বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুর্নীতিবাজদেরকে অপসারন করুন অচল বুয়েট সচল হবে কবে- এ প্রশ্ন আজ দেশের প্রতিটি সচেতন মানুষের। পত্রপত্রিকায় দেখলাম, ভিসি ও প্রোভিসির সীমাহীন দুর্নীতি-অনিয়ম ও দলীয়করণ নীতির জন্যই নাকি বুয়েটে এ অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অথচ সরকার তাদের স্বপদে বহাল রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশের আদর্শস্থানীয় একটি বিদ্যাপীঠের কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ অভিধায় অভিহিত করা হতো।
বিশ্বব্যাপী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা সুনাম ও মর্যাদা ছিল। বর্তমানে এসবই অতীতের সুখস্মৃতিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অতীত গৌরব আর ঐতিহ্যের কোন কিছুই আমরা ধরে রাখতে পারিনি। এর কারণ অতীতে যেসব মহৎপ্রাণ মানুষ এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত হতেন, তারা পাঠদান ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট গবেষণার বাইরে অন্যকিছু করার কথা তো অনেক পরের ব্যাপার, চিন্তাতেও ঠাঁই দিতেন না। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ শিক্ষাঙ্গন থেকে ‘বিদ্যার দেবী’ সরস্বতী নির্বাসিতই বলা চলে।
সেখানে এখন প্রবল প্রতাপের সঙ্গে সহাবস্থান করছেন মহিষাসুর ও লক্ষ্মী। আমাদের শিক্ষকরা বর্তমানে লক্ষ্মী বন্দনায় এতটাই ব্যস্ত ও পারঙ্গম হয়ে উঠেছেন যে, নীতি-আদর্শ-কর্তব্যবোধ জলাঞ্জলি দিতেও বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত হচ্ছেন না। অর্থ ও বিত্তের পানে ধেয়ে চলেছেন প্রবলবেগে। এর ফলে স্বাভাবিক পাঠদানে বিঘ্ন ঘটায় শিক্ষর্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের ন্যায়সঙ্গত প্রাপ্য ও অধিকার থেকে। বিলম্ব ঘটছে পরীক্ষার ফল প্রকাশে।
এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সেশনজট এক অলঙ্ঘনীয় নিয়তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বর্তমান অবস্থা বিদ্যমান থাকলে বুয়েটেও সেশনজট আসন গেড়ে বসবে। একটানা ৪৪ দিন বন্ধ থাকার পর বুয়েট খুললেও ক্লাস অনুষ্ঠিত হওয়ার কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। সুনাম ও গৌরবের অধিকারী দেশের অন্যতম একটি বিদ্যাপীঠে বিরাজমান এ দৃশ্যপট মোটেই কাম্য নয়। প্রতিবছর দেখা যায়, এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর বুয়েট থেকে সর্বপ্রথম ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
অথচ এ বছর দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম শুরু করলেও বুয়েট এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরব। দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস অনুষ্ঠিত না হওয়ার ফলে একদিকে যেমন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে বুয়েটে ভর্তি হতে ইচ্ছুক মেধাবী ছাত্রছাত্রীরাও এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। যত দ্রুত সম্ভব অচল বুয়েট সচল করে সেখানে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক- এই আমাদের প্রত্যাশা।
বুয়েটের অবস্থা স্বাভাবিক করতে এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী উদ্যোগী হন। কিন্তু সে উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি।
এর কারণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা সরকারি মহল থেকে শিক্ষকদের দাবির ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য কোন পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো ছাত্রলীগের একটি অংশকে মাঠে নামিয়ে অন্দোলনরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মিটিং-মিছিল করানো হয়। আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও একই ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখেছি। কিন্তু শেষাবধি তা কোন কাজে আসেনি। বরং এ ঘটনার মাধ্যমে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছিল। আমরা চাই না, বুয়েটের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাজীবন নিয়েও একই ধরনের ছিনিমিনি খেলা হোক।
কাজেই আর কালক্ষেপণ না করে দ্রুত বুয়েটের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।
অন্তরা, জিসান ও লুবানমোহাম্মদপুর, ঢাকা ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।