আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৌ এর জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞান কোর্স: সৌরজগৎ কিভাবে তৈরী হয়?

আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই! ছোট বেলা কেউ আকাশে তাকায়নি এমন মানুষ খুজে পাওয়া যাবে না। শরতে কাশফুলের বন যারা দেখেছে অথবা নদীতে ডিঙ্গী নৌকা করে দূরে আকাশটাকে ঐ দিগন্ত ছুতে দেখেছে এমন কৈশোর যার নেই, ধরে নেয়া যায় তার জীবনটা ১২ আনাই বৃথা। যদিও আমার জীবনের ১৬ আনাই বৃথা কারন আমি সাতার জানি না, কিন্তু যদি বলি আমার কৈশোর কেটেছে এমন পরিবেশে তাহলে বলবো এবার মরে গেলেও শান্তি! অবশ্য মরবার সময় আমি একটা জিনিস চাই, সেটা অবশ্য ফাট্টু জানে! যাই হোক, আকাশে যতবারই তাকাই তখনই উত্তর খুজি খোদা কিভাবে এই মহাযজ্ঞ আমাদেরকে উপহার দিলেন। তার সৃষ্টি কেন এতো শৃঙ্খলাময়! যদি সেগুলো শৃঙ্খলাময় হয়েই থাকে তাহলে এর নিয়মগুলো কি কি!!! আমি খুব সোজা ভাবে বুঝতে চাই, বুঝতে চাই আমি দৈনন্দিন যেসব জিনিস দেখি সেগুলো দিয়ে বুঝতে।

সৌরজগৎ কিভাবে তৈরী হলো সেটা বুঝানোর জন্য আমি পারতঃপক্ষে কোনো সূত্র ব্যাব হার করবো না। আমি এই বিষয়টা বুঝাবো এমন একজনের কথা চিন্তা করে যে কখনো বিজ্ঞান পড়েনি, ফিজিক্সের আলোর সূত্র গুলো পড়তে গিয়ে খুব ঘাবড়ে যায়, কিন্তু সে জানতে চায় মহাবিশ্বের রহস্য। যদিও এই গ্রহ কিভাবে তৈরী হয় এটা মাস্টার্স এবং পিএইচডি লেভেলের কোর্স কিন্তু আমি শিশু মনের এক ফাট্টু মেয়ের জন্যই এই ব্লগীয় কোর্স চালু করলাম! ঘটনা: ছোট বেলায় পড়েছিলাম ঝড় কিভাবে হয় যেমন ধরা যাক কালবৈশাখী। কোনো একটা জায়গায় প্রচন্ড গরম পড়লো হঠাৎ করে। তখন দেখা যায় ঐ এলাকার বায়ুমন্ডলের বাতাস গরম হয়ে অনেকটা উপরের দিকে উঠে যায়।

ফলে ওখানে একটা শূন্যস্হানের সৃষ্টি হয় বিশাল এলাকা জুড়ে। সেই শূন্যস্হান পূরন করবার জন্য আশেপাশের এলাকা থেকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা বাতাস ছুটে আসে ওখানকার শূন্যতা পূরনের জন্য। ফলে চারিদিক থেকে ছুটে আসা বাতাস ওখানে একটা ঝড়ের সৃষ্টি করে। এজন্য বৃষ্টি আসবার আগে প্রচন্ড ঠান্ডা অনুভূত হয়। এই যে বাতাসের কোলাহল পূর্ন অবস্হা এটাকে ইংলিশে বলি টারবুলেন্স অথবা কোলাহলপূর্নতা (গুগল থেকে অর্থ পেলাম)।

একটা ছবি দিলাম একজন ইংলিশ লোক বিড়ি টানছে। যখন সিগারেট থেকে ধোয়াটা বের হলো খুব দ্রুত তখন প্রচন্ড বেগে সরু হয়ে বের হলো। যখন আশেপাশের পরিবেশে ধোয়া তাপ হারিয়ে ফেলে তখন দেখা গেলো ওপরে ওঠে কোলাহলপূর্ন ঘুর ঘুর পরিবেশের সৃষ্টি করলো। এটা এই টারব্যুলেন্সের আরেকটা উদাহরন। আসল কথায় আসি।

আমরা এখন সৌরজগৎ কিভাবে তৈরী হয় সেটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করি। মোটামোটি ১০ টা ধাপের মাধ্যমে সৌরজগৎ সৃষ্টি হতে পারে: ১) আশেপাশের কোনো একটা সুপারনোভার শক ওয়েভের কারনে ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে নেব্যুলা সংকুচিত হতে শুরু করে। এই শকওয়েভের কারনে নেব্যুলা তখন ঘুরছিলো চক্রাকারে। যখন নেব্যুলার ঘুরনি বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন স্বভাবতই এর মধ্যে থাকা ধুলিকনার মেঘ চক্রাকার ধারন করে আর কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে চারিদিকে চাকতির রূপ নেয়। কোনো কারনে গ্যালাক্সীর মধ্যে থাকা বড় বড় কনার মধ্যে সংঘর্ষের কারনে বিশাল গ্যাস কেন্দ্রে কেন্দ্রিক ভরবেগ, গ্রাভিটি আর জড়তার জন্য অনেকটা নীচের ছবির মতো রূপ নেয়।

