জোর দেয় যে, রোগী বেশির ভাগ কাজ নিজে করবে, কারণ এটা বিশেষভাবে জরুরি আত্মহত্যায় মগ্ন ব্যক্তি থেরাপিস্টকে এমনভাবে দেখবেন না যে সে তার বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয়। আধুনিক গবেষণায় অধিক শক্তিশালীভাবে সমর্থন দেয়া হয়েছে যে, ডিপ্রেশনের সাথে আত্মহত্যার ঝুঁকি জড়িত রোগীদের জন্য ওষুধের ব্যবহার প্রয়োজন। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধে মেজাজের সাথে সম্পৃক্ত মস্তিষক থেকে ক্ষরিত রসায়নের ওপর ভালো কাজ করে।

অনেক ধরনের কার্যকরী অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ এখন পাওয়া যায়। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধে কোনো অভ্যাস গঠন করে না। যদিও কিছু লক্ষণ যেমন ইনসমনিয়া প্রায়ই বেড়ে যায় এক বা দু সপ্তাহের মধ্যে। আপনার ভালো অনুভব করার জন্য সময় লাগতে পারে তিন বা চার সপ্তাহ। পূর্ণ মাত্রার ওষুধের সুফল পাওয়ার জন্য লাগতে পারে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের চিকিৎসা।

অনেক সময় ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করা লাগতে পারে অথবা ওষুধের শ্রেণী বদল করা লাগতে পারে যতক্ষণ পর্যন্ত উন্নতি লক্ষ্য করা না যায়। এটা সাধারণত পরামর্শ দেয়া হয় যে, ওষুধ সেবন করতে হবে ডিপ্রেশনের লক্ষণ চলে যাওয়ার পরও কমপক্ষে ৪ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত। যেসব লোকের ক্রনিক ডিপ্রেশন আছে তাদের ভবিষ্যতে আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য ওষুধের ওপর থাকার প্রয়োজন হতে পারে। যেসব লোক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট সেবন করে তাদের একজন ডাক্তার কর্তৃক উপদেশ দান করতে হবে যিনি ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন সম্বন্ধে ভালো জানেন, যাতে অনেক কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বোৎকৃষ্ট চিকিৎসা দেয়া যায়। এটা আরো জরুরি যে, রোগী অন্যান্য যে ওষুধ সেবন করেছে সে সম্বন্ধে আপনার ডাক্তারকে অবহিত করতে হবে।

তার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এবং গাছ-গাছড়ার ওষুধ, যাতে ভয়াবহ মিথষিক্রয়ার হাত থেকে বাঁচা যায়। মদ অথবা অন্য ড্রাগ অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের সাথে নেতিবাচকভাবে মিথষিক্রয়া করতে পারে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।