ডাক নাম রঞ্জু (ছদ্ম নাম)। অবশ্য তার ভাল পুরো নাম টা কেউ জানি না। সে কখনও বলেনি। একটু চাপা টাইপের ছেলে ছিল। দু-চোখে ছিল স্বপ্ন।
আড্ডার মাঝে নিত্য নতুন থিওরি, নিত্য নতুন স্বপ্ন আমাদের হাসাত,ভাবাত। খুব ধূমপান করত আর নেশার প্রতি ছিল তীব্র ঝোঁক। এক রোকা আর গানের প্রতি ছিল প্রচণ্ড নেশা। ডিগ্রি পাশ করে চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছিল কিন্তু তার স্বপ্ন পুরনের জন্য এই সব চাকরি তাকে দিয়ে হতো না। বাঙলার চিরায়ত শাশুড়ি-বউ এর কলহ নিজের বাসায় দেখে দেখে সব সময়ই বিষণ্ণতাই ভুগত।
জিজ্ঞেস করলে বলত এসব এর কারনে বাসায় মন টিকে না। প্রতিনিয়ত ঝামেলার কারনে বাবার সাথে দূরত্ব অনেক আগেই বেড়ে গেছে। এখন বাবার সাথে তার সম্পর্ক শুধুই বকা খাওয়ার। গ্রুপের সবাই ধীরে ধীরে বিজি হয়ে যাওয়ার কারনে আড্ডা আর নিয়মিত হতো না আর সবার সাথে এ কারণে যোগাযোগ একটু হাল্কা হয়ে গিয়েছিল।
একদিন ফোন করে বলল,দোস্ত একটু দেখা কর,জরুরী কথা আছে।
দেখা করলাম,দেখে একটু হতাশ মনে হচ্ছিল। বল্ল,বাবার সাথে ঝগড়া হয়েছে,সে যাই হোক,বাবা ব্যবসা করার জন্য তাকে ৩ লক্ষ টাকা দিয়েছে। আমার বন্ধুটি যথেষ্ট মেচিউর। সে ভেবে দেখেছে কি করা যায়। এই জন্যই আমাকে মূলত আমাকে ডাকা।
সে ভালো করেই জানে এই টাকা টা দিয়ে কিছু করতে না পারলে সে আর বাড়িতে মুখ দেখাতে পারবে না। তার ফ্যামিলির কাছে তার আর এক ফোটা মূল্য থাকবে না। আমি মোটামুটি পজেটিভ সাজেশন দিলাম কিন্তু দেখে মনে হল কোন ডিসিশান নিতে পারেনি।
যথারিতি যার যার কাজে আবার বিজি হয়ে গেলাম। মধ্যখানে তার বাবা একবার ফোন করেছিল,সে কি করছে,কার সাথে করছে তা খোঁজ নেয়ার জন্য।
এবং বলল সে নাকি রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।
এর কিছুদিন পর তার সাথে রাস্তাই দেখা। মনে হয় কিছু খেয়েছে। একটু দিকভ্রান্ত। ওই দিন অনেকক্ষণ কথা হল।
তার মা এবং ভাবির সম্পর্ক আরও খারাপ হয়ে গেছে। তার বাবা এখন আর তাকে কিছু বলে না। সে বলল তার বাবার নীরবতা তার কাছে আগের চেয়ে আরও ভয়ঙ্কর মনে হয়। কি করছে জিজ্ঞেস করতেই বলল ব্যবসার চিন্তা বাদ দিয়েছে। তাকে দিয়ে ব্যবসা আর হবে না।
বিদেশ যাওয়ার ব্যাপার এ চিন্তা ভাবনা করছে। তা কোন দেশে যাচ্ছে জিজ্ঞেস করতেই বলল সময় হলে সব জানতে পারবি। কথা বলতে বলতে আমরা মার্কেটেও কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলাম। ও মিতালি মুখারজি আর হৈমন্তীর কিছু সিডি কিনল।
সে দিনটাই ছিল বিদেশ যাওয়ার আগে আমার সাথে ওর শেষ দেখা।
একদিন বাসায় গিয়ে দেখল তার মায়ের সাথে ভাবির ঝগড়া চলছে। তার মাথাই হটাত রক্ত উঠে গেলো। হাত এর কাছে পেয়েছিল লাটি। এরপরের কাহিনি আর নাই বললাম।
সর্বমোট ২ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকায় তাদের সাথে চুক্তি হল।
দেড় লাখ টাকা এডভান্স। বাকি টাকা ইটালি গিয়ে দিতে হবে। বন্ধু বুঝতে পেরেছে যে তাকে গলাকাটা ভিসা নিয়ে ইটালি জেতে হবে। ২মাসের মত লাগতে পারে। বন্ধু তো একরোকা,ডিচিশান নিয়ে ফেলল।
কিছু কাপড় আর প্রয়োজনীয় কিছু জিনিষ আর বেশ কিছু গানের সিডি নিয়ে বের হয়ে পড়লো। কাউকে কিছু বলল না।
তাদের ফ্লাইট হচ্ছে ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে। ট্রানজিট হবে শ্রীলংকা। ওখান থেকে সুবিধা মত গন্তব্য টিক করে পরে ইটালি জেতে হবে।
এজেঞ্চি থেকে একজন লোক সর্বদা তাদের সাথে আচে। অনেক লোককেই দেখল তার মত ইটালি যাওয়ার জন্য রেডি তবে সংখ্যায় কতো তা অনুমান করতে পারল না।
যথা সময়ই ফ্লাইট ছেঁড়ে দিলো। শেষ বারের মত একবার বাংলাদেশকে দেকে নিলো দুচোখ ভরে। জানেনা তার কপালে কি আছে।
কোথায় তার নিয়তি আর কি তার পরিনাম। (চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।