আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"এই আবেগীয় ম্যামথ গুলো এখনও কিভাবে টিকে আছে যেখানে যান্ত্রিক তেলাপোকাদের রাজত্ব"

মানুষ ! হা হা হা ,আমিও মানুষতেলাপোকাও পাখি ডাক্তার স্পিসিস সমাজে অসামাজিক বলেই খ্যাত, এমনকি পরিবার, প্রিয় মানুষটাও সময়ের স্বল্পতা নিয়ে স্বার্থপর বলতে ছাড়েনা, চলুন তাদের অসামাজিকতার, স্বার্থপরতার গল্প শোনাই ক্লাস শেষে অসুস্থ এক বন্ধুকে নিয়ে স্যারের কাছে গেলাম, গোটাকতক টেস্ট শেষে রুমে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা, ক্লান্তিতে শরীর ভেঙ্গে পরার দশা, কেবল ঘর্মাক্ত শার্ট ছুড়ে দিয়ে বিছানায় গা-এলিয়েছি মাত্র মোবাইলের ভাইব্রেশনে বাধ্য হলাম চোখ খুলতে, পরিচিত নাম্বার কিন্তু ফোন ধরতেই একটু কনফিজড হয়ে গেলাম ভয়েস টোন অপরিচিত মনে হচ্ছে কেন ?? একটু খেয়াল করতেই ধরতে পারলাম কণ্ঠস্বর একটু ভারি, কান্নাসিক্ত মনে হল, চিন্তায় পড়ে গেলাম জিজ্ঞাস করলাম দোস্ত কি হইছেরে ?? বন্ধুটি হড়বড় করে একগাদা বকলো, সারমর্ম হল আপু(বন্ধুর বোন) হসপিটালে, জরুরি রক্তের প্রয়োজন আমি ভাবলাম আপু বোধহয় অ্যাকসিডেন্ট করছেন, শঙ্কিত বোধ করলাম, (আংকেলও অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছেন), আবেগি হওয়া স্বাভাবিক,একটু শান্ত হবার পর বন্ধুটি বললো ডেলিভারি কেইস (চিন্তা করুন কত রসকষহীন ডাক্তার সমাজ, শিশু জন্মানোর মত সুন্দর ব্যাপার তাদের কাছে কেইস মাত্র) শুনে মেজাজ চড়ে গেল , হারামিটা আগে জানায়নি কেন ? বন্ধুর কান্নারত স্বর শুনে ঝাড়ি দেবার ইচ্ছে উবে গেল, তড়িঘড়ি করে হসপিটালে আসলাম, গোটাকয়েক বড়ভাইকে ফোন দিয়ে দুই ব্যাগ রক্ত নিশ্চিত করলাম, স্ক্রিনিং শেষ করে বন্ধুর হাতে রক্তের ব্যাগ ধরিয়ে বললাম যা, বন্ধুটি হাত টেনে ধরে বলল চল, একটু অবাক হলেও কিছু না বলে ওর সাথে চললাম, হাসপাতালের তিনতলায় নিয়ে গেলো। এবার সত্যি অবাক হলাম আপু এক প্রাইভেট হসপিটালে আছেন; এক সৌম্যদর্শন ভদ্রলোকের সামনে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে “আমার,ভাইয়া” আমি একটু অবাক হলাম,ভাইয়া হাত না বাড়িয়ে, বুকে জড়িয়ে ধরলেন “ধন্যবাদ,ছোট ভাই” ততক্ষনে বুঝতে পারলাম ইনি দুলাভাই,আমি হতবিহব্বল কন্ঠে জিজ্ঞাস করলাম “ভাইয়া আপনি এখানে কি করেন ?? ভাইয়াঃ বলল গাইনিতে ডিউটি আছে ...... কথা শেষ করতে না দিয়েই বললামঃ আপু,হসপিটালে আর আপনি কিনা ??? ভাইয়াঃ সিরিয়াস কেইস আছে ভাই...... সারা জীবন দেখে আসছি নতুন সন্তানের আগমনে পিতারা কি পরিমাণ উচ্ছ্বসিত থাকে ... আমার নিজের কাজিন আমেরিকা থেকে মাত্র সাত দিনের ছুটি নিয়ে দেশে আসছিলেন ভাবির পাশে থাকার জন্য... আমি বিস্ময়ে পাথর হয়ে জিজ্ঞাস করলাম কিন্তু ভাই ,আপু... ভাইয়াঃ তোমার আপুর পাশে তোমারা আছ,তোমার আন্টি (আপুর আম্মু) আছে ,আমার ফ্যামেলির সবাই আছে ......কিন্তু এই দুই মহিলার সাথে না ফ্যামিলির কেঊ আছে, না আছে পরিচিত কেঊ , উপরে আল্লাহ আর নিচে আমিই একমাত্র সম্বল ...... শুধু একটাই আফসোস থেকে যাবে সারা জীবন, বাবুটার জীবনের প্রারম্ভে তার পাশে থাকতে পারলাম না, প্রিয় মানুষটার আনন্দদায়ক মুহূর্তে তার পাশে থাকবনা...... আমি ভাইয়ার দিকে সশ্রদ্ধ বাকরুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম “এই আবেগীয় ম্যামথ গুলো এখনও কিভাবে টিকে আছে যেখানে যান্ত্রিক তেলাপোকাদের রাজত্ব, মানুষ যেখানে স্বার্থ চিন্তায় আত্মমগ্ন সেখানে এদের বাস রুপকথায় ই মানায়, বাস্তবে না” ভাইয়াকে তার দায়িত্ব পালনে হসপিটালে রেখে আসলাম রিকশায় যেতে ভাবলাম “হয়ত, ভবিষ্যতে বাবুটার কানে কানে পচে যাওয়া সমাজের কোন এক নষ্টা বলবে, তোমার বাবা তোমার জন্মের সময় তোমার মায়ের পাশে ছিলনা, সতের হাজার টাকার স্বার্থচিন্তায়, তোমার বাবা ডাক্তার, আস্ত কসাই, স্বার্থপর” হয়তো কেঊ থাকে বলবেনা “এমন গোটাকতক স্বার্থপর যে আরো দরকার , এরা স্বার্থ কে সত্যি পর করেছে” আর কিছু গল্প শোনাতাম স্বার্থপরতার আজকে এই পর্যন্ত থাক......আরেকদিন হবে হয়তো...।।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।