আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবি কালাম আজাদ ও মৃত্তিকার ছাইভস্ম

নাজমুল ইসলাম মকবুল কবি কালাম আজাদ ও মৃত্তিকার ছাইভস্ম নাজমুল ইসলাম মকবুল কবি কালাম আজাদ। একটি নাম নয় বিশাল একটি প্রতিষ্ঠানও। সিলেটবাসীর গর্ব করার মতো এক অমুল্য সম্পদ। সম্পদ গোটা দেশবাসীর। সম্পদ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের।

যে কোন সাহিত্য সভা সাহিত্য আড্ডার আয়োজন করতে হলে অতিথিদের তালিকায় সকলেরই পছন্দের প্রথম সারির নাম কবি কালাম আজাদ। সাহিত্য সভা সাহিত্য আড্ডা সেমিনার প্রকাশনা অনুষ্ঠান বা এধরনের যে কোন অনুষ্ঠান করতে পরামর্শের জন্য অনেকেই আমার দ্বারস্থ হলে সাফ জানিয়ে দেই কিছু শিখতে হলে জানতে হলে অতিথি করো কবি কালাম আজাদকে। যেমন কবি তেমন বাগ্মী। যেন চিরতরুন অসাধারন এক তেজস্বী বক্তা। বিপ্লবী কবির আবেগমাখা বক্তব্যে তৎনাত পাওয়া যায় চেতনার তেজোদ্দীপ্ত দাওয়াই।

বক্তব্যে শব্দের গতি বা উচ্চ শব্দ প্রয়োগের ব্যাখ্যাও দিলেন একদিন নিজেই তাঁর বক্তব্যে। বললেন অনেকেই হয়তো ভাবেন আমি এত্তো জোরে বক্তব্য দেই কেন। আমি দেখলাম লেখক কবি সাহিত্যিকের বেশিরভাগই বক্তব্য প্রদানের সময় ধীরে স্থীরে ীন কন্ঠেই বক্তব্য প্রদান করেন। তাদের এ বক্তব্য হয়তো কেউ শুনেন কেউ শুনেননা। আবার রাজনৈতিক নেতারা বক্তব্য প্রদানের সময় বক্তব্য দেন ঝাঝালো কন্ঠে।

এজন্য তাদের বক্তব্য যারা শুনতে চায়না তাদেরও কর্নকুহরে প্রবেশ করে হুড়মুড়িয়ে। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম বক্তব্য প্রদানের সময় মিনমিন করে না বলে যা বলার দরাজ কন্ঠেই বলব। তাতে দরাজ কন্ঠের তেজোদ্দীপ্ত বক্তব্য শুনতে অভ্যস্থ মানুষের কর্নকুহরে প্রবেশ করবে অনায়াসে। আমার সংগঠন সিলেট লেখক ফোরাম এর যে কোন সাহিত্য সভা বা সাহিত্য আড্ডায় কবি কালাম আজাদের দরাজ কন্ঠের সারগর্ভ অথচ গোছালো বক্তব্য উপস্থিত সকলের মনকে রাঙিয়ে তুলেছে অনেকবার। পরিতৃপ্ত করেছে অন্তরাত্মাকে এক্কেবারে ষোলআনা।

তা আমি নিজে অনুভব করেছি আচ্ছামতো। কবি সাহিত্যিক আমন্ত্রিতরাও করেছেন অনুভব। সময় সুযোগমতো আলাপচারিতায় তারা প্রকাশ করেছেন সে অভিব্যক্তি। দাদা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর কবি কালাম আজাদ পয়ষট্টির কোঠায় পা দিয়েছেন। ধবধবে সাদা হয়ে গেছে দাড়িও।

সিলেটে কবি দিলওয়ার পরবর্তী আসনও দেয়া হচ্ছে। তাঁর কাছ থেকে আমরা সদা সর্বদা পাচ্ছি শক্তি সাহস ও মুল্যবান পরামর্শ। এসব হীরার চেয়েও মুল্যবান শক্তি সাহস ও পরামর্শ নিয়েই আমরা ঝড় ঝঞ্চা অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছি সামনের দিকে। কবি কালাম আজাদ বয়সে প্রবীন হলেও তাঁর বক্তব্য ও কবিতা যেন চির তরুনের মতোই। চেহারা ছুরতে আমি তাঁর মধ্যে তারুন্যের ছাপ স্পষ্টই দেখতে পাই।

