তুই থেকে তুমি, অতঃপর আরোদুটি ভগ্নহৃদয়ে ক্লান্তপ্রাণ । ১।
রূদ্র বাসায় ঢুকে রাত আট টায়।
দোদুল্যমান একটা অনুভুতি নিয়ে তার রুমের দিকে এগোয়। ছোটবোনের রুমে অন্যকিছু গেষ্ট থাকায়,ছোটবোন তার বান্ধবিদের নিয়ে তার রুমেই আড্ডা দিচ্ছিলো।
রুমের কাছাকাছি যেতে,যে ওদের যে কারো একজনের যে কটা শব্দ কানে আসে,"ওই পোলা! ধুর! ওই পোলা তো একটা হ্যাবলা..."। অন্যদের কোরাসে হাসির রোল পরে।
হঠাৎ রুদ্রকে দেখে অপ্রস্তুত হয়,ন্যানো সেকেন্ড সময়েরেও কম সময়ে হাসি থামে।
রুদ্র অন্যদিকে তাকিয়েই বলে,"না ঠিক আছে, তোমরা বসো,আমি আবার বাইর হোয় যাবো এখন। "
কেউ একজন বলে,"না ভাইয়া ঠিক আছে, আপনি ফ্রেশ হন, আমরা অই রুমে যাচ্ছি।
"
রুদ্র খেয়াল করে না। কিন্তু সে জানে,ওরা এখন সরাসরি যে যার বাসায় যাবে। রুদ্র আসার পর ওরা একটু সময়ের জন্যও আর রুদ্রদের বাসায় থাকেনা।
মেয়েগুলো পাশদিয়ে হেটে বেরিয়ে যায়। রুদ্র মাথা নিচু করে থাকে,কয়েকজন নুপুর পরেছে নিশ্চয়,শব্দ হচ্ছে।
কিছু কিছু শব্দ কানে লাগেনা,হৃদয়ের সাথে ইঞ্চিখানেক জায়গা রেখে আশপাশের কোন এক জায়গায় লাগে।
বাহির থেকে ঘরে এলে,সবাই সাধারণত ফ্যানটা ছাড়েন। রুদ্র চালু ফ্যানটা বন্ধ করে দেয়।
খিদে তীব্র হলে,ম্যামাল(স্তন্যপায়ী) প্রজাতির ঘ্রাণ ইন্দ্রেয় তীব্র হয়। মেয়েগুলো রুমে কয়েকটা সুগন্ধির মিশ্র একটা মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে গেছে।
মিষ্টি গন্ধটা আরো বেশিক্ষণ থাকুক।
২।
নিতু বান্ধবিদের বিদায় দিয়ে চা নিয়ে রুদ্রর রুমে আসে। ঢুকেই আবার ফেনটা চালু করে দেয়। চা হাতে দিয়ে বসে পাশে।
ডায়নিংয়ে খাবার দেওয়ার আগ পর্যন্ত নিতু ভাইয়ার সাথে গল্প করবে। চুলগুলো কাধের ডানপাশদিয়ে সামনের দিকে এনে রাখে।
নিতু হাসে, রুদ্র বোনের চোখে চোখ রেখে মৃদু মাথা নিচু করে হাসি ফিরিয়ে দেয়। নিতু জানে, তার রুদ্র ভাইয়াটা যতটা ভাবে তার অজস্র ভাগের এক ভাগও কথা বলেনা এখন।
আগে চোখে মুখের খুব বেশি চাঞ্চল্যের কারনে স্বাভাবিক উচ্চতার যে ছেলেটাকে অনেক বড় মনে হতো,হইচই করে রাখতো চারপাশ, সে এখন আর তার রুদ্র ভাইয়া না, আন্য কেউ।
নিতুই গল্প শুরু করে,
"জানো ভাইয়া,আজকে দুপুরে ঘুমাইছি, আর দুইটা স্বপ্ন দেখছি।
একটা তে আমি একজন মাগল(সাধারণ মানুষ, যারা হগোর্টসে জাদুবিদ্যায় পড়াশুনার সুযোগ পায়নি), একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি।
হারমাইনি(হ্যারি পটার সিরিজের মুল নারী চরিত্র) আমাকে অখান থেকে তারাহুড়া করে কথাও নিয়ে যাওয়ার জন্য হাত ধরে টান্তেছিলো।
কিন্তু আমি একটুও নড়তে পারতেছিলাম না। হারমাইনি , আমারে স্পেল ছুড়লো, "টারনান্ডো স্টোনাস" টাইপ কিছু একটা বইলা।
আর আমি স্টাচু হই গেলাম!"
