বসন্তে মাতাল আমি এক অপূর্ণতা ... মনে মনে প্রায়ই খুঁজি তাকে, খুঁজেছি কতবার। কিন্তু এভাবে দেখা হয়ে যাবে কখনোই ভাবিনি তাকে। আজ কতদিন পর দেখা হলো! সর্বশেষ দেখা ২০০৩ এ। স্কুল জীবনের শেষ দিনগুলির কথা খুব মনে পড়ে যায়। প্রতিটি ক্লাসের পরই করিডোরে এসে দাড়াতাম, তাকিয়ে থাকতাম মেয়েদের কমনরুমের দিকে।
বারান্দায় বের হলেই চোখে চোখ পড়ে যেত। সেটা ছিলো আমার দিনের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি, যার রেশ থেকে যেত দিন অবধি। কারনে অকারনে তাকে দেখার জন্যে হেটে যেতাম কমনরুমের পাশ দিয়ে। বাসায় ছুটিতে এলেই তাকে মনে মনে খুঁজতাম। একে ওকে জিজ্ঞেস করেও কখনো তার সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জানতে পারিনি।
বাস টার্মিনালে রিক্সা থেকে নেমে ওয়ালেট থেকে টাকা বের করতেই চোখে চোখ পড়ে যায়। সহস্র বছরের তৃষ্ণার্ত চোখ কয়েক সেকেন্ড এক হয়। চোখ সরিয়ে নেই আমি। এরপর তার দৃষ্টি উপেক্ষা করে তাকে এড়িয়ে যাই। টার্মিনালের বিপরিত দিকে গিয়ে মনের খচখচানি বেড়ে গেলো।
আবার আসলাম কিন্তু কাছে গেলাম না। টিকেট কাউন্টারে একটু কথা বললাম, বোঝালাম কাজেই এসেছি। তার সাথে ছোট বোন, তার বিবাহিত বড়বোন এবং বোনের স্বামী। আবার ঘুরে গেলাম বিপরিত দিকে। মনের ভেতর তোলপাড়, মাথায় এলোমেলো চিন্তা।
নিজেকে সামলে, আমার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে টিকেট কেটে বাসে উঠে পড়লাম। সীটে বসতেই দেখি আমার সামনের সীটে সে বসে আছে। খুব নার্ভাস ফিল করছিলাম। এতো কাছাকাছি, তার চুলের গন্ধ পাচ্ছি। সেই একই রকম চুল, চুলে হালকা ব্রাউনি শেড।
যখন স্কুলে পড়তাম তখন কয়েকবার কথা বলেছি। নিতান্তই গুরুতরও কারন তৈরি করে কথা বলেছি। আমার এক ক্লাস জুনিয়র হওয়ায় কথা বলার ছল খুঁজে পেতাম না। তার বাসার রাস্তা দিয়ে হেটা যেতাম সে মুচকি হাসতো। আমি বান্ধবীর বাসায় নোট নেয়ার ছলে তাকে দেখতে যেতাম।
হয়তো সে বুঝে ফেলতো যে তাকে দেখতে যেতাম। আমার খুব রাগ লাগতো মনে হয় কষে একটা চড় দিয়ে বলি তুই বুঝবি বান্ধবির কাছে এসেছি তোর কাছে আসি নাই। আমার বান্ধবীরা বলতো ওকে আমার পছন্দ হয় কি না! এইসব কথা এড়িয়ে যেতাম, এরমতো লজ্জাজনক কথা পৃথিবী কি আছে! আমার সামনে বসে আছে, বাসের জানালে দিয়ে ছুটে আসা বাতাসে তার চুল উড়ছে। আমার বুকের ভেতর শব্দের গতি বেড়ে গেছে। হৃত্স্পন্দন তো বাড়বেই।
আজ নয় বছর পরে দেখা অথচ বিন্দুমাত্র পরিবর্তন নেই। সেই কাটা নাক, সেই চাহনি, সেই চুল, মুখের একটি রেখাও পরিবর্তন হয় নি। বাস ছুটে চলছে। চোখের সামনে স্কুল জীবনের ছবিগুলো ভেসে উঠছে, খেলাধুলা হৈ হুল্লোড় ফাঁকে তাকে একটু কারনে অকারনে দেখার চেষ্টা। নয় বছর পর সে কি করছে, কোথায় আছে কিচ্ছু জানি না।
আমার সামনের সীটে সে। মাঝে মাঝেই মাথা ঘুরিয়ে আমাকে দেখছে আর আমি পরম নির্ভরতায় বাসের জানালা দিয়ে প্রকৃতি দেখছি। নয় বছর আগের সে তেমনি আছে মনে হয় আমিই কিছুটা বদলেছি নাহলে আমি কেন প্রকৃতি দেখবো। তার শরীর চুলের সৌরভ আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলছে। নয় বছর পরেও মনের কথা মনেই থাক।
যদি আবারও কোন একদিন এভাবে দেখা হয়... তুলে রাখি সেই দিনের জন্য.. ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।