আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

A journey by boat to ITALY.........(PART-2)-রিপোস্ট

বেলা ১৩ঃ২৫ এর দিকে তারা শ্রীলংকা পৌছাল। তাদের কে নিয়ে এজেন্সির ওই লোকটা গেলো ৭-৮ কিঃমিঃ দূরে কিছু কোয়ার্টার এ। এক এক রুম এ ৫ জন করে থাকার ব্যবস্তা। খাওয়া দাওয়ার দায়িত্ব তাদের। এই প্রথম সে সবাইকে ভালো করে দেখার সুযোগ পেল।

সবাই সবার সাথে পরিচিত হচ্চিল। কেউ এসেছে জায়গা বিক্রি করে,কেউ এসেছে ধার নিএ,আর কেউ এসেছে অনেক বড় কোন স্বপ্ন নিয়ে। তবে সে একটা জিনিস বুঝতে পারলো যে,যারা এসেছে তারা সবাই মোটামুটি জীবন যুদ্ধে পোড় খাওয়া। টোটাল ২৬ জন লোক। ১ দিন পর তাদের সাথে যোগ দিলো আরও ৩ জন।

তারা সম্ভবত ইন্ডিয়ার লোক। পরিচয় জানা যায়নি। ২ দিন পর তাদের সবাই কে বলল কোয়ার্টার চেঞ্জ হবে,সবাই যাতে যার যার জিনিস পত্র গুছিয়ে নেয়। কিছু লোক এগিয়ে গেলো সমস্যা কি জানার জন্য। এর জবাবে তারা বলল যে,ক্লিয়ারেন্স নিতে একটু জামেলা হচ্চে,তবে টেনশেনের কোন কারন নেই।

এক সপ্তাহের মধ্যে সবাই রওয়ানা দিবে। আবার নতুন ঘর,নতুন ঠিকানার উদ্দেশে যাত্রা শুরু। কোয়ার্টারটা ছেঁড়ে যেতে তার খারাপ লাগছে। এই ঘর টাকে তার আপন মনে হচ্ছিল। তারা সবাই কে একটা বাসে উঠতে বল্ল।

বাসটি আনুমানিক দেড় ঘণ্টা চলার পর তারা একটি পাহাড়ি জনপদে এসে নামলো। তাদের সবাই কে দূরে অবস্থিত একটি ঘরের উদ্দেশে যেতে বলল। একটা ব্যাপার ওর কাছে আশ্চর্য লাগছে যে,কেউ কারো সাথে তেমন কোন কথা বলছে না,সবাই কেমন যেন যার যার চিন্তায় সে মগ্ন। মাঝারি আকৃতির ২ টা রুম। প্রতিটাতে মোটামুটি ৭ জন করে থাকা জায়।

আর সে ২ টা রুমে তারা বলল সবাই কে থাকতে। মৃদু হৈচৈ শুনা গেলো। কেয়ারটেকার দেখতে কালো মতন,বডি বিলডার, সম্ভবত শ্রীলঙ্কান সবাই কে চুপ করিয়ে দিল। এবং সবাই কে এমন ভাবে শাসাল যে,তারা যেন নিজের নিঃশ্বাস এর শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ না শুনে। তবে মাঝে মাঝে সে নিজেই রুমে এসে গল্প করত।

বলত,অমুক এখন ইটালিতে আমাকে চিটি দেয়,তমুক একন শত লক্ষ টাকার মালিক। আর তার গল্প শুনে সবাই ছেড়া কাথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখত। দিন যায়,কিন্তু যাওয়ার দিনটা আর আসে না। সবার মাঝেই চাপা উত্তেজনা। সপ্তম দিন একজন লোক এসে সবাইকে তাড়াহুড়ো করে ঘুম থেকে ডেকে বলল সবাই যেন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেয়।

তাদের যান রেডি আছে। যত দ্রুত সম্ভব রওয়ানা দিতে হবে। অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি পেয়ে সবাই খুব দ্রুত নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিলো। সেই বডি বিলডার লোকটি তাদের কে নিয়ে একটি ঘাটে এসে থামল। তারা দেখল ঘাটে বাঁধা একটা বড় ট্রলার।

তারা সবাইকে ওই ট্রলারে উঠার জন্য বলল। এবার শুরু হল রীতিমত হৈচৈ। কেউ কেউ ইতিমধ্যে ট্রলারে উঠে গেছেন,আর কেউ কেউ বলছেন তারা জান গেলেও ট্রলারে উঠবেন না। আমার বন্ধুটি পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছিলো। ওই কালো শ্রীলঙ্কান লোকটার কথা হচ্ছে যে এভাবে আগেও অনেকে ইটালি গেছে।

আর তাদের সাথে কি চুক্তি হয়েছে ,না হয়েছে তা তারা জানেনা। কারো ইচ্ছে হলে ট্রলারে উঠবে,আর ইচ্ছে না করলে উঠবে না। তবে কোনো টাকা ফেরত পাবে না এবং সে সাথে বেশি ঝামেলা করলে তা সে অনুযায়ী বেবস্থা নিবে। শেষ পর্যন্ত দেখা গেলো রঞ্জুসহ ২৫জন ট্রলারে উঠে বসলো। আর কারো মনে কি ছিল জানিনা তবে রঞ্জুর পক্ষে এই অবস্থাই এই মুখ নিয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার চাইতে মরে যাওয়া অনেক ভালো।

সে তো একন আর মরছে না। বরং একটা চান্স নিয়ে দেখা যাক। ট্রলার যখন ছেঁড়ে দিল,সে একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করলো। যারা ট্রলারে উঠে নাই তারা ঘাটে দাড়িয়ে ছিল এবং জকন ট্রলার ছেড়ে দিলো তখন সবাই ট্রলার এর পিছু পিছু আসতে লাগলো। আসলে তারা চাচ্ছে না জীবন বাজী নিয়ে ট্রলার এ উঠতে আবার এও চাচ্ছে না যে তাদের কে ফেলে ট্রলারকে চলে যেতে দিতে।

এ যেন না পারি গিলিতে,না পারি ফেলিতে। ৪২ বছরের এক লোক ট্রলার ছাড়তেই হু হু করে কেঁদে দিল। দুর থেকে রঞ্জুর এক পলকের জন্য মনে হল তার বাবা কাদচে। তার বাবা এখানে থাকলে টিক এই ভাবে কাদত। বাবার কথা খুব মনে পরছে।

ট্রলার চলতে শুরু করার পর রঞ্জুর এক অদ্ভুদ অনুভুতি হল। ঠিক যেমন বাংলাদেশ ছেড়ে আসার সময় মনে হয়েছিল। জীবন তাকে আবার কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। জানেনা তার কপালে কি আছে। কোথায় তার নিয়তি আর কি তার পরিনাম।

(চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।