আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চোর স্বামী চাই

আপনাদের মনে আছে কি না জানি না। কয়েক বছর আগে টিভিতে একটি বিজ্ঞাপণ প্রচারিত হতো। এক প্রেমিকা তার প্রেমিককে নিয়ে খুবই বিরক্ত,’’ কী পাবো তোমাকে বিয়ে করে?’’ একটি লাল গোলাপ এগিয়ে দিয়ে প্রেমিকের উত্তর ছিল, ‘’প্রতিদিন একটি লাল গোলাপ। ‘’ তাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রেমিকার বিরক্তি ও ক্রোধ আরো বেড়ে যায়! ভাগ্যিস!ভালোবাসার কথা বলে বসে নি প্রেমিকটি। তাহলে হয়ত কপালে মারই ছিল।

ওটা কিনতে তো কোন পয়সাই লাগে না! যাহোক, বিজ্ঞাপণের প্রেমিকও আমাদের মত তার প্রেমিকার ক্ষেপে উঠা লক্ষ্য করে আবারও বলল, ‘’প্রতি সপ্তাহে একটি করে শাড়ি’’। তাতে প্রেমিকা গেল আরো ক্ষেপে। শাড়ি কিনতে ক’টাকাই বা লাগে বলুন? ক্ষেপারই কথা। অতঃপর মধ্যে প্রতিমাসে একটা করে গয়নার সেট, প্রতি বছর হানিমুন করার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও প্রেমিকার অভিমান ভাঙ্গাতে না পেরে প্রেমিক তার হাতের শেষ ট্রাম্প কার্ডটি দেখিয়ে দিল, ‘’তোমার জন্য অমুক হাউজিং-এর প্লট!’’ প্রেমিকার খুশি আর দেখে কে! ঠিক ধরেছেন্, কোন এক হাউজিং কোম্পানীর প্লটের বিজ্ঞাপণ ছিল ওটা। বিজ্ঞাপণে প্রেমিক-প্রেমিকাকে মুহূর্তেই সুখী দম্পত্তিরূপে দেখে আমাদের একবারও মনে হয় নি, এত ফুল, এত শাড়ি, এত গয়না, এত হানিমুন ও একদম শেষে সেই বিশেষ হাউজিং-এর প্লট কেনার জন্য এত টাকা সে প্রেমিক কোথায় পেল! ঐ বিজ্ঞাপণটা দেখে আমার এক সহপাঠিনীর (বান্ধবী নয়) মন্তব্য ছিল, ‘’দ্যাখ, দ্যাখ, একেই বলে হাসব্যান্ড! বউকে প্লট কিনে দেয়।

‘’ যৌতুকের কারণে পারিবারিক নির্যাতনের শিকারে কত গৃহবধূর খবর আমরা পাই পত্রিকাতে। কিন্তু কত স্বামী যে স্ত্রীর দ্বারা মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রতি নিয়ত, তার খবর আমরা কি রাখি? হিন্দি সিরিয়ালের ঐ চরিত্রগুলোর মত শাড়ি, চুড়ি, গয়না না থাকলে অন্যের সামনে স্ত্রীদের কোন স্ট্যাটাসই থাকে না। স্বামী এসব কিনে না দিলে মেয়েলি আড্ডায় কী দেখিয়ে স্বামীকে নিয়ে গর্ব করবেন স্ত্রীরা? স্বামী যে তাকে কত ভালবাসে তার প্রমাণই বা ইনিয়ে বিনিয়ে কিভাবে অন্যের সামনে দেখাবেন? ‘’আমার স্বামী সেরা মানে আমিই সেরা’’ –এ প্রতিযোগিতায় যে তাকে জিততেই হবে। হিন্দি সিরিয়ালের কুটিল চরিত্রগুলোর চেয়ে কোন দিক দিয়ে কম আমাদের এই সহজ সরল বাংগালী রমনীরা? একটুর জন্য সে প্রতিযোগিতায় প্রথম হতে না পারার দুঃখ বাসায় এসে ঝাড়া হয় স্বামীর উপর, ‘’কী দিয়েছো তুমি আমাকে?’’ ‘’কী পেয়েছি তোমাকে বিয়ে করে?’’ ‘’দেখো গিয়ে অমুক তার স্ত্রীকে কেমন গয়না কিনে দিয়েছে। ‘’ অবশেষে কী আর করা? অক্ষম স্বামীকে চুরি করতে হয়, ঘুষ খেতে হয়, দুর্নীতি করতে না।

না হলে যে ঘরে শান্তি থাকে না। অন্যের সামনে বউয়ের মান থাকে না। বউয়ের মান না থাকা, মানে স্বামীর নিজেরই মান না থাকা। দামী দামী শাড়ি, গয়না পেয়ে স্ত্রীরা স্বামীদের চুরি করার, ঘুষ খাবার, দুর্নীতি করার অপরাধটুকু খুশিমনে ক্ষমা করে দিতে একটুও দেরি করেন না। আর দেরি করবেনই বা কেন? স্বামী কোন পথে আয় করছে এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কথা তো স্ত্রীর নয়! স্বামীর রোজগার হারাম হলেও স্ত্রীর জন্য তা সব সময়ই হালাল।

এত এত শাড়ি, চুড়ি, গাড়ি, বাড়ি পেয়েও স্বামীর আয়ের উৎস নিয়ে খামোখা প্রশ্ন করতে পারে কেবল অকৃতজ্ঞ আর কৃতঘ্ন স্ত্রীরাই। বিয়ের পাত্র হিসেবে সৎ, আদর্শবান, নীতিবান পাত্রের চেয়ে চোর, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ পাত্ররাই যে সবদিক থেকে বেশি উপযুক্ত এটা অবশ্য মেয়েরা কিছুতেই স্বীকার করতে চাইবে না। সে আপনারা স্বীকার করুন আর না করুন, শারিবারিক শান্তি বজায় রাখার জন্য ঘরে ঘরে চোর স্বামী থাকা কিন্তু সত্যিই খুব দরকার। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।