পলাবি কোথায় তকদীর হতে নাহিক পরিত্রাণ... আমি এক অভাগা। রাত বাজে ২ টা বেজে ৩৯ মিনিট। ইউভিএতে ২টা জলবৎ তরলং কোড সাবমিট করে AC পাইলাম আর তাতেই ক্লান্ত হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। আজ কেন জানি নিজেকে একটু চঞ্চল লাগছিল। আছে এক পার্টটাইম গার্লফ্রেন্ড ওরফে ছোট আপু।
দিলাম ফোন আল্লাহর নাম নিয়ে! পেলাম না। এখন কি করি?? হাজার হোক পোংটাতো । নাম্বারটা থেকে ১ মাইনাস করে দিলাম ফোন। রিং হচ্ছে.........
ওপাশঃ হ্যালো(নারী কন্ঠ)......... (আমি প্রথমে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করলাম এবং চুপ থাকলাম)। আবার হ্যালো।
আমিঃ বিলাই এর মত করে বল্লাম... হ্যালো। এটা কি শিলার নাম্বার ।
ওপাশঃ কি??? কার নাম্বার। আপনার কথা শোনা যাচ্ছে না। কাইন্ডলি একটু জোরে বলবেন।
আমিঃ এটা কি শীলার নাম্বার??(একটু জোরে! কারণ মা ঊঠে ইতোমধ্যে একবার আমাকে সেহরির জন্য ডেকে গিয়েছে)।
ওপাশঃ ফোন তার বোনকে দিতে দিতে বলল দেখ তো আপু তোমার মনে হয়। একটা অতিযুবা নারীর কন্ঠ... হ্যালো(ব্যস্ততার সাথে) কে বলছেন।
আমিঃ আমি শীলা কে চাচ্ছি!
ওপাশঃ আপনি কোথায় ফোন করেছেন?
আমিঃ ঢাকা মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেকেরটেক ৮। শিলাকে চাই :
ওপাশঃ সরি ভাই এটা ওই যায়গা না।
আপনি যাকে চাচ্ছেন সে নামে এখানে কেঊ নেই আসলে। আপনি রং নাম্বারে ফোন দিয়েছেন আসলে।
আমিঃ তো এটা কোন যায়গা? আমার জানা বিশেষ প্রয়োজন।
ওপাশঃ কেন ভাই!! (একটু মেকী রাগ নিয়ে) বল্লাম তো এটা আপনার কাঙ্ক্ষিত জায়গা নাহ।
আমিঃ কিন্তু আমার যে জানতে ই হবে।
ওপাশঃ আচ্ছা ভাই আমি এখন সেহরী বানাচ্ছি। আপনি কি রোজা রাখেন নাহ???
আমিঃ জী নাহ আমার রোজা রাখা হয়না।
ওপাশঃ ওহ ! আপনি রোজা রাখেন নাহ। তাই এই অবস্থা!! আচ্ছা শুনুন আমার গ্যাজানোর টাইম নাই(কসম ঠিক এভাবেই বলল)। আমার ছোট বোনের সাথে গ্যাজান নেন।
বলেই ফোনটা আগের সেই ললনার হাতে চালান করল।
আবার সেই সুহাসিনীঃ হ্যালো।
আমিঃ জি হ্যালো। আপনি ভাল আছেন? উনি কে ছিলেন?
ওপাশঃ উনি আমার বড় বোন ছিলেন।
আমিঃ এটা কোথায়??
ওপাশঃ এটা বংশী বাজার পুরান ঢাকা।
আমিঃ আমার নানীর বাসা তো চুনকূটীয়া(বুড়িগঙ্গার ও পারে)।
ওপাশঃ এটা আসলে ও যায়গা নাহ। আপনি কে??
আমিঃ আমি কে পরে জানলেও চলবে। আপনি কি করেন?
ওপাশঃ আমি?? এই তো খাই দাই। বাবা মার সাথে থাকি????
আমিঃ আসলে আপনি কি কাজের কাজ মানে পড়াশোনা বা ইত্যাদি কিছু করেন?
ওপাশঃ হ্যা আমি তো পড়াশোনা করি।
আমিঃ ভাল লাগে পড়াশোনা করতে???
ওপাশঃ জানেন আমার না পড়াশোনা করতে একদম ভালো লাগেনা। তবু ও করি।
আমিঃ কি পড়েন? কোথায় পড়েন??
