ভাল কিছু লিখার প্রত্যাশায় লিখি.. আমার বাসা হতে ১৫-২০ কদম এগুলেই ধলা ঘটকের বাড়ি। ৫ বছর আগেও ধলা ভাই ঘটক ছিল না। তখন দেখতাম ধলা ভাই সারা দিন ঘুরে ঘুরে কাটাত। তার বউ ছিল দুই খান। আর ধলা ভাই এর ছেলে মেয়ে হাফ ডজনের ও বেশী ছিল।
ধলা ভাই এর দুই বউ সারাদিন মানুষের বাড়িতে কাজ করত এমনকি ছেলে মেয়ারাও কাজ করত আর ধলা ভাই সারাদিন ঘুরে বেড়াত। এ বিষয়ে যে যাই বলুক সে কর্ণপাত করতো না। আর মাঝে মাঝে বউদের পিটিয়ে পাড়ার ঘুম ভাঙাত।
যাই হোক এখন অবশ্য ধলাভাই বদলে গেছে। প্রায় ছয় ফুট লম্বা ধলা ভাই এখন ধলা ঘটক নামেই বেশী পরিচিত।
চুলে কড়া তেল, মুখে মিষ্টি জর্দা মিশ্রিত একখান পান চিবিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এখনো আগের মতই ঘুরে বেড়ায় তবে ধরণটা বদলে ফেলেছে। কথায় আছে না বোতল আগেরটাই শুধু বোতলের লেভেলটা নতুন। ধলা ভাই ও শুধু লেভেলটা বদলে ফেলেছে। এখন ধলাভাইর সাথে থাকে একটা ছবির এলবাম, একটা ডায়রী আর একখান মোবাইল।
এলবামে সংগ্রহে রাখা নানা ছেলে মেয়ের সুন্দর সুন্দর ছবি।
এই তো কয়েকদিন আগেই ধলা ভাই আমায় বলেছিল ছোট ভাই ২৬ বছর তো পার হইল অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে আমার সংগ্রহে একটা ব্যবস্থা করে দিব নাকি ? আমি বলেছিলাম কি যে বলেন ধলা ভাই? আপনার বাড়ি তো আমার সামনেই যখন সময় হবে আমি আপনাকে জানাব।
যাই হোক ধলাভাই একদিন আমাকে বলল তিনি বিপদে পড়েছেন আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে হবে। আমি বললাম কি হয়েছে? ধলা ভাই বলল এক মেয়ের বাবাকে তিনি কথা দিয়েছেন আজকে একজন ছেলে নিয়ে যাবেন তার মেয়েকে দেখতে। ধলা ভাই যে ছেলেকে নিয়ে যাবেন সেই ছেলে আজ বাসায় নেই।
আবার মেয়ে দেখতে না গেলে ধলা ভাই এর মান ইজ্জত প্লাস্টিক হয়ে যাবে। আমি বললাম কি করতে হবে আমাকে? ধলা ভাই বলল তোকেই সেই ছেলে বলে চালিয়ে দিতে হবে। আর পরে বলে দিতে হবে ছেলের মেয়ে পছন্দ হয় নি। আমি বললাম এত বড় ধোকা আমি দিতে পারব না। ধলা ভাই অনেক অনুরোধ করে রাজি করালেন আমাকে।
বললেন না হলে তার ঘটকালিতে এর প্রভাব পরবে।
অত্:পর ধলাভাই আমাকে কিছু টাকা ধরিয়ে দিলেন। কারণ আমি তো আমার ইচ্ছায় মেয়ে দেখতে যাচ্ছি না, আমি যাচ্ছি ধলাভাইর ঘটকালীর ইজ্জত বাচাইতে কাজেই মেয়ে দেখতে হলে যে টাকা মেয়েকে দিতে হয় সেই টাকাই আমাকে দিলেন।
আমরা মেয়ের বাড়িতে যাত্রা শুরু করলাম। বাড়ির কাছে পৌছা মাত্র ধলাভাই আমাকে ইশারা দিলেন আমরা মেয়ের বাড়ি চলে এসেছি।
কলিং বেল চাপতেই মাঝবয়সি একজন দরজা খুলে দিলেন। আমি হালকা লম্বা একখান ছালাম দিলাম। বুঝলাম ইনিই মেয়ের বাবা। ধলাভাই পরিচয় করিয়ে দিলেন। ভদ্রমহোদয় আমাদের বসতে দিয়ে ভিতরে গেলেন।
আমার ভিতর কোন ফিলিংস নাই। দু বছর থিয়েটারে কাজ করেছিলাম। ভাবলাম আজকে প্রেকটিকাল অভিনয় করে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবার সময় এসেছে।
একটু পরেই এক জন পিচ্চি উকি দিল। ধলাভাই ডাকতেই কাছে এল মেয়টি, ধলাভাই পরিচয় করিয়ে দিলেন তোর হবু শ্যালিকা।
