[ ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কেরামগন কোরআন ও হাদিছের দিষ্টিতে গবেষণা করে জিকিরকে দুভাগে ভাগ করেছেন। (১)লেসানি জিকির অর্থাৎ মৌখিক জিকির (২)কলবি জিকির বা অন্তরের জিকির। অন্তর দ্বারা জিকির করাটাই হল অন্তরের জিকিরের উদাহারন। তবে এটা ঠিক যে, “মুখ দ্বারা সার্বক্ষনিকভাবে জিকির করা সম্ভব নয়। সার্বক্ষনিকভাবে জিকির কেবল মাত্র ক্বলবের দ্বারাই সম্ভব কেননা”(তফসিরে মাহয়ারি)।
তাছাডাও ক্বলবে যদি জিকির জারী না থাকে তাহলে অনেক সময় শয়তানের অয়াসওয়াসায় মৌখিক জিকির বাধাগ্রস্থ হতে পারে। উদাহারন স্বরূপ, আপনি মনস্থ করলেন যে, আজ আছরের নামাজের পর ১০০০ বার দরূদ শরীফ পাঠ করবেন বা কিছুক্ষন কোরআন তেলোয়াত করবেন এবং সেই উদ্দেশ্যে দরূদ পাঠ শুরুও করে দিলেন। দরূদ ৩০০বার পডার পরই কে যেন আপনাকে বলছে আজ আর পড়তে হবেনা,টেলিভিশনে নাটক,সিনেমা,ক্রিকেট খেলা শুরু হয়ে গেছে তখন আপনি তড়াতাড়ি উঠে গিয়ে টিভির সামনে বসে গেলেন। এখন আপনি যে ১০০০বার দরূদ পাঠ করতে মনস্থ করলেন, ৩০০বার পড়ার পর আপনার সেই সিন্দ্বান্তকে কে পাল্টিয়ে দিলো? কোথা থেকে এলো এই নির্দেশ? নামাজের নিয়ত করে জায়নামাজে দাঁড়িয়েছেন, এমন সময় কে যেনো আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে আপনার বন্দু-বান্দবের কথা, ব্যাবসা-বানিজ্যের কথা, শফিং করার কথা, অফিসের কথা। আপনার মন চারিদিকে ছোটাছুটি করছে, নামাজে কি পড়ছেন তা আপনি নিজেও জানেন না, এরকম হলে নামাজ কি শুদ্দ বা কবুল হবে?
আল্লাহপাক এরশাদ করেন, “ঐ মুমিনগন কামিয়াবি হাছিল করেছে,যারা তাঁদের নামাজ হুজুরী ক্বলবের সহিত আদায় করেছে”।
ফিৎনা-ফ্যাসাদের এই যুগে,আইয়্যামে জাহেলিয়াতের চেয়েও নিকৃষ্ট এই সময়ে কজনই বা আমরা হুজুরী ক্বলবের সহিত নামাজ আদায় করতে পারছি, তা কি কখনো ভেবে দেখেছি? কেনো ১০০০বার দরূদ পাঠ করতে মনস্থ করে সমপূর্ণ পড়তে পারি না? কেনো নামাজের সময় বিভিন্ন চিন্তার উদ্ভব হয়ে খেয়াল চারিদিকে ছুটে যায়? কেনো নিদিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠেও অলসতার কারনে ফজরের নামাজ ক্বাযা আদায় করতে হয়? কে সেই অপশক্তি আমাদের এবাদত বন্দেগীর প্রতি দৃঢ় মনোভাব বিনিস্ট করে দেয়? সৎকাজ থেকে বিরত রেখে অসৎ কাজে জডিয়ে পডতে সহযোগিতা করে? কোথায় সেই অপশক্তির অবস্থান? কোথায় বসে সেই অপশক্তি(শয়তান) আমাদের বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত করায়?
হুজুরপাক(সঃ)বলেন, “শয়তান আদম সন্তানের ক্বলবের ওপর বসে থাকে। যখন সে আল্লাহপাকের জিকির করে, তখন শয়তান পালিয়ে যায়, আর যখন সে আল্লাহপাকের জিকির অমনোযোগী হয় তখন শয়তান তাঁকে অয়াসওয়াসা দেয়” (বোখারি ও মেশকাত)। এই হাদিছ থেকে প্রতীয়মান হয় যে শয়তান মানুষের ক্বলবের ওপর বসে থেকে মানুষকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে অপকর্মে লিপ্ত করায়, এবাদতের প্রতি দৃঢ় মনোভাবকে বিনষ্ট করে দিয়ে মানুষকে জাহান্নামের উপযোগী করে তোলে। তাই আজ প্রয়োজন, সেই শয়তানকে ক্বলব থেকে বের করে দেওয়া। কিন্ত কি করে তা সম্ভব? একমাত্র ক্বলবে জিকির জারী করে, ক্বলবকে জিকিরের আলোতে আলোকিত করতে পারলেই শয়তান ক্বলব থেকে পালিয়ে যাবে।
কেননা শয়তান কোনো অস্ত্র বা ঔষুধকে ভয় পায়না, ভয় পায় শুধু জিকিরের নুরকে।
আর জিকিরের সেই নুরকে নিজের ক্বলব থেকে সামনা-সামনি বসিয়ে বিপদগামী মুসলমানদের ক্বলবে নিক্ষেপকরণ পূর্বক ক্বলবি জিকিরের সংযোগ দিয়ে, অন্দ্বকার ও মৃত ক্বলবগুলোকে জিকিরের নূরে সমুজ্জল করে তুলেছেন, কাগতিয়ার মহান মোর্শেদ হযরত শায়খ গাউছুল আজম মাদ্দাজিল্লুহুল আলী ছাহেব নিজের ক্বলব মোবারক থেকে মুরীদের ক্বলবে নিক্ষিপ্ত জিকির (তাওয়াজ্জুহ)এর মাধ্যমে। ।
(চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।