আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বে গা ছমছম করা কিছু জায়গা । (v.18+)

আপনি ভূতে বিশ্বাস করেন আর নাই করেন এটা বড় কথা না কিন্তু এই পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে আপনি একটি রাতও কাটাতে চাইবেন না । আর এমনও অনেক জায়গা আছে যেগুলো এখনো গা ছমছমে ... ১. Aokigahara Forest : গাছের সাগর বা "সি অফ ট্রি" নামে খ্যাত ৩৫ বর্গ কিলোমিটারের এই জঙ্গলটি জাপানের মাউন্ট ফুজি বনের উত্তর পশ্চিম অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত। নিরবিচ্ছিন্ন গাছ পালার ঘনত্ব আর বন্যপ্রাণীর অনুপস্থিতির কারণে এই বনটি অনেকটা শান্ত হওয়ায় এটি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় জায়গা। তবে এই জায়গাটি জাপানি পৌরনিক ইতিহাসে একটি ভৌতিক স্থান হয়ে আছে। বিশেষ করে Tower of Wave (ja:波の塔,Nami no Tou,1960 উপন্যাস বইয়ের Seichō Matsumoto ২টি চরিত্র এখানে আত্মহত্যা করার কারণে এর পর থেকে জায়গাটি জাপান সহ বিশ্বের অনেক মানুষের কাছে আত্মহত্যার একটি মূখ্যম জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বলা চলে আত্মহত্যার জন্য বিশ্বে সানফ্রান্সিসকোর "গোল্ডেন গেইট ব্রিজের" পরেই এর স্থান এখন। এই ঘন জঙ্গলে গাছের সাথে ঝুলে প্রতি বছর অনেক লোক আত্মহত্যা করে মারা যায়। ২০০২ সালে জাপান সরকার ৭৮টি মরদেহ পেয়েছিল এই বন থেকে আর ২০০৩ সালে এই সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ১০০ জনে। কে জানে হয়তো আরো বেশিই ছিলো যা তারা মিস করেছে! আর এই আত্নহত্যার প্রবণতা বাড়ে প্রতি বছর মার্চ মাসের শেষের দিকে। আত্মহত্যা বন্ধে বনের ভেতর বিভিন্ন জায়গায় লেখা আছে " Life is precious thing! please reconsider!" অথবা "Think your family" ২।

Overtoun Bridge: স্কটল্যান্ডের Overtoun House এ অবস্থিত এই Overtoun Bridge টি বিশ্বে কেনো বিখ্যাত জানেন? কারণ এখানে এসে এই ব্রিজ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে শত শত কুকুর পূর্বপরিকল্পনাকৃত ভাবে আত্মহত্যা করেছে । এই ঘটনা সেই ১৯৬০ সাল থেকে শুরু হয় আর আজ অব্দি গড়ে প্রতি মাসে ১টি করে কুকুর এখানে এসে মারা যায়। এই ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য অনেক গবেষনা চালানো হয় কারণ এটা কোন অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা নয় যে ব্রিজে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বেষ্টনি দিয়ে এটা রোধ করা যাবে। কেউ কেউ বলেন যে কুকুরের পূর্বপরিকল্পনাকৃত ভাবে আত্মহত্যা করার কোন ক্ষমতা নেয় তাই তারা বিভিন্ন ভাবে এর ব্যাখ্যা দেন। এক দল বলেন যে এই ব্রিজের নিচে অনেকটা বেঁজির দেখতে একধরনের প্রাণীর পায়ু সংক্রান্ত গ্রন্থি থেকে এক ধরনের গন্ধ বের হয়ে আসে যার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে কুকুর গুলো উপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ।

আবার কেউ কেউ বলেন যে, celtic মিথোলজিতে এই জায়গাটিকে বলা হয়েছে "The Thin Place " যেখানে স্বর্গ এবং পৃথিবী নিকটতম জায়গা ভাবা হয়। কুকুরের যেহেতু মানুষের চেয়ে ভাল সংবেদনশীল ইন্দ্রীয় আছে তাই কুকুর গুলি এখানে এসে সামনে ঝাঁপ দেয়। ফটোশপ আর মজার ব্যাপার হলো যে কুকুর গুলো ঝাঁপ দিয়ে বেঁচে যায় তারা আবার এসে ঝাঁপ দেয়!!! ৩। The Sedlec Ossuary : চেক রিপাবলিকের এই রোমান ক্যাথলিক চ্যাপেলটি ৪০,০০০ থাকে ৭০,০০০ মৃত মানুষের কঙ্কাল দিয়ে সজ্জিত । হাড় গুড় আর মাথার খুলি দিয়ে নন্দিত ডিজাইনে সাজানো হয়েছে এই চ্যাপেলটি।

