আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘জিন্না-নেহেরু-স্বার্থ’-এর ফসল

################ ‘জিন্না-নেহেরু-স্বার্থ’-এর ফসল ***** যাদের দোষে বাংলাদেশকে দোষী বলা হচ্ছে, একটু খোঁজ নিলেই (বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে) দেখা যায় যে, ওদের প্রত্যেকের অবিস্মৃত পূর্বপুরুষের জন্মস্থান শিলিগুড়ি, হলদিবাড়ি, মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি, পশ্চিম দিনাজপুর, মালদাহ্ ইত্যাদি জেলায় বা আসামে এবং তার আশেপাশে, আর, এদের বেশিরভাগ সাতচল্লিশে, কিছু পয়ষট্টিতে, কিছু একাত্তরে এবং অন্যান্যরা সাতচল্লিশ থেকে অদ্যাবধি স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বাস্তুহারা। এরা সকলেই ‘জিন্না-নেহেরু-স্বার্থ’-এর ফসল। এদের কারো মধ্যে কোথাও যদি সভ্য সাধারণের মতো আচরণ পাওয়া যায়, সেটা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত মহানুভবতা এবং ক্ষমাশীলতা। যারা উদ্বাস্তু হয়েছে, তাদের কাছে দেশপ্রেম বা মাতৃভূমির শান্ত সুশৃঙ্খল পরিবেশ কামনা করা অর্থহীন। অর্থহীন এজন্যেই যে, তারা নিজ মাতৃভূমিতে আপনজনদের নৃশংস হত্যাকাণ্ড স্বচক্ষে দেখেছে অথবা স্বজনদের কাছে সেই বীভৎস হত্যাকাণ্ডের কাহিনী শুনেছে আর ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক কোন্দলকে পুষে রাখতে এবং সুযোগ পেলেই বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।

তবে, এটাও সত্য যে, যেকোনো দেশের উন্নয়নের প্রেক্ষিত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বাস্তুহারা অভিবাসীরাই, স্বদেশপ্রেমের অভাব সত্ত্বেও, সমগ্র বিশ্বব্যাপী জ্ঞান-বিজ্ঞান-কৃষ্টির উন্নয়নে মূল চালিকাশক্তিরূপে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অচ্যুত, অচ্ছুৎ, অশিক্ষিত, স্বল্পশিক্ষিত, প্রকৃতি-আশ্রিতরা সাধারণত অলসপ্রকৃতির হয়ে থাকে। তারা যেমন জ্ঞাতিহিংসাপরায়ণ, পরশ্রীকাতরতাগ্রস্ত এবং স্বার্থান্ধ, তেমনি তারা তাদের ভূখণ্ডকে প্রাণপণে আঁকড়ে পড়ে থাকার মতোই স্বদেশপ্রেমিকও। দেশপ্রেমিকেরা নিজেদের মধ্যে ঠাণ্ডাযুদ্ধে লিপ্ত এবং উত্তরাধিকারিত্ব নিয়ে তুমুল আত্মকোন্দলিত মামলাবাজ হলেও প্রত্যেকে নিজেদের ভূখণ্ডের প্রচলিত নিয়ম-নীতি শ্রদ্ধাভরেই মেনে চলে। সাধারণত, কেহই অবলীলায় উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ভিটেমাটির মায়া ত্যাগ করতে পারে না।

কোনো দেশপ্রেমিক কখনোই নিজের ভূখণ্ডে বিশৃঙ্খলা চাইতে পারে না। কোনো মানবসন্তানকে বাস্তুহারা করা হলে, সে আত্মরক্ষা এবং ব্যক্তিস্বার্থের দিকেই ঝুঁকে পড়বে, এটাও স্বাভাবিক। কোনো উদ্বাস্তুর কাছ থেকে দেশপ্রেম প্রত্যাশা করা চরম আহাম্মকি। পশ্চিমবঙ্গেও স্বদেশহারা অভিবাসীরাই প্রাচীন বাসিন্দাদের চে’ শিক্ষায় দীক্ষায় উন্নততর। তাদেরই কিছু যেমন কল্যাণের দিকে অগ্রগামী এবং দিকনির্দেশক, তেমনি তাদের বেশিরভাগই রয়েছে বিশৃঙ্খলার মূলে, নেপথ্য নেতৃত্বে, আর ওদের প্রায় সকলেরই পূর্বপুরুষের পরিত্যক্ত বাস্তুভিটা বাংলাদেশে।

ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ, সবখানেই সাতচল্লিশের পাপের প্রায়শ্চিত্ত সমভাবেই দৃশ্যমান। বিশৃঙ্খলাকারীদেরকে তাদের স্মরণকালের পুর্বপুরুষের ভিটেমাটিতে ফিরে যাবার সুযোগ করে দিলে অথবা তারা নিজেরা মহানুভবতার সাক্ষ্যস্বরূপ তাদের বর্তমান অবস্থানকেই, নিজের জন্মস্থানের মর্যাদা দিয়ে, মাতৃভূমি হিসেবে মেনে নিতে পারলে দাঙ্গা বা বিশৃঙ্খলা অনেকাংশেই কমে আসবে, এ আমাদের আন্তরিক বিশ্বাস। করণিক : আখতার২৩৯ রঙ্গপুর : ২৪/০৮/২০১২খ্রি: মুসাফিরনামা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।