আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুখ-সমাপ্তি

:আসসালামু আলাইকুম মুস্তাক কি তাকে প্রথমে দেখে নাই? না দেখার কিস্যু নাই, দোহারা গড়নের ছিপছিপে দেহ, অতিরিক্ত ফ্যাকাসে ফর্সা চামড়া, আর নমনীয় মুখশ্রী। ছেলেদের মধ্যে গুঁতাগুঁতি আর ইশারার খেলা শুরু হল। খারাপ ইশারা... ভালো ইশারা? বয়সের দোষ! কিন্তু আসলেই মুস্তাক এতকিছু খেয়াল করে নাই, সে ভালো ছাত্র। সামনে এস এস সি পরীক্ষা, মেয়ে দেখে টাইম নষ্ট করার মত সময় কই? স্যারের প্রাইভেটে কয়েক মাসের জন্য পড়তে এসেছে, যতটা পারে আদায় করে নিবে। খারাপ ছেলেদের কাজ খারাপ ছেলেরা করে যায়, মুস্তাক এইসবে নাই।

দিন যায়, একমাস যায়। আস্তে আস্তে ব্যস্ততা কমে। পড়া শেষে স্যারের বাসায় গপ মারার কিছুটা সময় পাওয়া যায়। পড়া হয়ে গেছে, টেনশনও কমে। তখনই সে লক্ষ্য করল মেয়েটাকে।

ধুর, নাথিং স্পেশাল । আর দশটা গড়পতা মেয়ের মতই একজন। আগ্রহ হারিয়ে গেল মুস্তাকের। একদিন পড়ার টেবিলে, রাত দশটায়ঃ ক্রিং ক্রিং! - হ্যালো? - হ্যালো আমি হিনা। - কে? - হিনা, আমি স্যারের কোচিংএ তোমার সাথে পড়ি।

- ও আচ্ছা, নাম্বার কই পাইলা? - স্যারের কাছে চাইসিলাম, উনি দিলেন। আসলে আমার পড়ায় অনেক গ্যাপ পড়ে গ্যাসে। উনি বললেন ভালো কারও সাথে যুক্তি করে পড়লে পড়া আগাবে। - ও ভালো করসো। - আচ্ছা আমাকে কয়েকটা অব্জেকটিভের আনসার বল... আরও একমাস গেল।

মুস্তাক হিনাকে আরেকটু ভালো করে জানল। ভালো মেয়ে। ধার্মিক মেয়ে। বেশী বোকা মেয়ে। আর দশটা মেয়ের মত চাল্লু না।

আস্তে আস্তে মেয়েটার জন্য সহানুভূতি জাগে তার। তুমি থেকে সম্পর্ক তুই তে নেমে আসে। নানা কথা হয়। পড়ার কথা। আজাইরা কথা।

পরীক্ষার কথা। উদ্ভট কথা। পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। যোগাযোগটা বন্ধ হয়না। পরীক্ষা কেমন হইসে, কোন প্রশ্নটা আসবে... এইসব কথা চলতে থাকে।

পরীক্ষা শেষ হয়। তারা এখন বেস্টফ্রেন্ড। অন্য বন্ধুদের ধন্দা লাগে। মাইয়া তোর বেস্ট ফ্রেন্ড? হাসাহাসি হয়। ক্ষেপানো হয়।

মুস্তাকের কিছু যায় আসেনা। এইটা ফ্রেন্ডশিপ, এতো গা করার কি আছে? একদিন সু সংবাদ এল। হিনা পুরা ফ্যামিলিসহ ডিভি পেয়েছে। চলে যাবে অ্যামেরিকা। জীবন বদলে যাবে তার।

মুস্তাকও আনন্দিত। তার বেস্ট ফ্রেন্ডের ভাগ্য এইভাবে মোড় নিয়েছে। তার খুশিও বাঁধ মানেনা। রেসালট আউট হয়। মুস্তাক জিপিএ ফাইভ, হিনা ফোর পয়েন্ট এইট এইট।

ভালো কলেজে ভর্তি হয় মুস্তাক। ক্লাস চলে দিনে। রাতে হিনার সাথে আড্ডা হয় শয়তানের যন্ত্রে, টেলিফোনে। হিনা কোন কলেজে ভর্তি হয় নাই। মুস্তাকের কাছে গল্প শুনে সে।

ক্যাম্পাসের গল্প। সুন্দরী মেয়ের গল্প। পাঙ্ক পোলাপাইনের গল্প। দু-এক মাস যায়। রমযান মাস।

সাহরি খেয়ে শুয়ে পড়েছে মুস্তাক। ক্রিং ক্রিং - হিনা? - মুস্তাক আমি এয়ারপোর্টে। - ও আজকে যাবিগা? - হুম... একটু পরে রিপোর্টিং। - যাক শেষ পর্যন্ত যাইতেসিস। ভালো থাকিস।

- আল্লাহ্‌ হাফিয। কয়েকদিন কিছু বুঝা গেলো না। মাসখানেক পর মুস্তাক টের পেল তার কি যেন ছিঁড়ে চলে গেছে। এইটা বন্ধু হারানোর হাহাকার না, আরও তীব্র কিছু। সে ভালবেসেছিলো সহজ সরল মেয়েটাকে, অনিচ্ছাকৃতভাবে, অবচেতনভাবে, আনমনেই।

দিন যায়, মাস যায়। কদাচিৎ হিনা পরদেশ থেকে ফোন করে। মুস্তাকের হাহাকার কি তাতে কমে যায়? না! বছর ঘুরে। হিনা আর মুস্তাকের সম্পর্ক আগের মত থাকেনা। বিদেশের সংক্রমনশীল পরিবেশ মেয়েটার সরল প্রকৃতিকে আক্রমণ করেছে।

এতো চেনা মেয়েটা কেমন যেন অচেনা হয়ে যায় মুস্তাকের। অস্বস্তি লাগে কথা বলতে। এইচ এস সি পরীক্ষা এগিয়ে আসে। এইবার আর রাতে কেউ ফোন করে মোলায়েম গলায় ফোনে পড়ায় হেল্প চায়না। পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয় মুস্তাক।

আর গা করে না এইসব চিন্তা-ভাবনায়। এগুলোর কোন সুখ-সমাপ্তি থাকেনা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।