আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাপ কা বেটা!

স্বপ্ন গুলো সত্যি হবে কিনা জানি না কিন্তু তবুও স্বপ্ন দেখে যাই... বাপ কা বেটা বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। কথাটি কতটা খাটি সেটা আপনি আমাকে না দেখলে বুঝবেন না সেই সাথে বেটা কি বাপ আই মিন আমার আব্বাকেও দেখে ফেলতে হবে। ফাদার পাপা বাবা বা হাল আমলের আব্বুদের ভীরে তিনি আজও আমার আব্বা হয়ে বিদ্যামান। তাকে নিয়ে হুট করে লিখা শুরু করলেও এখন বেশ কঠিন বলেই মনে হচ্ছে । তার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট তার সরলতা আর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা আমাকে নিয়ে তার অগাধ বিশ্বাস।

আজ বাবা দিবসে অনেকেই বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারন করতে গিয়ে বাপের কাছে মার খাওয়ার বিভিন্ন বর্ণনা দিচ্ছেন। সত্য বলতে আমি আজ পর্যন্ত তার কাছে সোজা বাংলায় মাইর খায়নি এর প্রধান কারণ হতে পারে তার সহজ সরল উক্তি “আমার ছেলে সে, এমন কাজ সে করতেই পারে না” তদন্ত হোক কেন জানি তদন্তের ফলাফল কখনো নেগেটিভ আসেনি এর কারণ হইত তার ভাষায় আমার শরীরে বহমান তার ব্লাড অথবা বিরাট দুষ্টুমি করেও আমার ধরা ছোয়ার বাইরে থাকার কাপাসিটি একদিন আমায় উনি বললেন, “তুমি ভীষণ অগোছালো, এভাবে চললে তো কিছু হবে না” আমি মাথা নিচু করে বসে আছি। শার্টের বাটন লাগাতে লাগাতে হটাত আমার দিকে ঘুরে বললেন আমিও না ঠিক ঐরকমই ছিলাম, তোমার দাদী কে অনেক জালায়ছি! এই হলো আমার আব্বা। এখনো ভিশন স্মার্টলি চলাফেরা করেন। আমি মজা করে বলি ফিটফাট বাবু।

সব সময় ফুল স্লীভ শার্ট ইন করে পড়েন। জুতার মধ্যে মোজা থাকে, পকেটে একটা রুমাল মাস্ট থাকবেই। আর তার চুল কখনো এলোমেলো পাবেন না। এগুলো বলছি কারণ আমাকে সব সময় এগুলোর বিপরীতে পাওয়া যায় আমার শার্ট কখনোই ইন থাকে থাকে না, জুতায় মোজা পড়লে গরম লাগে, রুমাল গুলো আলমারিতেই শোভা পায় আর চুলের কথা বাদই দিলাম । প্রতি সপ্তাহেই স্টাইল চেঞ্জ হয় অনেক দূর থেকে দেখলে মনে হয় একটা ঝর বয়ে গেছে মাথার উপর দিয়ে।

এমনকি আমার খোচাখোচা দাড়ি নিয়েও তার সাথে আমার বিরোধ। আমার মতে হয়াট এভার আই এম, ইজ ইনসাইড মি! তার মতে তোমার উপরের ভূষণটা চাকচিক্য হতে হবে এমন কথা নেই তবে মার্জিত এবং রুচিশীল হতে হবে হবে নইলে ভিতরে তাকানো কেও জরুরি মনে করবে না। আমার পকেটে রুমাল আর চিরনীর অনুপস্থিতি উনার জন্য পেইন। সীমাহীন কাজ আর বিশৃঙ্খল লাইফের মধ্যেও তার মধ্যে একটা সুক্ষ ডিসিপ্লিন কাজ করে। তাকে রাতে ২-৩ ঘন্টার বেশি কখনই ঘুমাতে দেখিনি আবার গাড়িতে উঠলেই ঘুম।

একটু বিরতি পেলেই ইভেন ১০ মিনিট সময় পেলেও একটু ঘুমিয়ে নিবেন। পেশা সুত্রে তিনি ফার্মাসিস্ট, আগ্রহ সূত্রেও তাই। তার মতে সব রোগেরই মেডিসিন আছে ইভেন প্রেম রোগেরও নাকি মেডিসিন আছে! একবার আমার ইউনিট এর এর বৃদ্ধ আর্টিস্টের হুট করে বিপি হাই। আমি তাকে ছুটি দিয়ে দিলাম। উনি শোনার পর বললেন আমাকে ডাকলে না কেন একটা ইনজেকশন দিয়ে জাগিয়ে দিতাম, চিকিত্সা শাস্ত্র এখন অনেক উন্নত বুঝলে এবং এটাকে ব্যবহার করতে হবে।

আমার সব কিছুতেই উনি ইনভলব থাকতে চাইতেন সেইরকম আমিও আমার সব কাজ নিজে করতেই বেশি পছন্দ করি। উনার অনেক পরিচিতি, তার অগনিত ফ্যান। একবার ইন্ডিয়া থেকে যশোর বর্ডারে ঢুকেছি, বাসে করে বাসায় যাচ্ছি। বাংলাদেশের রাস্তার অবস্থা মাশাল্লাহ বলার কিছু নেই। যথারীতি আব্বার ফোন উনি আসতে পারেননি তাই আপসেট।

