আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি এখন হেটে যাতায়াত করি

আমার বাসা বনশ্রী। আমাকে প্রতি অফিস ডেতে হাইকোর্টে যেতে হয়। আমার বাসার সামনে থেকে তরঙ্গ প্লাস বাসে মৎস্য ভবন নামা যায়। বাসটি বনশ্রী থেকে ছেড়ে রামপুরা টিভি স্টেশন-মালিবাগ রেলগেট-মৌচাক-শান্তিনগর-কাকরাইল হয়ে মৎস্য ভবন আসে। এভাবে আসতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা লাগে।

কোন কোন দিন বাসের জন্য আধা ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তারপর পুরো পথ কোনমতে দাড়িয়ে আসতে হয় বাসে। কখনো কখনো একপায়ে দাড়ানোরও জায়গা পাওয়া যায়না। এভাবে যাওয়া আসায় কুলিয়ে উঠতে না পেরে বিকল্প উপায় নিয়ে ভাবছিলাম। কি করা যায়।

শেষে একদিন বনশ্রী থেকে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে করে সিপাহীবাগ আসলাম ৫ টাকা দিয়ে। সিপাহী বাগ থেকে আবার ৫ টাকা দিয়ে খিলগাও রেলগেট আসলাম। খিলগাও রেলগেট থেকে কোন উপায়ান্ত না দেখে সোজা হাটা শুরু করলাম। রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং মতিঝিল বয়েজস্কুলের মধ্যকার রাস্তা দিয়ে শান্তিনগর মোড়-কাকরাইল-এজি অফিসের পাশ দিয়ে মৎস্যভবনের সামনে দিয়ে হাইকোর্টে পৌছলাম। খিলগাও থেকে হাইকোর্ট হেটে আসতে ৫০ মিনিট লাগল।

(জোরে হাটলে ৪০ মিনিট লাগে) বাসা থেকে এভাবে ইজিবাইক এবং হেটে হাইকোর্টে আসতে মোট সোয়অ এক ঘন্টা থেকে দেড় ঘন্টা লাগল। এ পথ আবিষ্কারের পর থেকে আমি গত প্রায় এক বছর ধরে এভাবে যাতায়াত করছি। কোন কোন দিন ইজিবাইকও যদি নাই পাই সোজা বাসা থেকে হেটে হাইকোর্টে চলে আসি দেড়ঘন্টায়। হেটে গেলে আমি ঘড়ি ধরে পৌছতে পারি। কিন্তু বাসে গেলে পারিনা।

তাছাড়া বাসে আমার একঘন্টা বেশি লাগত। দাড়িয়ে যেতে কষ্ট হত। কিন্তু হেটে যাতায়াতের ফলে এখন আমার সময় অর্থ দুই বাঁচে। মন মেজাজও ভাল থাকে। বাসে যানজটে আটকে থাকলে মনমেজাজ তিরিক্কি হয়ে যেত।

বিকালে কোর্ট থেকে মতিঝিল আমার কর্মস্থলে আসি। রাতে কাজ শেষে আবার মতিঝিল থেকে খিলগাও পর্যন্ত হেটে যাই। সেখান থেকে কখনো হেটে কখনো ইজিবাইকে বনশ্রী পর্যন্ত যাই। রাতে যখন হেটে বাসায় যাই তখন জোরে হাটি যাতে ঘাম ঝরে। এভাবে গত প্রায় এক বছর হেটে যাতায়াতের ফলে আমার পেটের মেদ কমে গেছে।

চেহারা সুরতও আগের চেয়ে ফ্রেশ অনুভব করছি। আগে মাঝে মাঝে কপালে এবং নাকে দুয়েকটি ব্রন উঠত এখন তাও চলে গেছে। হেটে যাতায়াতের আগে আমাকে মাঝে মাঝে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দৌড়াতে হত। এখন আর তার দরকার নেই। তবে হেটে যাতায়াতের কিছু অসুবিধা আছে।

যেমন হেটে যখন কোর্টে পৌছি তখন ঘামে আমার গায়ের জামা ভিজে যায়। কোর্টে পৌছার পর সেটি খুলে আমাকে নতুন একটি জামা পড়তে হয়। রাতে বাসায় ফেরার পর বেশি ঘামলে হট বাথ নিতে হয় অথবা গামছা দিয়ে গা মুছতে হয়। তবে আমার এটি অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আপনারাও চাইলে আমার সাথে যোগ দিতে পারেন।

ঘাম ঝরিয়ে হাটুন। সুস্থ থাকুন। যতটা সম্ভব হাটাকে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করুন। আমি গত এক বছরে কয়বার ঢাকায় বাসে চড়েছি তা আমার সঠিক মনে নেই। তিন চার বার হবে বেশি হলে।

মাঝখানে আমি একটি সাইকেল জোগাড় করেছিলাম আমার বন্ধু সৈয়দ সাইফুল আলম শোভনের কাছ থেকে। তবে সাইকেল চালানো খুব ঝুকিপূর্ণ মনে হল । কারণ ঢাকার রাস্তায় কোন শৃঙ্খলা নেই। পরিবেশ নেই। দুই তিনবার দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গেছি।

তা না হলে সাইকেল চালিয়ে যাতায়ত করতে পারলে খুব ভাল হত। আমার বন্ধু বলেছে সবাই মিলে চালালে পরিবেশ তৈরি হবে। সেজন্য চালাতে হবে। আমিও আবার চালাব মাঝে মাঝে। সাইকেলা একটু সারতে হবে।

সময়ের অভাবে পারছিনা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।