আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

|| মুচলেকানামা || (ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রসঙ্গ)

নিপুণ লেখনীর শানিত গর্জন / লিখব আজ নিপুণ কথন সারাদেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে । এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো কাজ । কিন্তু, এ কাজ করতে গিয়ে আমার একটি বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে, অনেকদিন ঘুরে শেষে মুচলেকার বিনিময়ে ভোটার আইডি কার্ড তথা জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পেয়েছি । আসুন কিছুটা বিস্তারিত জানিঃ ২০১০ সালে যখন হালনাগাদের কাজ হয়, আমি তখন তড়িঘড়ি করে নিজের এলাকায় অর্থাৎ ফরিদপুরে আসি নিজের একটা জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করতে । সে উদ্দেশ্যে স্থানীয় সারদা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিজের ছবিসহ যাবতীয় তথ্য প্রদান করি ।

জানানো হয় যে কাজ শেষ হলে যথাসময়ে কার্ড বাসায় প্রেরিত হবে । তারপর দু'টি বছর পার হয়ে গেলেও আইডি কার্ড আমার বাসায় আসেনি । এবার ঈদের ছুটিতে বাসায় এসে জানতে পারলাম আবার হালনাগাদের কাজ শুরু হয়েছে । আগামীকাল ১৫ তারিখ শেষ কার্যদিবস, তাই খুব সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গে আজই রওনা দিলাম আইডি কার্ডের সন্ধানে । সারদা সুন্দরী হয়ে উপজেলা অফিসে গেলাম, অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম অফিসে কেবল একজন পিওন ছাড়া অফিসে আর কেউ নেই! উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার রুমে তালা ।

পিওন কিছুক্ষণ পর এসে পাশের রুমের তালা খুলল । আমি বললাম আইডি কার্ডের অবস্থা জানতে এসেছি, আগেরবারেরটা হয়েছে? নাকি নতুন করে সব করতে হবে? তিনি অনেকক্ষণ একাজ সেকাজ করে পরে আমার রসিদ চাইলেন । ২ থেকে আড়াই বছর আগের কথা, ওইটুকু রসিদ না থাকারই তো কথা । মানিব্যাগ চেক করে পেলাম না । বাসায় গিয়ে আবার খুঁজব ভাবছি এমন সময় পিওন আবার বলল, "তাইলে এক কাজ করেন ।

একটা দরখাস্ত লিখে এলাকার কমিশনারের সাইন নিয়া আসেন । তাইলে দেয়া যাবে । " আমি মনে মনে বাসায় খুঁজে না পেলে তাই করার সিদ্ধান্ত নিলাম । কিছুক্ষণ বসে থেকে সাইকেল নিয়ে চলে আসছি এমন সময় পিওনের ডাক । আবার উঠলাম দোতলায় ।

পিওন বসতে বলল- "বসেন । দেখি আপনার জন্য কি করা যায় । " আমার সন্দেহ হল- মুচলেকা (ঘুষ) কেস নাতো? যাহোক, বসে রইলাম । মহাব্যস্ত পিওন আরও কয়েকজনের সাথে কথা বলতে ও কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো । অনেকক্ষণ বসে থেকে অধৈর্য হয়ে আবার গেলাম পিওন সাহেবের (!!) কাছে ।

তিনি বিরক্ত হয়ে খ্যাঁক করে উঠলেন, বললেন- "আরেহ ভাই বসেন না । দেখেন না কাজ করতেছি? এত সহজেই হয়ে যায় নাকি এগুলা?" অনেক কষ্টে মেজাজটা ঠাণ্ডা রাখলাম । কিছুক্ষণ পরে পিওন সাহেব ফ্রি হয়ে আমাকে ডাকলেন । উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার আলমারি খুলে কতগুলা কার্ড বের করে আমার নাম ও পিতার নাম জানতে চাইলেন । আমি আমার নাম ও বাবার নাম বললাম ।

এটাও বলতে ভুললাম না যে নিচের তলার কৃষি অফিসে আমার বাবা দীর্ঘ ২৫ বছর চাকুরী করেছেন এবং মেয়র মহোদয় এবং কমিশনার মহোদয় আমাদের ভালোভাবেই পরিচিত । উনি বললেন, "ওসব আমি জানিনা, তেমন কাউকে চিনিও না । আপনি এক কাজ করেন তাদের কাছে যাওয়া লাগবেনা, আপনার কার্ড নিয়ে যান আর এই কাগজটা ফটোকপি করে এনে পূরণ করে জমা দেন, এটা পৌরসভায় জমা দেয়ার জন্য যে রিক্সা ভাড়া লাগে তা দিয়ে যান । " প্রথমে ভাবলাম ঘুষ দেবনা উল্টো তাকে কর্তৃপক্ষের হাতে ধরিয়ে দেবো । পরে ভাবলাম, কি দরকার শুধু শুধু ঝামেলায় যাওয়ার? এর হাত দিয়েই তো কার্ডটা তুলতে হবে ।

সবাই মেনে নিয়েছে আমি একা এর প্রতিবাদ করলে খারাপ বৈ ভালো কিছু হবে না । মাত্র ২০ টাকার জন্য এত ঝামেলা করে কে? উনি তো মাত্র ২০ টাকা নিচ্ছেন, আরও কত রাঘব বোয়াল যে হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দিচ্ছে, তার প্রতিবাদ কি আমরা করতে পারছি? দেশের যখন এই অবস্থা তখন নিজের নৈতিকতা আর আদর্শ ধরে রাখা দায় । টাকায় যেখানে সবকিছু হয় সেখানে আদর্শের মূল্য কোথায়? এই দেশকে আমি খুব ভালবাসি, একে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবোনা । আর এই দেশে থাকতে হলে এগুলো মেনে নিয়েই থাকতে হবে । আজ মনে প্রশ্ন জাগে বাবার মতো সৎ মানুষ কি আদৌ থাকতে পারবো? নাকি আমাকেও উপরের মহলের চাপে কিংবা অন্য কোথাও ঘুষ দিতে কিংবা এই বাজারে টিকে থাকতে নিজেকেও ঘুষ খেতে হবে? কিছুই জানিনা ।

দেখা যাক সময় কি বলে!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।