এই ছবিতে দেখা যায় যে M51 অথবা NGC 5194 নামক গ্যালাক্সীর সাথে NGC 5195 নামক গ্যালাক্সীর খুব কাছাকাছি সংঘর্ষের কারনে একটা ঘূর্নির সৃষ্টি হইছে। (যদিও আমাদের সৌরজগৎ তৈরী হয়েছিলো নেব্যুলার সংকোচনের কারনে, কিন্তু এখানে এই ছবিতে দুটো গ্যালাক্সীর সংঘর্ষ আকারে দেখানো হইছে কারন পরবর্তীতে বেশীর নক্ষত্র আর তাদের গ্রহমন্ডলী এরকম ধারাই অনুসরন করে। তবে আবশ্যকীয় নয় যে সব নক্ষত্রমন্ডলী এই ধারা অনুসরন করে, তার উভয় ধারার যেকোন একটি অনুসরন করতে পারে। ) এই ঘূর্নির দেখেন দুইটা বাহু আছে। এখন কি কারনে সৃষ্টি হইছে সেইটা এই ছবি থেকে বলা যায় যে কেন্দ্রে একটা ব্লাক হোল থাকতে পারে।

তাই এইখানে দুই গ্যালাক্সীর মধ্যে থাকা ছোট ছোট গ্রহানু থেকে শুরু অন্যান্য হাবিজাবী মরা তারা ধূলাবালি সব এক হয়ে এই মেঘের সৃস্টি করছে! এর এক কোনা থেকে আরেক কোনার দূরত্ব হতে পারে কয়েক মিলিয়ন আলোকবর্ষ। ২) উপরে টারব্যুলেন্সের যে দুটো উদাহরন দেখালাম এখন সেই টারব্যুলেন্সের ব্যাপারটা আসবে। এই টারব্যুলেন্স এবং অপেক্ষাকৃত নতুন তারাদের কারনে এই গ্যাস ভর্তি মেঘে কিছু কিছু গাঠনিক বস্তু তৈরী হতে থাকবে। এখন এই গাঠনিক বস্তু বলতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে দেখা যায় ঐ সাদা মেঘ গুলো মাঝে মাঝে লাউ, মাঝে মাঝে পুইশাকে সাইজ হয় (ক্ষুধা লাইগা গেলো রোজা রমজানে)। তো এইখানে বলয়াকৃতির রিং বা ডিস্কের (সিডি ডিভিডি সাইজ) সাইজ হতো থাকে এই মেঘ গুলো।

নীচের এই ছবিটা দেখেন। ৩) এই ধাপে ঐ মেঘে দেখা যায় অনেক বৈরী পরিবেশ। এই পরিবেশে এরকম কোলাহল পূর্ন টারব্যুলেন্স গুলো এলোমেলো হয়ে যায়। এই পুরো ব্যাপারটা মেঘটাকে ঘনীভূত করে (ভয় নাই মেঘ ঘন হয়ে বৃষ্টি হবে না)। এখন সমস্যা হলো এই যে লক্ষ কোটি আলোকবর্ষের মেঘ যখন ঘনীভূত হতে থাকে কোনো এক জায়গায় তখন সেখানে থাকা ধূলো, হাইড্রোজেন গ্যাস সবকিছু নিজেদের মধ্যে জমতে থাকে।

ফলে ঐ অংশের ভর অনেক বেড়ে যায়। ব্যাপারটা এরকম যে আপনাকে ছোটবেলা যখন জিজ্ঞেস করা হয় যে এক মন তুলো আর এক মন লোহা কোনটা বেশী ওজনদার তখন আপনি হেসে দেবেন। কারন দুটোর ওজনই সমান। কিন্তু দুটোর আয়তন কিন্তু সমান না। এক মন লোহার আয়তন খুব বেশী হলে একটা বড় রড।

আর এক মন তুলা হলো বিশাল বস্তা। কারন লোহার ঘনত্ব খুবই বেশী সেখানে তুলো তো শুধু বাতাস ভরা। সেরকম ভাবেই মেঘের সকল কনিকাগুলো যখন এক জায়গায় জড় হয় তখন এর ঘনত্ব ভয়াবহ রকমের বিশাল হয়ে যায় তখন এর ভরও বেড়ে যায়। ফলে তখন এখান থেকে কোনো আলোকও বেরুতে পারে না। আপনি টেলিস্কোপ তাক করলে দেখবেন শুধু কালো একটা গোল অংশ।

এই অংশটাকে তখন বলে অন্ধকার মলিউক্যুলার মেঘ। ছবিটা দেখেন ৪) এই ধাপে নীচের চিত্রের মতো ঐ অন্ধকার অংশটা ফেটে যায়। কারন এটা এতই ঘনীভূত হতে থাকে যে কেন্দ্রে প্রচুর পরিমান চাপের এবং তাপের সৃষ্টি হয় ফলে ফাটি যায়। যখন ফেটে যায় তখন ওখানে সিডি ডিভিডির মতো সাইজের একটা ডিস্কের বা বলয়ের আকার ধারন করে। ৫) ঠিক একই সময় নীচের চিত্রের ন্যায় দুই দিক দিয়ে গ্যাস আর নতুন তারাদের হাওয়া খুব উচ্চ গতিতে বহির্গমন হতে থাকে ঐ বিস্ফোরন থেকে।