আমি অযথা দু একটি বাক্য বললাম। এর মধ্যেই অনেকে এলো, কথাও হচ্ছে সবার সাথে। আমি ধলাভাইকে একটা ছোট করে গুতা দিলাম। দেরি হচ্ছে, তাড়াতাড়ি মেয়েকে দেখান। ধলাভাই ভিতর থেকে ঘুরে এলেন।
আমায় ইশারা দিলেন আসছে।
কিছুক্ষণ পরে মেয়ের খালা মেয়েটিকে নিয়ে এলেন। আমি কি করব বুঝে উঠতে পারছি না। আমার থিয়েটারের অভিজ্ঞতাও আজকে কাজে লাগছে না। বুকের ভিতর ধিক ধিক ড্রাম বাজছে।
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। ধলাভাই আমার নিচের দিকে তাকিয়ে থাকা দেখে কিছুটা হালকা করার চেষ্টা করলেন অভিজ্ঞ ঘটকের মত। বললেন ছেলে লজ্জা পাচ্ছে এইটা কিন্তু ভালগুণ। আমাকে একটা গুতা মারলেন। আমি আস্তে মাথা তুলে তাকানোর চেষ্টা করলাম।
হঠাৎ আমার চোখ স্থির হয়ে গেল মেয়েটির হরিনী চোখের দিকে তাকিয়ে। আমি স্বপ্ন দেখছি না তো। নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছি না। যেন রুপনগরের রাজ কণ্যা আমার সামনে দারিয়ে। যার রুপের জাদুতে আমি আটকা পরেছি।
কল্পনায় আমার হৃদয়ে তখন বেজে চলেছে সোনাবন্ধু তুই আমারে করলি রে দেওনা............দিলেতো মানে না....প্রাণে তো সহেনা। অবশেষে আমার অবস্থা দেখে ধলাভাই আবার গুতা দিলেন। আমার সকল কল্পনার আবসান ঘটল। দেখলাম মেয়েটি লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। যাই হোক আমার হাত থেকে টাকাটা নিয়ে ধলাভাই মেয়েটির হাতে তুলে দিলেন।
অবশেষে আমি আর ধলাভাই বিদায় নিলাম।
বাহিরে এসে ধলাভাই বলল তুমি তো মিয়া চমৎকার অভিনয় পারো। বলল এ যাত্রায় আমার ইজ্জত বাচাইলা। আমি বললাম ধলাভাই একটু সমস্যা হইছে। ধলাভাই বলল আবার কি সমস্যা? আমি আমতা আমতা করে বললাম মেয়েকে তো আমার সত্যি সত্যি পছন্দ হইছে।
ধলাভাই বলল আমার লগেও অভিনয় করতাছো না ? আমি অনেক কষ্টে বুঝাতে পারলাম যে এটা অভিনয় নয়, সত্যিই মেয়েটিকে আমার ভাল লেগেছে। যাই হোক ধলাভাইকে দ্বায়িত্ব দিলাম আব্বুকে বুঝানোর।
সারারাত ঘুমাতে পারলাম না। যেন কল্পনায় সেই মেয়েটির আচল ধরে আছি আমি আর সে হিন্দি গানটি গাচ্ছে.........ছোর দো আচল যামানা কিয়া কোহেগা................
অবশেষে বহু কাঠ খড় পুড়ে আব্বুকে রাজি করাল ধলাভাই। আর মেয়ের পরিবার আমাকে দেখার পরই পছন্দ হইছে এই মর্মে ধলাভাইকে আগেই নটিশ পাঠিয়েছিল।
তাই দিনক্ষণ ঠিক করা হল।
অত:পর একদিন বিয়ের সানাই বাজল। রাজকণ্যাকে নিয়ে এলাম আমি। তারপর বাংলা ছিনামার মত সুখে শান্তিতে চলতে লাগল আমাদের জীবন।
এখন ধলাভাই মাঝে মাঝে আমার ২ বছরের ছোট্ট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বলে তোর আব্বুর বিয়েটাতো আমিই করিয়েছিলাম, তোরটাও...............আমি বলি আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি...আমিই আপনার পাল্লায় পরে বিয়ে করেছি...এবার আমার ছেলেরে ধরছেন না? ধলাভাই স্বভাবজাত হাসি দেয়......তার পান খাওয়া ঠোট গুলো আরো সুন্দুর হয়ে উঠে................ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।