সকালে ঘুম থেকে উঠেই আধখোলা চোখে মোবাইলটা হাতে নিলাম। নম্বর লাগিয়ে কল দিতেই বুঝলাম ভুল হয়েছে। নম্বরটা ভুল হয়েছে। অচেনা নম্বর, অচেনা কেউ। তাই খুব বেশি কথার দরকার ছিল না।
কল যেহেতু গেলো তাই স্যরি বলে লাইনটা কেটে দেবো ভাবলাম।
হয়তো ভাগ্য ভালো বলে একটা মেয়ে রিসিভ করলো।
“হ্যালো। ’’
কী অপূর্ব শান্ত, অদ্ভুত মিষ্টি একটা কণ্ঠ।
“হ্যালো।
’’
আমি তন্ময় হয়ে ওর কণ্ঠ শুনছি। কথা বলতে ভুলেই গেছি যেন।
হঠাত করে লাইন কেটে দেওয়ায় সম্বিত ফিরে এল।
ওর মায়াময় কন্ঠের অদ্ভুত আকর্ষনে দ্বিতীয় বারের মত কল দিয়ে ফেললাম। সে বারেই ওর কন্ঠের প্রশংসা করেছিলাম আমি।
সেই প্রশংসা দিয়ে শুরু করে পরিচয় পর্ব। ওর নাম রুমা। থাকে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আধাকিলো পুর্বে চকবাজার নামের এক জায়গায়। পরিচয় থেকে শুরু করে এক পা দু পা করে আমাদের ফোনো সম্পর্কের বেড়ে ওঠা। কখনো সকালে ফোন তো কখনো দুপুরে ফোন।
আবার কখনো গভীর রাতে ফোন করে খুনসুটি। ওর দেওয়া কল রিসিভ না করলে নাকি কথাই বলবে না। ভালো লাগতো ওর ছোট ছোট খামখেয়ালি। এই ছোট ছোট ভালোলাগাগুলো জমাট বেঁধে কবে যে ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে টা বুঝতেই পারি নি। ভালোভাবে বুঝে ওঠার আগেই অনেক ভালোলাগার ভালোবাসা ছড়িয়ে গেল সমস্ত অস্তিত্বে।
না, অন্যদের মত বৃষ্টির জলে গা ভিজিয়ে দুই জনের একাকার হওয়া হয় নি। তবু ওর মিষ্টি কন্ঠে মন ভিজে যেত প্রতিদিনই। কাশফুলের সাদা মাথায় হাত বুলিয়ে ঘোরা হয়নি, শিশিরে ভেজা ঘাসে পা মাড়িয়ে হাতে হাত রেখে চলা হয়নি। তবু অস্পর্শ ভালোবাসায় সিক্ত হতাম প্রতিদিনই। প্রতিদিনই চাঁদের আলোয় হাত বুলিয়ে ছুয়ে দিতাম দু’জন দু’জনকে।
আর অন্ধকারকে আঁকড়ে ধরে বিনিময় করতাম হৃদয়ের উষ্ণতা।
ভালোই চলছিল। হঠাত একদিন কী মনে করে বলে ফেললাম, “চলো দেখা করি। ”
ও রাজি হয়ে গেলো। ঠিক হলো ১৪ই ফেব্রুয়ারি আমরা দেখা করবো।
এরপর শুধু প্রহর গোনা, কবে আসবে ১৪ই ফেবুয়ারী? এক একটি দিন যেত আর অপেক্ষা ও ব্যাকুলতা ততই বেড়ে যেত। উফ...এবার ১৪ই ফেব্রুয়ারী এত পরে আসছে কেন ?
প্রতিদিন ক্যালেন্ডারের দিকে চেয়ে চেয়ে তাড়াতাড়ি দিন যাবার প্রত্যাশা করি আর মনে মনে চলে না দেখা মানবীকে নিয়ে শত শত কল্পনা। ও বুঝি এমন হবে। না,না, বুঝি অমন হবে। আবার কখনো নিজেকে সাজিয়ে নেবার ভাবনাটাও খেলে যায়।
আচ্ছা, দেখা হলে প্রথমে কী বলবো? কীভাবে দাঁড়াবো?
এমন নানা রঙের কল্পনাগুলো জমাট বাঁধতে বাঁধতে এসে দাড়ালো ১৪ই ফেব্রুয়ারী।
এইদিন সকালে রুমা বলেছে, আমার নীল রং পছন্দ বলে ও নীল শাড়ি পড়ে আসবে। আর ঠাট্টা করে আমাকে পকেট ছাড়া পাঞ্জাবি পড়তে বলেছে!
কথা ছিল সকাল ১০ টায় দেখা হবে। আমি সকাল ৮.৩০ থেকে যথাস্থানে হাজির। হাতে একগুচ্ছ ফুল আর আলাদা করে যত্নে রাখা লাল টুকটুকে গোলাপ।
৯ টা । ৯.৩০ মিনিট। উফ...১০টা বাজতে আরও ৩০ মিনিট!
এই ৩০ মিনিটে সম্ভবত ৬০ বার ঘড়ি দেখা হয়ে গেছে।
এই তো দশটা প্রায় বাজে। হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনটা স্পষ্ট টের পাচ্ছি।
আর এ দিক ওদিক তাকিয়ে নীল শাড়ির এক মানবীর খোঁজ করছি। নীল পোশাকে যাকেই দেখছি তাকেই মনে হচ্ছে এই বুঝি সে ই।
এমন করে হাজারো অচেনা মানুষের ভীড়ে কাঙ্খিত মুখের খোঁজ করতে করতে কখন যে দশটার কাঁটা বারোটায় গিয়ে পৌঁছেছে বুঝতেই পারিনি। হটাত তাই ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। অজানা আশঙ্কায় মনটা কেপে উঠলো।
রুমা কোথায় আছে জানার জন্য ফোন দিলাম। আশ্চর্য! ফোন বন্ধ। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। কিন্তু না, ফোনটা বন্ধই।
মনে হাজারো রকমের কথা এলো।
কিন্তু ও আমাকে ধোকা দিতে পারে এ কথাটা বিশ্বাস করতে আমার মন কখনোই সায় দিলো না। যে অদেখা একজনকে আমার ভালোবাসার আশ্রয়স্থল বলে ভাবতাম তা শুধু মাত্র একটা অস্পর্শ বিম্ব, এই কথাটাও মনকে বিশ্বাস করাতে পারলাম না। একরাশ হতাশা আর একবুক অভিমান নিয়ে আমি ফিরে গেলাম।
আমার অভিমান ভেঙ্গে যেতে মাত্র একটি রাত সময় লাগলো। পরের দিন সকালে খবরের কাগজে দেখলাম বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে চকবাজারের রুমা নামের এক মেয়ে গাড়ি চাপায় নিহত হয়েছে! আমি স্পষ্ট দেখলাম মেয়েটার পড়নে একটা নীল শাড়ি!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।