১২৭৮ সালে যখন রাজা বোহেমিয়া তার এক ধর্ম দূতকে জেরুজালেম পাঠান তখন তিনি পবিত্র জেরুজালেম থেকে ফিরে আসার সময় সাথে করে কিছু মাটি নিয়ে আসেন। আর ইউরোপিয়ানরা তখন এই মাটিকে পবিত্র ভেবে মৃত্যুর পর সবাই এই মাটির জায়গায় সমাধি হতে চান। ১৫তম শতাব্দিতে একটি Gothic Church বানানো হয় এই সমাধিস্থলের পাশে আর এর আঙ্গিনায় বানানো হয় এই Ossuary। সমাধিস্থলে হাড়-গুড় গুলো পড়ে ছিলো ১৮৭০ সাল পর্যন্ত , পরে Frantisek Rint নামক এক কাঠের নকশাকারী মিস্ত্রিকে দায়িত্ব দেয়া হয় এগুলোকে সংরক্ষণের জন্য। হাড় দিয়ে বানানো এই ঝারবাতি টি ।

এখানে পাওয়া যায় হাড়-গুড় দিয়ে শিল্পী Frantisek Rint এর নিজের করা স্বাক্ষর। ৪। Sanzhi Resort: তাইওয়ানের এই বাড়িগুলো Sanzhi pod houses বা Sanzhi Pod City নামে পরিচিত। নানান রহস্যে ঘেরা এই বাড়িগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৭৮ সালে। পর্যটকদের আকর্ষনের জন্য এই বাড়ি বানানোর কাজ শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত ১৯৮০ সালে এই বাড়িগুলো পরিত্যাক্ত হিসেবে ঘোষনা করতে বাধ্য হয়।

কারণ এই বাড়ি নির্মাণের সময় অনেক গুলো অদ্ভুত ঘটনা এবং সড়ক দূর্ঘটনা ঘটে এর আশে পাশে। এতে অনেক লোক মারা যায়। সত্যি বলতে কি এখন পর্যন্ত এই বাড়ি আর দূর্ঘটনায় ঠিক কত লোক মারা যায় বা কিভাবে কি কি ঘটনা এখানে ঘটেছে তা সরকারি ভাবে অনেকটা গোপন রাখা হয়েছে। কেবল স্থানিয় লোকজন দূর থেকে ইশারা দিয়ে এই বাড়িগুলো দেখিয়ে দিয়ে বলে যে এখানে রাখা একটি চায়নিজ ড্রাগনের ভাস্কর দ্বি খণ্ডিত করে এর মাঝ দিয়ে রিসোর্টের রাস্তা বাড়ানোর ফলে এখানে এসব দূর্ঘটনা গুলো ঘটছে। ৫।

Winchester mystery House: ১৬০ টি রুম বিশিষ্ট উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার এই বাড়িটি একটি গোলক ধাঁধার মত ! এতে রয়েছে অনেক অনেক গোপন পথ, আছে খোলা দেয়ালের উপর দরজা ! পা বাড়ালেই নিচে, আছে সিঁড়ি যেটা ঠেকেছে গিয়ে সিলিংয়ে ! আছে এমনও সিঁড়ি যা দিয়ে বের হতে পারবেন না কোথাও ! এই বাড়িটি তৈরি করে sarah winchester ১৮৮৪ সালে। সারাহ তার স্বামি আর মেয়ের মৃত্যু হলে সে আধ্যাত্মিক boston medium এর কাছে গেলে তারা তাকে এসব প্রেতাত্মা থেকে বাঁচতে হলে একটি বাড়ি নির্মাণ করতে বলেন। তারা বলেন সারাহ'কে এমন একটি বাড়ি নির্মাণ করতে হবে যার নির্মাণ কাজ যেন কখনোই বন্ধ না হয়! কারণ নির্মাণ কাজ বন্ধ হলেই সারাহ মারা যাবে! তাই সারাহকে বেঁচে থাকার জন্য এই সান জস মেনশন নামে এই বাড়িটির নির্মাণ শুরু করেন ১৮৮৪ সালে আর তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৮ বছর এই বাড়িটির নির্মাণ কাজ নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে দিন রাত ২৪ ঘন্টা চলেছিল। বাড়িটিতে ঢুকলেই হারিয়ে যেতে পারেন! এমন ধারনা থেকেই এর নকশা করা হয়। এতে আছে ভৌতিক আবেশ, আছে উন্মাদ করা টুইস্ট, ডেড এন্ডস সহ নানান লোমহর্ষক বস্তু।

