পুনরায় জ্বলিল ভাইকে নিয়ে একটা পোস্টের কাজ হাতে নিয়েছি... আই উইল বি ভ্যাক... ইয়ো...
সবাই কে আবারও স্বাগতম। আপনারা হয়ত সবাই এই কয়দিন সবকটি টিভি চ্যানেলে ঈদ ইন্টারভিউ দেখতে দেখতে অস্থির হয়ে গিয়েছেন? তবুও আমাদের রিফুটিভির ইন্টারভিউ আপনার অবশ্যই দেখা উচিত কারন আমাদের শো এর স্পন্সর হল সত্যের জুস স্রুটিকা। তাই আমরা আজকে আসলেই জানব ঈদ মৌসুমে কে কি ভাবছেন। এইবার লম্বা ভুমিকা পড়া বাদ দেন, ডাইরেক্ট পোস্টে আসেন...
প্রথমেই আমরা এসেছি বিশাল এক মার্কেটের সামনে, দেখা যাচ্ছে অনেক পাবলিক ঘোরাঘুরি করছে। আহা! কি সুন্দর সুন্দর পাবলিক! চলুন কথা না বাড়িয়ে ইন্টারভিউ শুরু করি...
প্রথমেই আমরা পেয়েছি এক আপুকে (মানে খুঁজে নিয়েছি আরকি )
আচ্ছা আপু এইবার ঈদ এ কি কি কিনলেন?
"না ভাইয়া জানো এইবার না তেমন কিছুই কিনি নাই, তোমাদের দুলাভাইটা না অনেক পচা।
এতো করে বললাম, খালি মাত্র দুইটা সাড়ি ছাড়া কিছুই দিলো না। "
আচ্ছা আপু, অনেক ভগরভগর করেছেন, এই নেন স্রুটিকা খান... খেয়ে কথাগুলা আবার বলেন
"না ভাইয়া, ইয়ে মানে আসলেই তেমন কিছু কিনি নাই, তোমাদের দুলাভাই আসলেই অনেক কিপটা। এত মাইরধর, খামচাখামচি করলাম, তার পরেও প্রতি দোকান থেকে মাত্র ২টা করে সাড়ি কিনে দিতে রাজি হয়েছে। "
ও বুঝছি, এইখানে আর কিছুই করার নাই। যাই ইন্টার্ভিউয়ের জন্য অন্য পাবলিক খুজি।
আহা! আজকে এখানে এত আপু কেনু? এইযে এখানে আরেকজন আপুকে পেয়েছি, ইনি মনে হয় সিঙ্গেল, তাই আসে পাসে গুন্ডা টাইপের কাওকে দেখতে পাচ্ছি না যাই আপুর ইন্টারভিউ নিয়ে আসি।
আপু কেমন আছেন? শপিং কেমন হল?
"আপনি কে ভাইয়া?"
ইয়ে, মানে আমি ভাইয়া না, আমি সাংবাদিক। আপনার শপিং কেমন হল ইন্টার্ভিউ নিতে এসেছি।
"ভালই হয়েছে, অনেক অনেক শপিং করেছি। আব্বু এইবার আমাকে অনেক কিছু কিনে দিয়েছে।
"
হি হি, সিউর হওয়া গেলু যে ইনি আসলেই সিঙ্গেল। বাই দ্যা ওয়ে, আপনার আব্বু এত কিছু কিনে দিতে রাজি হল?
"রাজি হবে না আবার, আমি এই কয়েক সপ্তাহ আব্বুকে এত মজার মজার খাবার বানিয়ে খাইয়েছি আব্বু রাজি না হয়ে যাবে কোথায়? আব্বু আমাকে প্রতিটা খাবারের জন্য এক সেট করে জামা দিতে রাজি হয়েছে। "
তাই নাকি। ভাল ভাল। আমাদের ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
এই নেন আমাদের স্পন্সর স্রুটিকা জুস খান।
ঢক ঢক ঢক...
"ইয়ে মানে হয়েছে কি আমার খাবারগুলো এতই অখাদ্য ছিল আব্বুকে জোর করে ধরেও খাওয়াতে পারি নি, শেষে আব্বু প্রতিটা খাবার না বানানোর শর্তে এক সেট করে জামা দিতে রাজি হয়েছে। "
তাই নাকি! বাপরে! বাইচা গেছি! এই মেয়ের আসে পাশে থাকন যাইব না। আমি যাই অন্য লোক খুজি।
আর আপু টাপুর পাল্লায় পড়া যাবে না।
এইত্ত পাওয়া গেছে একখান গুলুগুলু বাবুকে। দেখি বাবুকে একটু আদল কলে আসি, চামে ইন্টারভিউও হবে।
এইযে গুলুগুলু বাবু, তুলুতুলু পিচ্চি, কেমন আছো? কি কি কিনেছ?
"আমি পিচ্চি না, আমারো একখান নাম আছে, আমার নাম মিস্টার আয়নাল জয়নাল "
ওরে বাপ, এইবারের মত মাফ করে দেন, মিস্টার জয়নাল। এইবার বলেন আপনার শপিং কতদুর?
