সব ভাল কথাই ভাল নয়........... নব্বই দশকে দেশে এতটা সম্ভাবনা দেখা যায়নি কম্পিউটার বিজ্ঞানের, যা আজ একবিংশ শতকের গোড়ায় দেখা যাচ্ছে। একটা সময় ছিল যারা কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছে তারাই কেবল কম্পিউটারে ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা খুঁজছেন। তাছাড়া কম্পিউটার অপারেট কিংবা সীমিত সংখ্যক কিছু কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এর পরিসীমা। অনেকেই কম্পিউটার কিনেছেন গেমস, গান বা মুভি দেখার জন্য। অফিসে ব্যবহৃত হয়েছে অফিস ওয়ার্ক মেন্টেইন করতে।
কাস্টমাইজ সফটওয়্যার নির্মানের ফলে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে থাকে। বাড়তে থাকে প্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রসার। অনলাইনেও তাদের প্রতিষ্ঠানকে উন্মুক্ত করতে ব্যবহার বাড়ে ওয়েসাইটের ব্যবহার। ২০০০ সালে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হোস্ট বা সেবাদানকারী ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত কম্পিউটার ছিল ১০০ মিলিয়ন এবং ওয়ার্ক স্টেশন কম্পিউটারের সংখ্যা প্রায় পাঁচশ মিলিয়ন। এর সংখ্যা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় দ্বিগুন হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে যা অদূর ভবিষ্যতে মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে।
এই ইন্টারনেট সম্প্রসারনের প্রক্রিয়াকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। ১৯৬৭ হতে ১৯৮৩ পর্যন্ত ছিল পরীক্ষামূলক পর্যায়। ১৯৬৭ হতে ১৯৮৩ পর্যন্ত ছিল পরীক্ষামূলক পর্যায়। আশির দশক হচ্ছে সম্প্রসারনের ২য় পর্যায়। তখন বিশ্বের বিভিন্ন গবেষনা প্রতিষ্ঠান নেটওয়ার্ক উন্নয়নে শরীক হয়।
১৯৯০ সালে আরপানেটের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং এটি ইন্টারনেট নামে পরিচিতি লাভ করে। ফলে ১৯৮৯ সালে আইএসপি (ISP-Internet Service provider) বা ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান চালুর ফলে সকলের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ইন্টারনেটের প্রটোকলগুলোর মধ্যে এইটিটিপি (HTTP-Hypertex Transfer protocol)- ব্যবস্থার মাধ্যমে অনলাইনে ওয়াল্ড ওয়াইড ওয়েবের জন্য আদর্শ প্রোটোকল, যা সীমা-পরিসীমার বিস্তৃতি ঘটায়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিংবা এই সাইবার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে অনেক বেশি সময় নিয়েছে। তরে শুরুটা ছিল ১৯৯৪ সালের ৪ঠা জুন।
কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান তখন ক্ষুদ্র আকারে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করলেও পবর্তীতে মোবাইল কোম্পানীগুলো ইন্টারনেট সেবায় এগিয়ে এসেছে। বাড়তে থাকে সাধারণ মানুষের ভেতর ইন্টারনেটের প্রচলন। তখনো তা ছিল শুধু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তথ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। যা পরবর্তীতে সামাজিক নেটওয়ার্ক বিস্তৃতির সাথে সাথে তরুণ প্রজন্মের ভেতর এই অনলাইন প্রক্রিয়া বেশ সাড়া ফেলে।
বর্তমান সময়ে ব্যাংক-বীমা কিংবা সরকারী-বেসরকারী অনেক প্রতিষ্ঠান এই অনলাইন বা ইন্টারনেট প্রচলনের গুরুত্ব বেশ ভাল ভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছেন।
আর জনজীবনও তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কারণ সেখানে কার্য প্রক্রিয়া আর সময়ের সুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ থাকে।