পৌছাতে পৌছাতে রাত হবে দেখে আরোও মুষড়ে পড়লেন। আমি বললাম নো প্রবলেম আমি আসছি তো। উনি বাসের নাম জিগ্গেস করলেন। বললাম, উনি বললেন কন্টাক্টর কে ফোন দাও, আমি কথা বলবো। যথারীতি দিলাম, কিছুক্ষণ কথা হলো ।

হটাত অন্ধকারে দেখি কন্টাক্টর এর মুখ ৬০ পাওয়ারের বাল্বের মত উজ্জল। কন্টাক্টর বলা শুরু করলো,"আমার প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিলো, আপনি বলবেন না"। আমি চুপ। তারপর উনি আমার পাশের পাবলিক কে উঠায় দিলেন তারপর পাশে বসে শুরু করলেন উনি কিভাবে আব্বার কাছ থেকে উপকৃত হয়েছিলেন, এই সেই। অতপর বললেন ভাইস্তা আমি আপনাকে আপনার বাসার কাছেই নামাই দিব।

বাস থেকে নেমে দেখি আব্বা সেই মনখোলা হাসি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি বললাম আগের চেয়ে মোটা হয়ে গেছ। উনি রীতিমত গম্ভীর হয়ে বললেন সব তোমার মায়ের দোস! বারবার বলি গরুর মাংস মাসে একদিন খাব । আমার সামনে রান্না করে আনবে না। কে শোনে কার কথা! নজরুল কে নিয়ে তার মধ্যে বাড়াবাড়ি দেখেছি. তার মতে কবি কাজী নজরুল বাংলা সাহিত্যের জন্য আল্লাহর একটি দান।

নজরুলের রচনা পড়ার জন্য মেধার দরকার এবং ওটা নিয়ে কাজ করার মত বেশি বাঙালি তুমি পাবে না। নজরুলের রচনা নিয়ে উনি ঘন্টার পর ঘন্টা বলতে পারেন। আমাকে মাঝে মধ্যেই বলেন নজরুলের রচনা নিয়ে কাজ করতে পার না। মনে রাখবে বাঙালিকে রোমান্টিক হতে প্রথম কিন্তু ওই একজনই শিখিয়েছে। চেয়োনা সুনয়না আর চেয়োনা এই নজর পানে..বলে একটু গেয়ে উঠতেন আবার।

আমি বলতাম তোমার কবি তো পিউর নাস্তিক ছিলেন। উনি বলতেন মানুষকে বিচার কর তার কাজ দিয়ে ধর্ম দিয়ে নয় । আমার নামাজ আমার সৃষ্টিকর্তার জন্য বেহেস্ত পাওয়ার লোভে নয়। তাকে যখন নামাজে দেখতাম মনটা খুব ভালো হয়ে যেত। অসম্ভব যত্ন নিয়ে ইবাদত করেন।

আরবি পড়তে পারেন না এটা নিয়ে তার একটা আফসোস কাজ করে তবে সেই আফসোস তিনি বাংলা অনুবাদ দিয়ে পুষিয়ে নিতেন। স্কুল লাইফ এ আমার লেখালেখির বাতিক ছিল। পরবর্তিতে সেখানে জায়গা করে নেয় ফিল্মমেকিং। আমার মেকিং নিয়ে উনার তেমন আগ্রহ কখনই ছিল না তবে উনি চাইতেন আমি যেন নিয়মিত লিখি। আমার লাস্ট প্রডাকশন পদ্মা নদী নিয়ে নির্মিত প্রামান্যচিত্র জলের জলছবি উনি বাস স্টপে বসে দেখছেন।

একটু পর আমি কলকাতার উদ্দেশে বাসে উঠব। কানে হেডফোন লাগিয়ে দিলাম। উনি ছবি দেখা শেষ করলেন। একটু পর বললেন ক্রেডিট লিস্টের সবাই কি তোমার পরিচিত?? আমি বললাম হুম। ছবি ভালো হয়েছে, দেখো সবকিছু দেখে শুনে ভেবে আগাও ।

তারপর আবার নিরাবতা। এই হলো আমার আব্বা। আমার আইডল। তাকে বোঝা অতটাই সহজ যতটা কঠিন। উপন্যাসে তার প্রিয় কারেক্টার হিমু।

তাকে মাঝে মধ্যে আমার হিমুর মতই রহস্যময় মনে হয়। বি . দ্র : শুনলাম আব্বা অন্য একজনের সাহায্য নিয়ে ফেসবুকে একটা আই ডি খুলেছেন । তবে উনি খুব একটা সময় পাচ্ছেন না বসার উনি নিয়মিত বসলে আমার যে কি হবে আহসিফ খান পাঞ্জাব,জালান্ধার ১৬/৬/২০১৩। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।