ওপাশঃ আমি নর্দান ইউনিভার্সিটিতে ল পড়ি।
আমিঃ কি উকিল হবেন নাকি???(তার নাকি পড়তে ভাল লাগেনা )।
ওপাশঃ নাহ আসলে ল শেষ হলে আমি না এমবিএ করবো।
আমিঃ তো ল করছেন কেন??? বিয়ে শাদিতে তো ল এর ডিগ্রী কাজে লাগবেনা।
ওপাশঃ বল্লাম নাহ এমবিএ করবো। ব্যাংকিং সেক্টর এ ঢূকবো আমি।
আমিঃ ওহ আচ্ছা। ভাল তো।
কোন ইয়ার?????
ওপাশঃ সেকেন্ড ইয়ার এ। (আমি অবাক)।
আমিঃ তাহলে আপনার বড় বোন কি করে???(বিস্ময়ের সাথে)।
ওপাশঃ আপুর তো বিয়ে হয়ে গেছে। ওর একটা ছোট বাবুও আছে!! ওর বাবুটাকে নিয়ে আমি এখন শুয়ে আছি।
আচ্ছা আপনি কি করেন?? পড়াশোনা???
আমিঃ জি(মনে মনে বল্লাম খালি পড়াশোনা...... )।
ওপাশঃ কোন ডিপার্টমেন্ট??
আমিঃ আর বলিয়েন নাহ। একটা বরিং সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা আমার। (ভাব)।
ওপাশঃকিসে শুনি?
আমিঃ সি.এস.ই।
ওপাশঃ কি বল্লেন????
আমিঃ জ্বী, CSE।
ওপাশঃ বলেন কি?? আপনি ইঞ্জিনিয়ার!!! কোথায় পড়েন???
আমিঃ আমি শাহজালাল ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজিতে ডিপার্টমেণ্ট অফ CSE তে অধ্যয়নরত। (কথা প্রসঙ্গে সাস্ট cse আসায় আমি ততক্ষনে তেতিয়ে উঠেছি)
ওপাশঃ গলা আরো আবেদনময়ী হয়ে...... আপনি কেন আপনার সাবজেক্ট কে বরিং বল্লেন???
আমিঃ ব্যাপারটা ইগনোর করে বল্লাম আমার ডিপার্টমেণ্ট এর হেড কে জান। (ততক্ষনে তুমি হয়ে গিয়েছি কিন্তু )
ওপাশঃ কে????
আমিঃ (ভেতর থেকে একটা ঠেলা দিয়ে সমস্ত আগ্রহ দিয়ে বল্লাম )প্রফেসর মুহাম্মদ জাফর ইকবাল।
ওপাশঃ কিছুক্ষণ নীরবতা(আমি কিন্তু অবাক তখন ও হইয়নি।
কারণ জানতাম না আমার সামনে কি অপেক্ষা করছে)...... নীরবতা ভেঙ্গে খুবই ধীর কন্ঠে বল্ল কে উনি????
আমিঃ আমি মাথায় হাত(যদিও মাথায় হাত দিইনি। আসলে হাত দিয়ে বগল চুলকাচ্ছিলাম)। বল কি?? এত বড় মানুষটাকে চেনো নাহ। গবেশক, লেখক, শিক্ষক, কত ভাল কাজের অগ্রপথিক!!!
ওপাশঃ আসলে আমি উনাকে চিনতে পারলাম নাহ!!
আমিঃ আমি আর ও আগ্রহ নিয়ে বল্লাম ড. হুমায়ুন আহমেদ এর ভাই।
এর পরে আমি যা শুনলাম তাতে আমার হাত আমার বগল থেকে সত্যি ই মাথাতে চলে যায়।
ওপাশঃ আসলে না আমি হুমায়ুন আহমেদ এর নাম উনি মারা যাবার পর প্রথম শুনেছি। :O
আমিঃ (শুধু) বল্লাম আমি বড় অভাগা। (তারপর ফোনটা কানের কাছ থেকে নিজের অজান্তেই সরাতে শুরু করলাম)
ওপাশ থেকে ভেসে আসতে লাগল কি বল্লেন। হ্যালো আমি শুনতে পাইনি। হ্যালো…………………………….[ফোন বন্ধ করে চার্জে দিলাম এবং সেহরী খেয়ে লেখাটা লিখেই ফেললাম]।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।