আমরা শুধু আপন মানুষ খুঁজি, আপন মানুষদের খুঁজতে হয় না, তারা পাশেই থাকে !!
বাংলাদেশে শীতকালে একটি জনপ্রিয় সবজীর নাম টমেটো। স্বাদ ও পুষ্টির বিচারে বাংলাদেশে টমেটার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে আশার কথা হলো এই টমেটো এখন যে শুধু মাত্র শীতকালে পাওয়া যাবে এমনটি নয়। বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্ঠায় বারি টমেটো-৪ এবং বারি টমেটা-৫ নামে টমেটোর দুটি জাত উদ্ভাবন করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায় বারি টমেটো-১০ (অনুপমা) এবং বারি টমেটো-১৩ (শ্রাবণী) নামেও দুটি গ্রীষ্মকালীন টমেটো ১৯৯৮সালের দিকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনষ্টিটিউট উদ্ভাবন করেছিল।
কিšুÍ আকারে খুব ছোট হওয়ায় ভোক্তারা এটিকে ভালভাবে গ্রহন করে নাই। তাই নতুন উদ্ভাবিত বারি টমেটো-৪ এবং বারি টমেটা-৫ বাংলাদেশের কৃষি সেক্টরে নতুন করে অবদান রাখল।
বাংলাদেশে যেকয়জন বিজ্ঞানী গ্রীষ্মকালীন টমেটো ও সীম উৎপাদনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো: শহীদুল ইসলাম। মাত্র দশ মাস আগে কৃষি অনুষদের হর্টিকালচার বিভাগে যোগদান করেন ড. শহীদুল । যোগদানের পর থেকেই তিনি তার গবেষনার ফলাফল সিলেট অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাইলেন।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সিকৃবিতে মাঠ গবেষনাগার বলতে তেমন কিছুই ছিল না। হর্টিকালচার বিভাগে ড. শহীদুল ইসলাম এবং এগ্রোনমি বিভাগে ড. মো: নূর হোসেইন মিঞা এবং ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস এসে কৃষি অনুষদের মাঠ গবেষনাগার উন্নয়নে কাজ শুরু করেন। ড. শহীদুল গ্রীষ্মকালীন টমেটোর পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন শীম চাষে উদ্বোদ্ধ করতে সিলেট অঞ্চলের আনাচে কানাচে কৃষকদের জড়ো করেন এবং এর চাষাবাদ সম্পর্কে বিশেষ প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেন। কৃষকদের প্রশিক্ষনের পাশাপাশি তিনি নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদমিনারের সামনে একটুকরো জায়গায় গবেষনা মাঠ খুলে বসেন। ড. শহীদুলের ভাষ্য মতে সিলেট একটি বিশেষ কৃষি অঞ্চল ।
এখানকার মাটি ও আবহাওয়া প্রকৃতি বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত টমেটো সহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদনে প্রধান সমস্যা। তাই বীজতলা ও মূল জমির মাটি একটু উচু করে তিনি পলিথিনের ছাউনি ব্যবহার করেন। যাতে অতিরিক্ত রোদে ফুল শুকিয়ে না যায় কিংবা বৃষ্টিতেও গাছের কোন ক্ষতি না হয়। ২৩০ সেমি চওড়া (মাঝে ৩০ সেমি নালা সহ) দুটি বেডে লম্বালম্বিভাবে ১টি করে ছাউনি দিলে সবচেয়ে ভাল হয়।
ছাউনি ২০মিটার লম্বা হলে প্রতি হেক্টরে এরকম প্রায় ১৭০টি ছাউনি করা যাবে। ড. শহীদুল ইসলাম সিলেট অঞ্চলে চাষাবাদের জন্য গ্রীষ্মকালীন টমেটোর জাত বারি টমেটো-৪ এবং বারি টমেটা-৫ ব্যবহার করেন। টমেটোর চারা গুলোকে তিনি বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে (যেমন গ্র্যাফটেড, ননগ্রাফটেড, হরমোনাল, নন হরমোনাল ইত্যাদি) মূল জমীতে লাগান। তার মতে এই হাইব্রিড জাতগুলোতে হরমোন ছাড়াই লাভজনক ফলন পাওয়া যাবে। তবে টমেটোটন নামক হরমোন প্রয়োগ করলে এর ফলন আরো বৃদ্ধি সম্ভব।
জানা যায় সঠিক পরিমান সার ব্যবহার ও গাছের পরিচর্যা হলে গ্রীষ্মকালেই প্রতি এক হেক্টরে ৪০-৫০টন টমেটো হতে পারে। সিলেটেসহ সারা বাংলাদেশে জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত কোন টমেটো পাওয়া যেতনা, শীতকালীন কিছু টমেটো সংরক্ষন করে সরবরাহ করা হতো। যার বাজার মূল্য ৫০টাকা থেতে ৩০টাকা পর্যন্ত। এই বাজার মূল্য ধরেই গ্রীষ্মকালীন টমেটো প্রতি হেক্টরে ৫,১৮,৫০০ টাকা খরচ করে ১৫,০০,০০০টাকা পর্যন্ত আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশে সবজি চাষ সম্পর্কে জানতে চাইলে, তিনি বলেন-“বাংলাদেশ সবজি চাষে একটি সম্ভাবনাময় দেশ।
আমাদের কৃষক ভাইয়েরা যদি সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতিতে সবজী চাষ করেন তাহলে শুধু শীতেই নয় সারা বছর ধরে আমরা টমেটা, শীম সহ বিভিন্ন সবজী আমরা পেতে পারি। ” নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন- সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী পড়ানোর পাশাপাশি গবেষনার কাজটি করতে চাই। বাংলাদেশের বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের পুষ্টির চাহিদা পূরনে সর্বাত্মক কাজ করে যাব। ”
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার মাঠ গবেষনাগারে সাদা সাদা পলিথিন ছাউনির ভেতর লাল লাল টমেটো ধরেছে। পাশের একটি প্লটে সীমের ফুল ধরেছে।
কতক গাছে শীম ও ধরেছে। পত্রিকার পাতায় এত খারাপ খবরের ভীরে এর চেয়ে ভাল খবর আর কি হতে পারে।
কিছু ছবি দিলাম:
ইনি ড. শহীদুল প্রয়োজনে স্যারের সাথে কেউ কথা বলতে চাইলে: ০১৯১৬৬৬২৪২১
সিকৃবির ভিসি টমেটোর মাঠ পরিদর্শন করছেন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।