মূলত প্রেতাত্মাদের সাথে শান্তি চুক্তি করতেই এই বাড়ি নির্মাণ। এতে ভূত আছে কিনা জানিনা তবে এতে ঢুকলে পাওয়া যায় এক অন্যরকম আবেশ। শিহরিত হবার মত ঘটনা! এতে আছে ১৬০ টি রুম, ৪০ টি বেড রুম, ৩০ টি বাথ রুম, ১০,০০০ টি জানালা, ২,০০০টি সিঁড়ি, ৪৭ টি ফায়ার প্লেস। আছে এমন একটি জায়গা যেখানে ঢুকবেন এক দরজা দিয়ে আর বের হতে পারবেন ৩ দরজা দিয়ে কিন্তু এর ১টি দরজা আছে যেটি খুলে পা বাড়ালে সোজা আপনি গিয়ে পড়বেন ৮ ফুট নিচে কিচেনে! নিচের ছবিটি দেখুন সিঁড়ি লেগে গেছে সিলিংয়ের সাথে !! দেয়ালের উপর দরজা। খুলে পা বাড়ালেই মাটিতে পড়ে যাবেন !! জার্ক পুরো বাড়িতে মাত্র দু"জায়গায় আয়না রাখা হয়েছে কারণ ভূতেরা আয়নায় নিজেদের প্রতিচ্ছবি দেখলে নাকি ভয় পায়!!! এই বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীরা বলেন যে, রাতে নাকি তারা এখনো আওয়াজ পান কারা যেন কিছু নির্মান করছে !! ৬।

Prypiat city: উত্তর ইউক্রেনের এই শহরটি এখন ভূতের শহর হিসেবে পরিচিত। ৭০'এর দশকে সাবেক সোবিয়েত ইউনিয়নের Chernobyl Nuclear power plant এর সকল কর্মকর্তা আর এর বিজ্ঞানীদের পরিবারের লোকজনদের থাকার জন্য গড়ে উঠেছিল এই শহরটি । কিন্তু ১৯৮৬ সালে ঐতিহাসিক Chernobyl দূর্যোগের কারণে এই শহরটিকে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়। ঐ দূর্ঘটনায় পারমাণবিক চূল্লী থেকে তেজষ্ক্রিয় রশ্মি বের হয়ে চার-দিকে ছড়িয়ে পড়ায় এখান থেকে মানুষ জনকে সরিয়ে নেয়া হয়। শহরটি যেহেতু গড়ে উঠেছিলো চূল্লীতে কাজ করা লোকজনদের নিয়ে তাই এখানে তখন গড়ে উঠে একটি Pripyat amusement park ।

এটি উদ্ভোধন করার কথা ছিলো ১লা মে ১৯৮৬ মানে "মে দিবসে" । কিন্তু দূর্ঘটনার কারণে শহরটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা করায় নির্ধারিত তারিখের আগেই ২৭শে এপ্রিল এটি লোকজনদের শহর ছেড়ে চলে যাবার আগে কয়েক ঘন্টার জন্য খুলে দেয়া হয়। কিন্তু আজও সেখানে সেই উদ্ভোধনি অনুষ্ঠানের সাজ সজ্জা ওভাবেই পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। নিচে পরিত্যাক্ত হেলিপ্যাড !! পরিত্যাক্ত ট্রেন !! আর যেহেতু শহরটি চাকরিজীবীদের জন্য তাই এখানে নার্সারিও ছিল। আর এখন এসবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বাচ্চাদের ছোট ছোট পায়ের জুতো আর খেলনার পুতুল।

মজার কথা হলো প্রিপিয়েত শহর নিয়ে কিছু ভিডিও গেমস ও বের হয়েছে যেমন Call of Pripyat । খেলে দেখতে পারেন। সবাইকে ধন্যবাদ।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।