বিংশ শতাদ্বীর গোড়ার দিকে ই-কমার্স বেশ জনপ্রিয় ও আলোচিত একটি বিষয় হয়ে দাড়িয়েছিল। উন্নত বিশ্বে যার একটা বিরাট প্রভাব রয়েছে। আর এর ফলে তা বিশ্বব্যাপী পণ্য প্রসার আর বাজার নিয়ন্ত্রন চলছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে তরুণদের ভেতরে যে বিষয়টা বেশ প্রভাব ফেলেছে তা হচ্ছে আউটসোর্সিং। যেখানে প্রতিদিনই বাড়ছে কাজের নতুন নতুন ক্ষেত্র। আমাদের দেশের তরুন সমাজ যারা ইন্টারনেট জীবিকার দিকে পা ফেলেছেন তাদের অনেকেই বিশ্বের ফ্রিল্যান্সারদের সাথে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। একসময় যারা ভিডিও এডিটিং, অটোক্যাড কিংবা অন্যান্য মাল্টিমিডিয়া বা গ্র্যাফিক্যাল জগতে বিচরন করে পেশা গড়তে বেশ আগ্রহ ছিল। বর্তমানে অনেক আইটি পেশাজীবিদের দৃষ্টি এখন অন্যদিকে প্রবাহিত হচ্ছে।
আর এর ফলে একজন শিক্ষিত যুবকের কোন চাকুরীর পেছনে ধর্ণা না দিয়ে ঘরে বসেই ডলার আয় করতে পারছেন।
প্রত্যেক ফ্রিল্যান্সার তাদের দক্ষতা অনুযায়ী আউটসোর্সিং এর বিভিন্ন কাজ করার সুযোগ রয়েছে। যেমন-ই-এডভারটাইজিং, বিক্রয়-বিপনন, ই-মেইল সেবা, ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক্স ডিজাইন ইত্যাদি। আর এতে সাধারণ শিক্ষিত যুবক ছাড়াও বুয়েট বা আইটিতে শিক্ষিত প্রশিক্ষিত অনেক যুবক তাদের পেশা হিসেবে এই আউটসোর্সিংকে বেছে নিচ্ছেন।
বিশ্বের অনেক বায়ার বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে।
বাড়ছে রেমিটেন্সের পরিসীমা। আর হতাশাগ্রস্থ অনেক তরুন নিজ মেধা আর দক্ষতা বিনির্মান করে এই ব্যতিক্রমধর্মী পেশায় নিজেদের ডুবিয়ে দিচ্ছেন। আউট সোর্সিং এর প্রধান মার্কেট প্লেস যেমন-www.odesk.com, http://www.freelancer.com, http://www.guru.com, http://www.clance.com, http://www.vworker.com, http://www.scriptlance.com, http://www.getacoder.com. যা আন্তর্জাতিক বায়ার এবং ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মার্কেট সম্প্রসারনে আর ক্লায়েন্টের দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যাপারে রয়েছে বেশ আগ্রহ। যেমন ওডেক্স কিছুদিন আগে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে সেমিনার করেছে।
আর এতে অনেক বিষয়ের জটিলতা আস্তে আস্তে কাটছে।
এসকল মার্কেট প্লেস সাইটগুলো ফ্রিল্যান্সারদের বিভিন্ন দক্ষতা যাচাই করে বায়ারদের কাছে গ্রহনযোগ্য করে উপস্থাপন করে। ফ্রিল্যান্সারদের একটা বড় সমস্যা ছিল তাদের পারিশ্রমিক দেশে ফিরিয়ে আনা। আর এর ফলে আন্তর্জাতিক কিছু ডেবিট কার্ড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সেসব সেবা দিয়ে আসছে। যেমন Pyenor, Paypal কিন্তু তাও ছিল ব্যবহারকারীর কাছে দুষ্প্রাপ্য।
বর্তমান সময়ে তা ব্যাংকের মাধ্যমেও আনতে পারবেন। ওডেক্স কন্ট্রাকটর অ্যাপ্রিসিয়েশন ডে –শীর্ষক আয়োজনে এ সুবিধা চালু করার ঘোষনা দিয়েছেন ওডেক্সের বাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাক কুপার। বাংলাদেশী ওডেক্স ব্যবহার কারীরা নিজের এ্যাকাউন্টে লগ ইন করে সেটিংস থেকে ওয়ালেটে গিয়ে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ওডেক্সের সঙ্গে যুক্ত করতে পারবেন।
বাংলাদেশের জন্য এসব প্রসংসনীয় কার্যক্রম আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সম্ভাবনা আরো বাড়িয়ে দিবে। তাই আমাদের আইটি সংশ্লিষ্ট পেজীবিদের আরো দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সরকারী উদ্যোগে প্রশিক্ষন, সবা-সেমিনার এবং হাতে কলমে কাজের প্রক্রিযাকে ছড়িয়ে দিতে আরো উদ্যোগী হলো আমাদের আরেকটি বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে ই-পেশার সম্ভাবনা আরো বৃদ্ধি পাবে।
আমাদের দেশের যুব সম্প্রদায়কে এই আলোকিত পোশায় দক্ষতা বাড়িয়ে আরো অংশগ্রহন বাড়িয়ে বিশ্ব মানের IT Professional হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।