আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"নীল জোছনার অভিমানে ভরা গল্প "

ফেবুতে আমিঃ-http://www.facebook.com/JRK001 কলেজ থেকে হাটতে হাটতে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে গেছে আসিফ, বাড়ির সম্মুখে চলে এসেছে... পকেট থেকে রুমাল বের করে কপাল মুছতে গিয়ে তিনতলার বারান্দার দিকে তাকাল একবার, মৌরী দাঁড়িয়ে আছে..আসিফ তাকানো মাত্রই পর্দার আড়াল হয়ে গেল। আসিফদের বাসায় মৌরীরা আসছে ৬মাস. মেয়েটার অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানা দেখে আসিফ অনেকটাই বিরক্ত...কিছু বলেও না শুধু ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে আর চোখে চোখ পড়লেই দাঁত বের করে হাসে। আসিফের বাবা সরকারী প্রকৌশলী। তিনতলা বাসার দোতলায় আসিফরা থাকে,পরিবারে মা, বাবা আর এক বোন ছিল যার বিয়ে হয়ে গেছে। অবশ্য বোনের সাথে পরিবারের কোন সম্পর্ক নেই এখন।

আসিফ যদিও অনেক সময় বোনের বাসায় যায়, আনন্দে আসিফের মন ভরে যায়। খুব সাজানো একটা সংসার। মাঝে মাঝে রাগ আসে আসিফের কেন যে বাবা,মা মেনে নেয়নি আপুর বিয়েটা! ভালবাসা কি পাপ? না হয় ওরা ভালবেসেই বিয়ে করেছে, অন্যায় তো করেনি। আপুতো অনেক সুখেই আছে..আসিফের ইচ্ছে করে কাউকে ভালবাসতে, পরক্ষনেই আবার দুমরে মুচড়ে যায়। মেয়ে যত বড় রাজকন্যাই হোক প্রেম করে বিয়ে করা যাবে না।

ভালবাসার সংসার নাকি টিকে না, আম্মু প্রায় এই কথাটা বলে আর আপুকে অভিশাপ দেয়। যদিও ঘরের দরজা লাগিয়ে নীরবে কাঁদে... আসিফের উপর কড়া আদেশ পড়াশোনা ছাড়া অন্য কিছুতে মনোযোগ দেওয়া যাবে না, তা না হলে তার বোনের মতই তার জন্য ঘরের দরজা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। বিকেল হলেই আসিফ ছাদের কবুতর গুলোকে খাওয়াতে যায়, আসিফ আসার কিছুক্ষণ পরি মৌরী আসে। ছাদের এক কোনায় বসে আসিফের সব কিছু দেখে, আসিফ তাকাতেই একটা অদ্ভুত মিষ্টি হাসি দেয় মৌরী। এমন না যে আসিফের মৌরীকে ভাল লাগে না, কিন্তু মেয়েটা কখনো মুখ ফুটে কিছু বলে না।

এই ৬ মাসে ঠিক করে ছয়টা শব্দ বিনিময় হয়েছে বলে মনে হয় না। আসিফের থেকে তিন বছরের ছোট মৌরী যদিও আসিফ নিজেও পরিপক্ব না এখনো টিনেজ...তাই মনের অনেক কথা বলার ইচ্ছা থাকলেও মৌরীকে বলে না আসিফ। আসিফের রুম বরাবর উপরের রুমটাতে মৌরী থাকে। রাতে যখন ইলেক্ট্রিসিটি থাকে না আসিফ গিটারটা নিয়ে বসে বারান্দায়। চোখ বন্ধ করে গিটারে স্পর্শ করতেই টুংটাং শব্দে সিন্গ্ধ সুবাস আসে ভেসে, আসিফ বুঝতে পারে মৌরী বারান্দায় দাঁড়িয়ে আসিফের গিটার শুনছে... আসিফ কলেজ থেকে সব সময় হেটে বাসায় আসে, এটা অবশ্য মায়ের আদেশ, রিক্সায় আসা যাবে না।

