যদি স্বপ্ন দেখার সাহস থাকে মনে, তবে এসো হয়ে যাক.... আগুনের পেয়ালায় ভালবাসা এক্কাপ...। !! বিস্তীর্ণ রেল লাইন গুলোর দুই পাশে গড়ে উঠেছে গৃহহীন মানুষের সংসার, আলুথালু খুপরির মত ঘর গুলো কেমন যেন। ষ্টেশন থেকে কোয়াটার মাইল দূরত্বে থাকে ধ্রুপদি রয়, তিন দিনের অনাহারে মিইয়ে গেছে ধ্রুপদির শরীর। এই অগোছালো দেহ যার পুঁজি তার ক্ষুধার যন্ত্রনা নিয়ে ভাবার কি কিছু আছে !! খদ্দের চলে যাওয়ার পর থেকে সমানে বমি হচ্ছে , আজকাল সহ্য হয়না ধ্রুপদির শরীরে । ক্ষুধার যন্ত্রনায় পেটে যখন আগুন জ্বলে তখন কামনার ফোড় বড় কষ্ট হয় মেয়েটার।
ধ্রুপদির স্বামী তারাপদ মণ্ডল এসে টাকা চায় ওর কাছে , দারুর নেশা চেপেছে । ধ্রুপদি হাত উচিয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টাকা গুলো দেখায় । তারাপদ কুড়িয়ে নিয়ে সোজা চলে যায় পিছু ফিরে একবারো দেখেনা, অসুস্থ বউ তার জীবনের শেষ লগ্নে। উদাস নয়নে স্বামীর চলে যাওয়া দেখে ধ্রুপদি। মানুষটাকে এখন একেবারেই চেনা লাগেনা তার কাছে।
ব্রাহ্মণ পরিবারের খুব আদরের মেয়ে ছিলো ধ্রুপদি, এস এস সি শেষ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে কেবল। একদিন আচমকা ঝড় জলের দিনে দেখা হয়ে যায় তারপদ মণ্ডলের সাথে। একটু একটু করে ভালবাসায় ডুবে যায় দুটি প্রাণ। কত কি করে ধ্রুপদির মন জয় করেছিলো তারাপদ। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ব্যথার যন্ত্রনায় কুকরে উঠে মেয়েটা।
গত তিন মাস ধরে কতবার স্বামীর পায়ে পরে আকুতি করেছে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু তারাপদের মন গলেনি। শেষ ৩/৪ দিন ধরে রক্ত বমি হচ্ছে । আজকাল বেঁচে থাকতে খুব ইচ্ছে করে ওর। ইচ্ছে করে স্বামীর পাশে বসে এক থালা গরম ভাত খেতে। কিংবা কোন চাঁদের রাতে স্বামীর গান শুনতে।
ট্রেনের শব্দ শুনে হকচকিয়ে উঠে ধ্রুপদি। কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছে সে জানেনা। এ মুহূর্তে তারাপদ কে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে ধ্রুপদির, সে ভেবে পায় না শেষ কবে তার স্বামীর বুকে মাথা রাখতে পেরেছে। কিন্তু একটা সময় ছিলো ধ্রুপদি কে একদিন না দেখলে তারাপদের নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে যেতো, পাগলের মত করতো সে। এক দিন ধ্রুপদি আর তারাপদের প্রেমের কথা জানাজানি হয়ে গেলো, পুরো পাড়া জুড়ে ওদের নিয়ে নানান কথা রটতে থাকা দেখে ধ্রুপদীর বাবা ১০ দিন মেয়েকে তালা বন্ধ করে ঘরে আটকে রাখলো।
এক রাতে তারাপদ ওর বন্ধুদের সাথে নিয়ে গিয়ে তালা ভেঙ্গে ধ্রুপদিকে নিয়ে আসে। আর বাড়ি ফেরা হলো না ধ্রুপদীর। তারাপদের হাত ধরে চলে এসেছিল এই পাষন্ডের শহরে । প্রথম কিছু দিন ভালই কাটছিলো। তারাপদ রাজ মিস্ত্রীর কাজ করতো ।
দুই টোনা টুনির সংসার, মায়ার স্বর্গ। ৩/৪ মাস পর থেকেই শুরু হয় জীবনের নির্মম অধ্যায়। প্রায় রাতেই মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরে বেদম পিটায় তাকে। দুর্বল দেহের ধ্রুপদি কিছুতেই পেরে উঠেনা, তারাপদের সহকর্মী দের কাছ থেকে ধ্রুপদি জানতে পায় জুয়া আর নেশা দুটাতেই ভীষণভাবে জড়িয়ে গেছে তারাপদ। ধ্রুপদি অনেক করে বুঝাতে চায় তারাপদকে সে মা হতে চলেছে, কিন্তু তারাপদ সে কথায় একটুও টলেনা বৈকি আরো চড়াও হয়।
এক রাতে ২ জন অপরিচিত লোক নিয়ে ঘরে ফিরে লোক গুলো রেখে তারাপদ বাইরে চলে যায়। তার পর থেকে প্রায় রাতেই অচেনা মানুষের সাথে রাত কাটাতে হয় ধ্রুপদির।
কত বার চেষ্টা করেছে পালিয়ে যেতে , কিন্তু পালিয়ে যাবে কোথায় ? কোন মুখ নিয়ে বাবা- মার সামনে গিয়ে গিয়ে দাঁড়াবে। খুব পানির পিপাসা পেয়েছে এই মুহূর্তে মেয়েটার। শত চেষ্টা করেও উঠে বসতে পারছেনা সে।
মার মুখটা খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ধ্রুপদীর , হাজার চেনা মুখ এসে ভীর করেছে চোখের সামনে । নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে, বার বার হা করে নিঃশ্বাস নেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে । সাদা পোশাক পরা দুজন মানুষ এসে ধ্রুপদীর হাত ধরে ওকে নিয়ে যাচ্ছে অচেনা এক পৃথিবীতে। যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকা শরীর নিস্তেজ হয়ে পরে আছে মাটির মেঝেতে । ধ্রুপাদির চোখের কোনে জমে আছে ফোঁটা ফোঁটা জল।
কাঁদতে কাঁদতে এসেছিলো পৃথিবীতে আবার কাঁদতে কাঁদতেই চলে যাওয়া। ভালই মৃত্যুই আসলে শান্তি কিংবা মুক্তি।
পুনশ্চঃ এটা কোন গল্প নয়, আমাদের চার পাশে হাজার ধ্রুপদি । চোখ মেলে তাকালেই দেখবেন কতগুলো অশ্রু সিক্ত চোখে কান্না হয়ে ঝড়ে পরে যন্ত্রনা গুলো। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।