রুদ্র,"অন্য স্বপ্নটা কি?"
নিতু,"ওইটা তোমারে বলা যাবে না ভাইয়া" বলে অন্যদিকে ফিরে নিতু, হাতের নখ, দাঁতে কামড়ায়। নিতুর একটা ফোন,কার ফোন রুদ্র জানে না, আসার আগ পর্যন্ত নিতুর একর গল্প চলতে থাকে।
ফোন আসে, নিতু উঠে নিজের রুমে যায়। কার ফোন, রুদ্র আগে কখন-সখনো জিজ্ঞেস করতো,এখন রুদ্র নির্বিকার।
৩।
বিছানায় শুয়ে আছে রুদ্র। নীলাভ বিছনার সাথে ম্যচ করে জানলায় পর্দা লাগানো।
রুদ্র খিদে নিয়েও রাতে খায়না। খেতে ডাকার সময়টাতে বছর পুরোন একটা ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে আধশোয়া হয়ে বিছনায়শুয়ে জানলার পর্দার নিছের দিকের অংশের দিকে তাকায় থাকে।
পেছন থেকে মনে হবে সে ম্যাগাজিনে ঢুবে আছে।
মা-বাবা এখন রুদ্রকে আর খেতে ডাকে না। নিতু ডাকে,"ভাইয়া,ভাইয়া...খাইয়া নাও, খাবানা?"
ডেকে ক্লান্ত হয়ে রুমেই আসে, মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করে, "খাবানা?" রুদ্র ম্যাগাজিন থেকে চোখ না সরিয়েই, মাথা নাড়ে, একবার ডানে একবার বামে।
জানে রুদ্র আজকেও খাবে না, নিতু তারপরো বলে "খাবার ঢাইকা রাখলাম,খাইয়া নিও, ভাইয়া", বলে নিতু তার রুমে যায়। আড়াআড়ি ভাবে বিছনায় শোয়। মুখের উপর বালিশ দিয়ে রাখে।
না ফুপিয়ে কাঁদা, না গোঙ্গানোর মতো অস্পষ্ট একটা শব্দ হয়। পুরোনো ফেনের অপেক্ষাকৃত বড় শব্দে সে শব্দ চাপা পড়ে।
৪।
রাত ১১ টা।
রুদ্র দরোজা খুলে বেরোয়।
ছাদে যাবে।
কিছুটা দৌড়ে-কিছুটা হেঁটে সিড়ি ডিঙ্গায়। ছাদে আসে। একটু আগে নিশ্চয় চর্বি মাংসের ঢিবির মতো দেখতে, বাড়িওয়ালা ছাদে এসে সিগরেট ফুকে গেছেন। ছাদ সিগরেটের গন্ধে মম করছে।
এলাকার এক নৈশ পাহারাদার রাস্তার পাশে দারিয়ে প্রশ্রাব করছিলো। ছাদে রুদ্রর পায়ের শব্দ হওয়ার পাহারাদার অপ্রস্তুত হয়। যা দাঁড়িয়ে করছিলো তা বসে শেষ কর। ।
রুদ্রর সেলফোনের বাতি জ্বলে, যান্ত্রিক কলমে রুদ্র লিখে,"এখন কেমন আছিস,একটু জানাবি প্লিজ?" ফির্তি বার্তা পাবেনা জেনেও টেক্সট-টা রুদ্র সেন্ট করে।
ফির্তি কনো টেক্সট আসে না রুদ্রর সেলে। রাত আরেকটু বাড়ে। আরেকটু বেড়ে, সময়টা ঠিক এখন... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।