আমার কর্নকুহরে বাঁজে যেন তারুন্যের উত্তাল সুর। তাঁর অসাধারন কবিতা সমুদ্রের মধ্য হতে প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত নয়টি গ্রন্থকে একত্র করে ৪৮০পৃষ্টার বিশাল কবিতাসমগ্র প্রথম খন্ড মৃত্তিকার ছাইভস্ম যেন তারই বাস্তব প্রতিচ্ছবি। এই নয়টি গ্রন্থের মধ্যে তিনটি প্রকাশিত ও বাকী ছয়টি অপ্রকাশিত। কবি আবিদ ফায়সাল বইয়ের প্রথম ফ্যাপ এ অত্যন্ত চমৎকার ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন গ্রন্থ প্রকাশের প্রোপট। কবি লিখেছেন, দীর্ঘ বিরতির পর এ-সব গ্রন্থিত এবং অগ্রন্থিত কবিতার সমবায় ও নিভৃত সঞ্চয় এই মৃত্তিকার ছাইভস্ম।

বইটির প্রকাশক মোস্তফা সেলিম, উৎস প্রকাশন ঢাকা। প্রকাশকাল ৩১ মে ২০১২। পান্ডুলিপি সম্পাদনা করেছেন কবি আবিদ ফায়সাল। চমৎকার প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্র“ব এষ। অলংকরণ মোস্তাফিজ কারিগর।

মুদ্রক ওমাসিস প্রিন্টার্স, কাটাবন, ঢাকা। মূল্য সাতশো টাকা, বিশ মার্কিন ডলার, পনেরো পাউন্ড। নয়টি পর্বে বিভক্ত অন্য কথায় একীভূত নয়টি গ্রন্থ কিংবা একই পিতার নয়টি সন্তান। আলোচ্য গ্রন্থের প্রথম পর্ব বা প্রথম গ্রন্থ ‘সম্পাদক সমীপে’ এবং একই শিরোনামের প্রথম কবিতায়ই রাজধানীতে বসবাসরতো কবিদের মধ্যে যারা পল্লীগাঁয়ে বসবাসরতো কবিদের পাত্তা দিতে নারাজ তাদের উদ্দেশ্যে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘রাজধানীর কবিরা জানুক শাশ্বত বাংলায় এখনও কবি আছে যারা শব্দের পোশাকে বন্যার পানিতে লেখার গরজে দেখেনা, কলজের ফুটো দিয়ে দেখে চোখ দিয়ে দেখে...। যে সকল সম্পাদক শুধু রাজধানীর কবিদেরই কবিতা তাদের পত্র পত্রিকা ম্যাগাজিনে স্থান দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন কিন্তু গ্রামাঞ্চলের কবিদের কবিতা ছাঁপানো দুরের কথা দেখারও যেন গরজ অনুভব করেননা চোখে আঙুল দিয়ে তাদের শুধরে দিয়েছেন পরাজয় মানতে নারাজ ছিলটেরই সিংহপুরুষ স্পষ্টবাদী কবি কালাম আজাদ।

তাইতো নগ্নতার নিজস্ব প্রতিমা নামক গ্রন্থে ‘এবার দাঁড়াও ফিরে’ শিরোনামের কবিতায় লিখেছেন, কালাম আজাদ- কতবার নিতে পারো পরাজিত জীবনের স্বাদ আমৃত্যু পরাজয় সে যে নয় মানুষের নয়। ........................... কালাম আজাদ- ন্যুব্জ পিঠ খাড়া করে দাঁড়াও এবার দাও এক সিংহের নিনাদ এবং ছড়িয়ে দাও তোমার বিস্বাদ মুক্ত এক মানুষের মতো কালের অশ্বারোহী দেখো যায় কী বিশাল ভীষণ উদ্ধত। দেশে রাজনীতিবিদ রাগব বোয়ালদের নোংরা খেলায় সাধারন মানুষ হচ্ছে নিস্পেষিত। একটি অংশ বেপরোয়াভাবে হরিলুটের মতো লুটেপুটে খেয়ে সাবাড় করছে দেশ। হম্বি তম্বি করে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে সর্বত্র।

কিন্তু সিংহভাগ মানুষ বরাবরই হয়েছে বঞ্চিত অপদস্থ অবহেলিত নির্যাতিত। মানবাধিকারের বুলি যেন পরিণত হয়েছে প্রহসনে। তাইতো ‘শতাব্দীর বৈশাখে আমার বর্ণমালা গ্রন্থে’ গর্জে উঠেছেন কবি ‘উষ্ঠা মারি’ শিরোনামের কবিতায়। কবি লিখেছেন, উষ্ঠা মারি রাজনীতি, অর্থনীতি দর্শনের পিঠে যদি না সমাজ গড়ে সখ্যতার সম্পন্ন কংক্রিটে। বিপ্লবী কবির সহ্য হয়নি মানুষে মানুষে ভেদাভেদ।

মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে রিতিমতো প্রতিযোগিতা করে তৈরি করা হচ্ছে ওই মানুষ মারার জন্যই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মারনাস্ত্র। তাই কবি হতাশ হয়েই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য আবেদন করেছেন ‘সুভদ্রা গোল্লায় যাও’ গ্রন্থে। কবি লিখেছেন, খাদ্য নেই, বস্ত্র নেই আশ্রয় নেই, শিা নেই চিকিৎসা নেই না কিছুই নেই-এরকম দুশ কোটি মানুষ আছে পৃথিবীতে। অথচ, আপনাদের হাতে পৃথিবীকে ছশ বার ধ্বংস করার অস্ত্র আছে। প্রযুক্তি আছে।

আছে সৈনিকেরা। কবি যেখানেই যান সেখানেই উপদেশ দিতে শুনি পড়ো এবং পড়ো। পড়ার শ্লোগান শিখিয়ে দিয়েই শুধু ান্ত হননি উচ্চস্বরে শ্লোগানটি ধরাতেও দেখেছি আমি। শ্লোগানটি হলো ‘যতদিন বাঁচিব, কিছু কিছু শিখিব’। কবির ‘আত্মজ শুনে রাখো, আত্মজা গুনে রাখো’ গ্রন্থের ‘উজ্জীবনের জন্য কবিতাগুচ্ছের ২২ নং পঙতিতে চমৎকার শ্লোকে লিখেছেন, পড়ো তোমার প্রভুর নামে পড়ো দেখবে না তো কী ধন হলো জড়ো তোমার ভেতর দেখবে নাকো তুমি জ্বললে আলো দেখবে লোকে দেখবে স্বদেশ ভূমি।

কবিতা লেখা কবিদের যেন একটি নেশা। এ নেশার ঘোরে যাকে ধরে তাকে সহজে যেন ছাড়তে চায়না। তাইতো কবি সাদাসিধে পদ্য গ্রন্থে ‘পদ্যি লেখার ভুত’ শিরোনামের কবিতায় লিখেছেন, সে কোনও এক আদ্দিকালের বদ্দিনাথের যুগে মাথায় আমার চেপেছিল পদ্যি লেখার ভূত তিরিশ বছর পরেও দেখি এগোইনি এক সুত তবু যে হায় যায়নি ছেড়ে পদ্য লেখার রোগে! শুভ্রতা জ্বলে ওঠো গ্রন্থে ‘একুশ’ শিরোনামের কবিতায় কবি লিখেছেন, চেতনার চত্বরে লাল ফুল সর্বকালে সর্বজনে কনো ফোটে না যখন রক্তমেখে ফোটে তখন ভেসে যায় মেঘনা, যমুনা, সুরমা আর তখন কালের নাম-একক একুশ ধাম তার আগ্নেয় ভূখন্ড এক বাংলাদেশ। কবির মাঝে সত্যিই আছে ভাবের দরিয়া তাইতো তিনি লিখেছেন গ্রন্থ ‘মরমে আমার মরমিয়া’ সেখানে আছে একটি কবিতা শিরোনাম ‘শুকরিয়া’ হয়েছেন কবি রাসুল প্রেমে একাকার মজিয়া ধ্যানের কবি কালাম আজাদ লিখেছেন, দরুদ সালাম তোমার প্রতি এ নহে গো হাদিয়া এই গোলামের তরফ থেকে ফরজ জ্ঞানে শুকরিয়া। বিয়েশাদী নিয়ে কবিতা লিখেন নাই এমন কবি পৃথিবীতে পাওয়া হয়তো দু¯প্রাপ্যই বলা যায়।

কবি কালাম আজাদও ‘শাদিয়ানা পুথি’ নামক গ্রন্থে বিয়েশাদীর কবিতাগুলোকে সাঁজিয়েছেন মৃত্তিকার ছাইভস্মের এক্কেবারে শেষ প্রান্তে। শান্তি সুখ অঢেল সম্পদ জমি জিরাত সব কিছু থাকলেও জীবন সঙ্গী বা সঙ্গীনি ছাড়া মনে থাকে শূন্যতা। আর এ শূন্যতাকেই বিবাহ কাব্য শিরোনামের একটি কবিতায় বাস্তব অথচ চমৎকার ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন কবি, শান্তি ছিল স্বস্তি ছিল ধান ছিল আর ধন সূর্য ছিল চন্দ্র ছিল-ফুল, পাখি আর বন। শুধু শূন্য ছিল মন- পরিশেষে বলতে চাই কবিতার ছন্দে- আমাদের মাঝে বেঁচে থাকুন কবি অনেক দিন অনেক বছর যেন দেখে দেখে আর শিখে শিখে কাটাতে পারি জীবনের প্রহর। ।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।