নিরর্থক এই জীবনে অর্থকতার খোঁজে চলেছি অজানায় প্রথম পর্ব এর পর ......
নীল বসে বসে আঙ্গুল কামড়ায় আর উত্তরের জন্য অপেক্ষা করে। ৫ মিনিট , ১০ মিনিট, ১৫ মিনিট.... সময় যেন যেতে চায় না। ৪৫ মিনিট পর মেসেজটা দেখা হয়েছে বলে বোঝা যায়। কিন্তু উত্তর কই?? মৌ তো উত্তর দেয় না। আবারও ৫-১০-১৫ মিনিট কেটে যায় কিন্তু উত্তর আসে না।
আধ ঘণ্টা পর মৌকে অনলাইনে পেয়ে নীল নিজেই আবার মেসেজ দেয়, "মেসেজটা দেখেছ?আছো??"
১০ মিনিট পর মৌ উত্তর দেয় "ভাইয়া, আমি এখন আসলে পারবো না, আমার ফ্যামিলিতে প্রব্লেম আছে। " নীল যে খুব বেশি আশা করেছিল পজেটিভ উত্তর এর জন্য তা না। দেখা সাক্ষাৎ ছাড়া কোন মেয়ের রাজি হওয়ার কথা না এটাই স্বাভাবিক। তবে হঠাৎ ভাইয়া বলে ডাক দেওয়ায় নীল বড়ই হতাশ। আগে কখনও মৌ ভাইয়া বলে নি ।
নীল নিজেকে সামলে নেয় , সে জিজ্ঞাসা করে মৌ এর ফ্যামিলিতে আসলেই অনেক কড়াকড়ি কিনা। মৌ বলে হ্যাঁ। নীল বুঝতে পারে , আসলে মৌ এর আপত্তি এখানে মুখ্য না, মুখ্য তার পরিবার। নীল মৌকে বলে "মৌ একবার ভেবে দেখ পজেটিভলি, তোমার ফ্যামিলি তো তোমার ভাল চায় তাই না, তোমাকে ভাল রাখার চেষ্টা আমি করব.. প্লিজ "।
মৌ বলে "ওকে, ভেবে দেখব।
"নীল কিছুটা ভরসা পায়, এখনও আশা ফুরিয়ে যায় নি। স্বাভাবিকভাবে কথা বলে এবার। ওইদিনই রাতে সে ফোন নম্বর চায় মৌ এর কাছে। মৌ বলে "আমি তো কাউকে ফেসবুকে নাম্বার দিই না, সরি"
নীল এবার ভেঙ্গে পড়ে, হল না সম্ভবত। প্রচণ্ড মাথাব্যথা করতে থাকে তার।
কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়ে তা টের পায় না । অনেক সকালে নীল এর ঘুম ভাঙ্গে। বিরক্ত হয়ে ফেসবুক এ ঢোকে,একটা মেসেজ !!
ভয়ে ভয়ে নীল মেসেজটা দেখে। মৌ তার নাম্বার পাঠিয়েছে।
নীল বিস্ময়ের ঘোরে নাম্বারটা সেভ করে।
ভাল লাগার বিচিত্র অনুভূতি আজ নীল এর মনে । মৌ এর ফোনে প্রথম মেসেজ পাঠায় "থ্যাঙ্ক ইউ" লিখে। টুকটাক মেসেজিং শুরু হয় এবার। ফেসবুকে চ্যাট আর মোবাইলে অফলাইন মেসেজিং , দারুন কম্বিনেশন!!