যার ফলে নতুন তারা বা গ্রহের জন্য ডিস্ক তৈরী হতে থাকে। ৬) এই ধাপে মেঘের ভিতর থাকা মাল মশলা যেগুলো বি্স্ফোরনের কারনে হারিয়ে যায় নি সেগুলো মিলে ঐ ফুটকির ভিতর একটা প্রোটোতারা তৈরী করে। প্রোটো তারা হলো বিশাল ভর বিশিষ্ট একটা গ্যাসীয় তারা। আসলে এটা হলো একটা তারার খুবই প্রাথমিক বা কুটিকাল অবস্হা। এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটা নতুন প্রোটোতারা যে ধুলি ভরা মেঘের গভীরে ডুবে আছে।

তারাটি লাল দাগের মতো অন্ধকারের ভিতর জ্বল জ্বল করছে। তবে এই ছবির বাকী অংশটা মনের মাধুরী মিশিয়ে করা কারন এরকম তারার ছবি নেয়াটা কষ্টকর কারন পুরো তারাটাই ধুলিমেঘে ঢাকা থাকে। ৭) এই প্রোটোতারার ভিতর যখন ফিউশন প্রক্রিয়া চালু হবে তখনই এটা আসল তারায় পরিনত হবে মানে যৌবনে উঠার জন্য মুখে বিড়ি ধরানোর মতো কন্ডিশন। নীচে ফটুক দেখেন এই সেই আইনস্টাইন চাচ্চু যিনি এই ফিউশন প্রক্রিয়ার জন্য সূত্রটা E = mc^2 আবিষ্কার না করলে তারা কোনোদিন পয়দা হইতো না এটা নিয়ে আমার একটা জোকের কথা মনে পড়লো! ইতিহাসে শিক্ষক জিজ্ঞেস করলেন ঘোড়ার ডাক কে প্রচলন করলেন? একজন বললো শের শাহ। তখন সেই ইতিহাসের শিক্ষক বললেন, শের শাহ এটার প্রচলন না করলে হয়তো ঘোড়া কোনো দিন ডাকতো না! ৮) এই ধাপে বহির্গমন বন্ধ হয় এবং তারার গঠন প্রক্রিয়া সম্পূর্নতা লাভ করে যাকে বলা হয় এর পরিবৃদ্ধির দশা।

তারা চারপাশে ঘিরে থাকে তারা গঠনের পর মেঘের বাকী অংশ যেগুলো তারাটির পাশে বলয়াকৃতি ধারন করে। ছবি গুলো অনুসারে কেন্দ্রের চাপের বৃদ্ধির কারনে এর মধ্যে গ্রাভিটির টানে সাম্যাবস্হা ফিরে আসে এবং আশেপাশের গ্যাসীয় মেঘ দিকে ছুটে আসে। একে বলা হয় হাইড্রোস্ট্যাটিক সাম্যাবস্হা। এই সাম্যাবস্হায় থাকার কারনে বিভিন্ন ধুলিবালি হাইড্রোজেন গ্যাসের বহির্গমন বন্ধ হয় এবং তারা আশেপাশে বিশাল বলয়ের সৃষ্টি করে। আমাদের সৌরজগতের হিসাব করলে এই বলয় টার সীমানাই হইলো আমাগো সৌরজগৎ আর গ্রহ হিসাব করলে ধরেন বৃহস্পতি আর তার চাদ গুলান যতজায়গা নিয়া আছে।

৯) ঐ তারা গঠনের শেষের দিকে তাকে ঘিরে থাকা মেঘের অবশিষ্টাংশ থেকে তৈরী বলয়টাকে বলা হয় প্রোটোপ্লানেটরী বলয় যেখান থেকে সৃষ্টি হবে নতুন নতুন গ্রহ। ১০) আসলে ঐ তারা খুব কাছের বলয়টা হবে আমাদের সূর্য্যের আশেপাশে থাকা জোডাইকাল ধুলীয় বলয় আর ঐ তারা গঠনের পর বাকী মেঘের অংশে যে বলয় বাকী থাকবে সেখান থেকে জন্ম নেবে নতুন নতুন গ্রহ উপগ্রহ আর গ্রহানুরা। এই ১০ টা ধাপ দিয়াই তৈরী হইছে আমাদের বিশাল এই সৌরজগৎ। তবে এইখানে একটা কথা আছে। এটা হলো সবচেয়ে গ্রহন যোগ্য থিওরী।

এই থিওরীর প্রমান অবজার্ভেশনাল সার্ভের মাধ্যমে করা হইছে। রেফারেন্স ছবির ঠিকানাগুলা থেকেই পাবেন! রেফারেন্স: ১) Click This Link ২) http://www.cfa.harvard.edu/ ৩) http://csep10.phys.utk.edu/astr162/lect/ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।