এই বয়সে এতোটা অলস হওয়া চলবে না। হাটতে হাটতে হঠাৎ সামনে একটা রিক্সা এসে দাঁড়াল মৌরী ঘুরে তাকাতেই আসিফ দাড়িয়ে গেল! এই মেয়ে আবার এই ভরদুপুরে কি চায়? রিক্সার সামনে আসতেই মৌরী বলে উঠল রিক্সায় উঠেন আসিফ ভাইয়া। অনেক বেশী অস্বস্থিকর লাগছে ব্যাপারটা, ওর জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো নির্দিধায় রিক্সায় উঠে বসতো আসিফ! কিন্তু ওর সাথে? উপ!! আসিফ একটু হেসে বলল.. না থাক লাগবেনা তুমি যাও আমার সামনে একটু কাজ আছে ওটা শেষ করে যেতে অনেক দেরী হবে। আরে উঠে বসেন তো! এতো কথা তো জিজ্ঞেস করিনি। অনেকটা ধমকের সাথে কথাটা বলতেই আসিফ আর সাহস পেল না, ওকে না বলতে..রিক্সা করে বাসায় আসার পুরো পথেই মিটমিট করে হেসেই যাচ্ছে মৌরী,শুধু একবার জিজ্ঞেস করছিল আজকে আকাশটা অনেক সুন্দর না ? ছাদের রেলিং এর উপর বসে জীবন আনন্দ দাসের কবিতার বই পড়ছে আসিফ, বইয়ের উপর ছায়া পড়তেই সামনে তাকিয়ে দেখল মৌরী ঝুঁকে দেখতে চাইছে কি পড়ছে, কি পড়ছেন? কবিতা.. ও কবিতা আমিও লিখি।

কথা শুনে আসিফের অনেক আগ্রহ হল শুনতে, কিছু বলার আগেই মৌরী কবিতা বলা শুরু করলো.. আমাকে আমি পারিনি বোঝাতে নীল জোছনায় চেয়েছি খুঁজতে, অভিমানী এক ক্লান্ত দুপুরে দাঁড়িয়ে অচিন পুরে.. একটু তোমায় ছুঁতে ভালবাসার নিয়ন আলোয় চেয়েছি ভুলতে সেও পারেনি আমি তোমায় বুঝাতে. কবিতা শেষ করেই মৌরী অদ্ভুত মায়া নিয়ে তাকিয়ে আছে আসিফের দিকে, নিঃশ্বাসটা একটু যেন আটকে গেছে আসিফের। কি বলবে বুঝচ্ছে না, প্রসঙ্গ এড়িয়ে আসিফ বলে উঠলো এখনি এই সব কবিতা লিখ পরে যে কি কি লিখবে God Knows!! পরেরটা পরে দেখা যাবে, এই বলেই মৌরী নেমে যায় হনহন করে। আসিফ দাঁড়িয়ে আছে ভাবছে একদিন হয়তো এই মেয়েটা মেরেই ফেলবে! ভালবাসার আগুনে... আজ কলেজ থেকে মীম আর আসিফ রিক্সায় করে এসে থামল বাসার সামনে, মৌরী উপর থেকে দেখল, আসিফ আজকে উপরের দিকে তাকায়নি, সোজা বাসায় ঢুকল। প্রায় আধাঘণ্টা পর মীমকে বিদায় দিল গেটের সামনে। পিছনে মৌরী দাঁড়িয়ে, চেহারায় কেমন জানি একটা ক্রোধ একটু ভড়কে যায় আসিফ, কি মৌরী কিছু বলবে? মেয়েটা কে ছিল? মৌরী চোখ বড় বড় করে আছে..প্রশ্নটা শুনে একটু বিরক্তই হল, ফ্রেন্ড! কেমন ফ্রেন্ড? একটু গম্ভীর হয়েই আসিফ বলল কলেজ ফ্রেন্ড, কথাটা বলেই মৌরীকে পাশ কাটিয়ে চলে আসে আসিফ. একটুপর ভাবতে থাকে আসিফ, মীমকে নিয়ে এতো প্রশ্ন কেন করলো মৌরী? কয়েক সেকেন্ডে পর মুখে হাসি চলে আসে আসিফের.. ও আচ্ছা মৌরী ভেবেছিল ও আমার গার্লফ্রেন্ড কিনা? হা হা মীম তো এসেছিল এসাইমেন্ট এর খাতা নিতে, বোকা মেয়ে কি না কি ভাবছে... আজ আর মৌরী ছাদে আসেনি, একটু পর আসিফ ছাদে উকি ঝুঁকি মারছে, না আসেনি মনে হয় আজকের ব্যাপারটা নিয়ে রাগ করেছে।