দেখা করার ব্যপারটা প্রায়ই মাথায় আসে নীল এর কিন্তু কি অজুহাতে বলবে এটাই ভাবে বারবার।
নীল ও মৌ একজন আরেকজনকে পছন্দ করে কিন্তু তারা ট্র্যাডিশনাল না।
রাত জেগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা কথা বলে না। ফোনে কথা বরং কমই হয়। ভার্চুয়াল জগতই যেন তাদের বেশি টানে। কয়েক মাস কেটে যায় এভাবে। "আই লাভ ইউ " কথাটা আজও কেউ কাউকে বলেনি।
তাদের সামনাসামনি দেখাও হয় নি। দিনের প্রতি ঘণ্টায় তারা কি করছে এই আপডেট নিয়মিত তারা লেনদেন করে, এতেই খুশি। বন্ধুরা অনেকেই নীলকে খোঁচায় "এভাবে আর কদ্দিন, দেখা করবি কবে?? " নীল বলে "এইত সামনে "।
নীল রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত না তবে বামপন্থি মতাদর্শে বিশ্বাসী। দেশে এখন রাজনীতির মঞ্চে পাশা খেলা চলছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে শাহবাগে গড়ে উঠেছে গণজাগরণ মঞ্চ । নীল শাহবাগে যায় প্রতিদিন। স্লোগান দেয়, ব্লগ ও ফেসবুকে রাজাকারদের ফাসির দাবিতে লেখালেখি করতে থাকে। নীলের এইসব কর্মকাণ্ড আশপাশের প্রতিক্রিয়াশীল ডানপন্থী বন্ধুদের তার প্রতি বিমুখ করে তোলে । এদিকে বি এন পি ও জামাত,শিবির রাজাকারদের পক্ষে সারা দেশব্যাপী সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাজারে আরও এক ধরণের নব্য ছাগপন্থী দলের উদ্ভব হয়েছে- হেফাজতে ইসলামি। নীল বড়ই ঠোঁটকাটা স্বভাবের, বি এন পি- জামাত- শিবির- হেফাজত সবগুলোই যে জামাতের দোসর তা নিয়ে সে বেশ কয়েকটি জ্বালাময়ী স্ট্যাটাস ও ব্লগ লেখে। বাসা থেকে বারবার তাকে মানা করে এসব লেখার জন্য , কিন্তু সে বড়ই একরোখা। হেফাজত বাহিনী এদিকে রব তুলেছে ব্লগার মানেই নাকি নাস্তিক !!! এই নাস্তিকদের ফাসি দাবি করে তারা রাজপথে নেমে পড়ে।
সরকার প্রথমে কিছুটা সহনশীল হলেও আস্তে আস্তে বুঝতে পারে হেফাজতে ইসলাম এর সাথে সখ্যতা ভোট এর বাজারে কোন সুফল বয়ে আনবে না।
হেফাজত এর প্রতি সরকার কঠোর হয় একসময়। নিরুপায় ছাগবাহিনী এবার মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা রাজপথে স্লোগান দেয় "একটা একটা শাহবাগি ধর, ধরে ধরে জবাই কর। " নীল এখনও লেখালেখি চালিয়ে যায়, মৌ এর সাথে সম্পর্ক একই জায়গায় স্থির এখনও।
একদিন সন্ধ্যায় নীলকে ওর কিছু বন্ধু ফোন করে, চাঙ্খারপুলে একসাথে খাওয়ার জন্য।
নীল দ্রুত হল থেকে বেরিয়ে পড়ে। রিক্সা না পেয়ে একাই হাঁটতে শুরু করে , বন্ধুরা ওদিকে তার জন্য অপেক্ষা করছে। হঠাৎ কোথা থেকে দৌড়ে সামনে আসে তিনজন মোল্লা । নীল কিছু বোঝার আগেই একজন তাকে জাপটে ধরে, "নারায়ে তকদির" বলে চিৎকার করে আরেকজন। আরেকজন চাপাতি উচু করে এলপাতাড়ি কোপ দেয়া শুরু করে নীলকে।
মাত্র কয়েক মুহূর্ত, নীল লুটিয়ে পড়ে রাস্তায়। তার ফোনটা বাজতে থাকে অবিরত, মৌ ই কল দিচ্ছে। নীল এর দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে ....
(সমাপ্ত) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।