"কিসের আর শপিং? আমাল আম্মু আমাকে পচন্দ কলে না, আমাকে না দিয়ে সব কিচু আমার পচা বোনকে কিনে দেয়, ভ্যাআআআআ........."
না না, এগুলা ঠিক না, ছেলে মেয়ে সমান অধিকার দেওয়া উচিত। যাই হোক কোনও বিসয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই নাও তোমার পুরস্কার স্রুটিকা জুস।
ঢক ঢক ঢক...
"আঙ্কেল, আমাল আম্মু সবকিছু আমাল বোনকে কিনে দেয়, না কিনে দিয়ে যাবে কই? আমি অর সাথে মারামারি করতে করতে খালি ওর সব জামাকাপড় ছিড়ে ফেলি, আর জুস আর সস ঢেলে ওর জামায় ডিজাইন করে দেই। হি হি... "
বাপরে বাচ্চারাও এখন কাহিনি শিখে জাচ্ছে, যাই হোক আমরা পরবর্তী লোক খুজি। মলের ভিতর অনেক ঘুরাঘুরি হল, এবার বাইরে থেকে ঘুরে আসি, কেননা কবি বলেছেন “ দেখা হয়নি চক্ষু মেলিয়া, মল হতে দুপা বাইরে ফেলিয়া...”
দর্শক, আমরা এখন শপিং মলের বাইরে, মুক্ত বাতাস নামক ধুলাবালিজুক্ত বাতাস খাচ্ছি। আমার সামনে দেখতে পাচ্ছি একজন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে নিরাপদ নিরাপদ করে চিল্লাছেন।
নিশ্চয় ইনি একজন ব্লগার, কেননা আমার গুরু বলে গিয়েছেন, যাদেরকে সেইফ, ওয়াচ, লুল, গদাম, ফিফা, সিন্ডিকেট ইত্যাদি বলে লাফালাফি করতে দেখিবা তাদের অধিকাংশেরই ব্লগার হবার সম্ভাবনা শতভাগ।
সুতরাং আসুন আমরা ঘটনা জেনে আসি।
ভাই আপনার কি হয়েছে? কিসের থেকে নিরাপদ হয়েছেন?
"ভাই আমি ঈদের খুশি আজই পেয়ে গেছি। আমার একমাত্র নিক আজ সেইফ হয়েছে আমি অনেক খুশি। "
তাই নাকি। আহা বেশ বেশ! নেন এই আনন্দে স্রুটিকা জুস খান।
"ভ্যাআআআআ ভ্যাআআ... "
ভাই আপনার কি হইল? এত সুন্দর জুস খেয়ে কাঁদছেন কেন?
"কাঁদবো না কেন? এইটা আমার একমাত্র নিক না, আমার সব মিলিয়ে ২৫টা মতন নিক আছে, যার মধ্যে কয়েকটা দিয়ে নিয়মিত মডুদের গালিগালাজও করি। তার পরেও আমার নিক সেফ হয়েছে। মডুদের এই রকম উদারতা দেখে আমার কান্না আসছে। উনারা কত ভাল, আমি কত পচা! ভ্যাআআআ "
দর্শকবৃন্দ উনি অতিরিক্ত সেন্টিমেন্টাল হয়ে গিয়েছেন। চলেন আমরা অন্যখানে যাই।
আসে পাসে ঘুরাঘুরি না করে আমরা এখন এক লাফে চলে এসেছি বাস টার্মিনাল। কারন ঈদের ইন্টারভিউতে বাস রিলেটেড ডায়লগ না থাকলে পাবলিক খাবে না।
যাইহোক আমরা দেখতে পাচ্ছি এখানে টিকিটের জন্য বিশাল লাইন। কাউন্টার ম্যান ভীষণ ব্যস্ত। তার পরেও লাইন ঠেলে ঠুলে চলে এসেছি তার কাছে।
আসুন তার ইন্টার্ভিউ নেই...
জনাব, কেমুন আছেন? বেচাকেনা কেমুন হচ্ছে?
"বেচাকেনা আর হচ্ছে কই ভাইজান? সব টিকেট ত বিক্রি শেষ। এখন যারা এসেছে কাওকে টিকেট দিতে পারছি না কারন সব সিটে উপ্রে মানুষ বসে পড়েছে। "
তাই নাকি! আহা আহা! তাহলে কি আর করা? সিট ফাকা না থাকলে ত আর জোর করে টিকেট দেওয়া জায় না।
তাহলে আপনারা কাউন্টার বন্ধ করে বাসায় গিয়ে ঘুমাচ্ছেন না কেন?
"আরে ভাই বাড়ি গেলে জারা স্পেশাল ভাবে টিকেট কাটতে চায় তারা কিভাবে টিকেট পাবে?"
অ্যাঁ! আপনিই না কেবল বললেন কোনও সিট ফাকা নাই!
"ইয়ে মানে..."