প্রায় দুইদিন কোন খবর নেই মৌরীর, কলেজ থেকে আজও বাসার সামনে রুমাল দিয়ে মুখ মুছতে গিয়ে উপরে তাকাল আসিফ, না নেই! আসিফের একটু রাগ আসছে এতো রাগ করার কি আছে? আজব!! ফ্লাটের দরজার সামনে আসতেই মৌরী আসিফকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল, আসিফ একবার পিছন ফিরে ভেবেছিল ডাক দিবে! দেয়নি বাসায় ঢুকেই মা! মৌরী কেন এসেছিল? প্রায় দুইবার জিজ্ঞেস করলো আসিফ. না তেমন কিছু না ওদের বাথরুমের কলে পানি আসছে না। ও আচ্ছা, আসিফ নিজের রুমে ঢুকতেই সেই স্নিগ্ধ সুবাস নাকে লাগলো! তারমানে মৌরী আসিফের রুমে ঢুকেছিল। আসিফ টেবিল আর খাটের উপর তাকাল.... সকাল বেলা ট্রাকের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল আসিফের! সিঁড়ি দিয়ে ধুপধাপ শব্দ হচ্ছে দরজা খুলতেই দেখল তিনতালা থেকে আসবাবপত্র নামানো হচ্ছে, আসিফ তার মাকে এসে বলল কি বাপার আম্মু তিন তালার ভাড়াটিয়াদের আসবাব নামাচ্ছে কেন? আসিফের মা অনেকটা ব্যস্ততা দেখিয়ে শুধু বলল ওরা বাসা ছেড়ে দিচ্ছে, আসিফের বিশ্বাস হচ্ছিল না কেন জানি। আসিফ দৌড়ে তিন তলায় গেল, বাসায় ঢুকতে আন্টি মালামাল রেপিং করছে কোন কথা বলেনি। মৌরীকে দেখছে না আসিফ... গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে আসিফ, একটু পরি মৌরীর বাবা ট্যাক্সি ক্যাব নিয়ে আসলো উপর থেকে মৌরী আর আন্টি নেমে আসলো হাতে ব্যাগ নিয়ে মৌরী একটি বারের জন্যও আসিফের দিকে তাকায়নি! আসিফ তাকিয়ে আছে, চোখ দুটো লাল হয়ে আছে মৌরীর অনেক কেঁদেছে. দুই দিনে চেহারাটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে, আসিফের দিকে মৌরীর বাবা এগিয়ে এলেন হাতে ফ্ল্যাটের চাবি দিয়ে বলল বাবা অনেক সমস্যা ফেলে দিয়েছি তোমাদের।

কিছু মনে করো না। চাবিটা তোমার মাকে দিও। প্রায় দুইদিন হয়ে গেছে মৌরীরা বাসা ছেড়েছে, আসিফ এখনো জানে না ঠিক কোন কারণে তারা চলে গেছে, মৌরীর কথা মনে পড়তেই আসিফের মন বিষণ্ণ হয়ে যায়, ও শুধু তাকিয়ে দেখেছে মৌরীর চলে যাওয়া... ও কেন চলে গেল? তবে কি আমার উপর রাগ করেই! আসিফ আর কিছুই ভাবতে পারে না। রাতে পানি খাওয়ার জন্য ডাইনিং টেবিলের সামনে আসতেই আব্বু আম্মুর ঝগড়া শুনতে পায় আসিফ. এর আগে কখনো এমনটা হয়নি আসিফ একটু এগিয়ে যায় দরজার পাশে দাঁড়াতেই শুনে.. তুমি তো জানতে না ঐ মেয়ে আমার ছেলের মাথায় বসতে চেয়েছিল! মেয়েকে যে কারণে হারিয়েছি আজ ছেলেকেও হারাতে যদি উপর তলার ভাড়াটিয়া বিদায় না করতাম, আসিফের বাবা উত্তেজিত হয়ে" কি বলতে চাও তুমি? স্পষ্ট করে বল। কি আর বলবো ঐ মেয়ে ঐদিন আসিফের রুমে এসে চিঠি রেখে গিয়েছিল।

আমি না দেখলে তো অনেক বড় সর্বনাশ হয়ে যেত। আসিফ কথাটা শুনতেই যেন আকাশ থেকে পড়লো! চিঠি,, মৌরী কি তাহলে আমায় কিছু বলতে চেয়েছিল? কি ছিল ঐ চিঠিতে...ও আমাকে ভুল বুঝে চলে গেল। ও ভাবল আমি হয়তো চিঠির কথা মাকে বলে দিয়েছি। তাইতো যাবার সময় একটি বারের জন্যও তাকায়নি। আসিফের চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে নামলো.... পরের দিন কলেজে না গিয়ে বের হয়েছিল আসিফ মৌরীদের বাসা খুঁজতে, পুরো বিকেল পর্যন্ত খুঁজে কোন হদিস পায়নি আসিফ।

অবশেষে ক্লান্ত শরীরে ফিরল বাসায় গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে উপরে তাকাতেই শূন্য বারান্দায় পাখির খাঁচাটা দেখতে পায়! আর একটু বিভ্রম হয়ে মৌরীর সেই হাসি মাখা মুখ! এক পলকেই আবার হারিয়ে যায়...... পূর্বে ফেসবুকে প্রকাশিত। ছবি:-নেট সংগ্রহ বিদ্রঃ-অনেক দিন ব্লগে আসা হয় না, প্রায় ৭ মাস পরে পোষ্ট করলাম। জানি সবাই ভুলে গেছে! তবুও যারা এখনো মনে রাখছেন একটু পড়ে জানাবেন কেমন হয়েছে, আমার লেখা প্রথম গল্প।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।