মানে মানে কম করেন, নেন জুস খেয়ে গলা সাফ করেন।
"আসলে হইয়েসে কি, সিট নেই তাতো বলিনি, বলেচি সব সিটের উপ্রে মানুষ বইসে আছে।
ইডার মানে হইল সব টিকেট আমি নিজেই কাইটে আমার সিটের নিচে রাইখে তার উপরে আমি নিজেই বইসে আছি। "
ও বুঝলাম, এইভাবেই আপনারা বাড়িগামী মানুষের ইচ্ছার উপরে বসে থেকে নিজেদের পকেট ভরেন। এইখানে আর থাকার রুচি নাই, বাইরে যাই...
এইবার কাঁচাবাজারে যাই, যেহেতু ইন্টারভিউ শেষে আধা কেজি লবন আর ধনেপাতা না কিনে নিয়ে গেলে আম্মা বাসায় ঢুকতে দিবেনা তাই এক ঢিলে দুই পাখি মেরে আসি।
এখন আমরা টাওরান বাজারে অবস্থান করছি। আসুন কথা বলি এক বিক্রেতার সাথে...
মাম্মু ব্যাচাবিক্রি কেমুন? ঈদ উপলক্ষে সবাই ত প্যাকেজ দেয় আপনারা কোনও প্যাকেজ দিলেন না? আর বারে বারে ইন্টারভিউ নেওয়ার টাইম নাই, পোস্ট লম্বা হয়ে যাচ্ছে, আগে এই স্রুটিকা জুস খেয়ে নিয়ে একবারে কথা সুরু করেন।
"আমরা এইবার সব ক্রয়ের সাথে ৫০% ফ্রি অফার দিছি। জেমুনঃ এক কেজি চালের সাথে আধা কেজি পাথর কুচি ফ্রি, এক কেজি মাছের সাথে আধা কেজি ফরমালিন ফ্রি, এক কেজি গুঁড়া মশলার সাথে আধা কেজি গুঁড়া ইট ফ্রি। এখন বলেন আপনারে কি দিব?"
মারছে! এইরকম জুস ইউজ কইরা ইন্টারভিউ নিলে ত দেখি ঈদের কাঁচাবাজারই করা হবে না! থাক বাইরে যাই...
এখন আমরা দাঁড়াইয়া আছি ষাটরাস্তার মোড়ে, এবং দেখতে পাচ্ছি একজন উন্মাদ আইমিন পাগুল মোড়ের মাঝখানে দাড়িয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোল করছে, যাই উনার ইন্টারভিউ নিয়ে আসি, একটু বিনুদুন পাওয়া যাবে...
আচ্ছা মামু, একটু পরে ট্রাফিক কন্ট্রোল করো, আগে একটু ইন্টারভিউ দেও...
"এখন ইন্টারভিউ দিতে পারুম না, এইপথ দিয়া একটু পরে রকেট জাইব, তার আগেই রোড ক্লিয়ার করতে হইব..."
ব্যাপার না রকেট পরে গেলেও অসুবিধা না,আগে ঈদ উপলক্ষে একটা ইন্টারভিউ দিয়ে নাও...
"যদিও আমি হোয়াইট হাউজ ছাড়া ভাসন দেই না তবে তুই এত করে বললি তাই একটু ভাষণ দেই। মানুষ ঈদে আজ চাঁদ ভাজি খেতে চায়, কিন্তু সমাজের অর্থনীতির যে বেহাল অবস্থা! এই বেহাল ইকোনোমিক লেভেল আজ মূল্যস্ফীতির কালো ছায়ায় ঢেকে আছে। এ বিসয়ে সমাজ বিজ্ঞানী জনাব ইবনে বতুতা বলেছেন..."
মারছে রে! কাক্কু থামেন, এইলন আপনার পুরস্কার, স্রুটিকা খান।
ঢক ঢক...
"মানুষ ঈদে আজ চাঁদ ভাজি খেতে চায়, কিন্তু সমাজের অর্থনীতির যে বেহাল অবস্থা! এই বেহাল ইকোনোমিক লেভেল আজ মূল্যস্ফীতির কালো ছায়ায় ঢেকে আছে। এ বিসয়ে সমাজ বিজ্ঞানী জনাব ইবনে বতুতা বলেছেন..."
আরে কাহিনি কি! স্রুটিকা খেয়েও উনার কোনও চেঞ্জ হইল না! তার মানে একমাত্র উনিই সত্যি কথা বললেন! সারা শহরে সুধু মাত্র পাগল ছাড়া সবাইরে জুস দিয়ে সত্যি কথা বলাইতে গেলে তো বিপদ। ঝাতির কি হবে! আসুন এই ঈদে সবাই জুস ছাড়া সত্যি কথা বলার প্রাকটিস করি, এই আশাতেই শেষ করছি আজকের ইন্টারভিউ।
"অই! আমি মিথ্যা কই না মানে!! আমার মত মিথ্যাবাদি সারা মঙ্গলগ্রহে আছে নাকি! খারা তঁরে আমি খাইচি! কে কই আঁচিস, আমার মুলিবাঁশটা দিয়ে যা তো... !!"
ওরে মাগো! কেউ আমারে বাঁচান, ইন্টারভিউ স্যাশ! আমি দৌড় লাগাই... আপনারা প্লাস দিয়ে আমার পিছন পিছন দৌড় দেন...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।