সারাদিন ঘুমিয়ে সন্ধ্যায় ইফতারের ঠিক আগের মুহুর্তে খাবার টেবিলের সামনে উপস্থিত হওয়াটা খুব বেশি অন্যায় বলে আমি মনে করিনা। কিন্তু বাড়িতে উপস্থিত অতিথি নারায়ন যদি শশুর পর্যায়ের কেউ হন তাহলে মাথা চুলকানো ছাড়া কিছু করার থাকেনা।
মিনমিনে গলায় মামা স্লামালেকুম বলে চেয়ারে বসে মাথা নিচু করে ইফতার করে কোন ভাবে বাড়ির বাইরে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। খেতে খেতেই মনে মনে স্মৃতি হাতড়ে অনেক কিছুই খুজে পেলাম যা ভয়ের অন্যতম কারন। যেমন বিয়ের পর বউ নিয়ে শশুর বাড়িতে যাওয়া মাত্র গেইট আকড়ে দাঁড়িয়ে থাকা, টাকা না দিলে ফুলে ফুলে সজ্জিত বিছানাতো দূরে থাক ঘরের দরজা অব্দি যাওয়ার কথা কল্পনা করাও পাপ।
আবার কোন একদিন জীবনের চলার পথে করনীয় কিছু কাজের ভাষন দিতে গিয়ে বললেন,
"ডিসিপ্লিন ইজ লাইফ"
ততক্ষনে বুঝে গেসি জীবনে আরও বহুবার এই ডায়ালগ শুনতে হবে। এই ভবিষ্যত বানী মিথ্যে হয়নি কিছুদিন পরপরই শুনতে শুরু হয়েছে।
কিন্তু মানুষ হিসেবে খারাপ না। যা সাধারনত সেইসব মানুষদের জন্যই আমরা বলি যারা গম্ভীর কিন্তু উপদেশ খারাপ দেন না কিংবা দ্বায় এড়ানোর জন্য বলা।
বাড়ি থেকে বের হতেই গলির মুখে বাস দাঁড়িয়ে আছে।
বুঝে গেলাম আমাকে শাহবাগ পর্যন্ত হেটেই যেতে হবে। মানে হলো বিজয় স্মরনী থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত জ্যাম বাকিটা যেতে যেতেই দেখতে পাব। এ আর এমন কি এই দুর্মূল্যের বাজারে বসুন্ধরা শপিং মল আমাকে একটাকা দিয়ে সাহায্য করতে না পারলেও বাস ভাড়া বাচিয়ে দিয়েছে সাথে হেটে হেটে পথ পারি দিয়ে কিছুটা প্রাণশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে এটাই বা কম কিসে।
ক্যাম্পাসে পৌছেই অপেক্ষারত ছোট ভাইটাকে ফোন দিয়ে জায়গাটা জেনে নিলাম কোথায় আছে সে। এখন সেইতো ক্যাম্পাসে একমাত্র আপন, বন্ধু বলে যাদের জেনেছি সবাইতো একে একে ব্যস্ত জীবন যাপন করছে।
অনেকেই ভুলেও গেছে।
কিছুটা হাটাহাটির পর আমাকে জানালো আমি ধুম্র শলাকা খাব কিনা?
কিছুক্ষন পরে আরেকজন শিল্পী উপস্থিত হলে তাদের কচর কচর কথাবার্তায় বিরক্ত হওয়া সত্তেও হজম করে যেতে হল। তবে আলাপের সারবস্তুটা কিন্তু ভাল। তারা নাকি দেয়ালে পোস্টার লাগাবে তাতে ওবামার ছবি থাকবে। এটা খুব স্বাভাবিক কারন এরা ইউনুসের পরের প্রজন্মের মানুষ।
কিন্তু নীচে যে ট্যাগ লাইন থাকবে তা আমার ভাল লেগেছে। ট্যাগলাইনটা হল......
"believe me i am not a gay"
আমি এর মর্মার্থ কিছু বুঝে উঠতে না পেরে জিজ্ঞেস করে ফেললাম এর কারন কি?
তারা বললো সারা পৃথিবীর পাছা মেরে যাচ্ছে তার পরেও বলছে সে "গে" না। সত্যিই সেলুকাস।
আমি আরও কিছু আইডিয়া শেয়ার করলাম ওদের সাথে। তারপর ভাবলাম বাড়ি যাওয়ার আগে টি এস সি তে এক কাপ চা খেয়ে যাই।
এখানে এসেছি যখন তাহলে কিছুটা মুত্র বিসর্জন দিয়েই যাই তাতে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের অযোগ্য শিক্ষকদের প্রতি নীরব প্রতিবাদটুকু নীরবেই সারা যায়।
ভেতরে যেতেই অবাক!!!!
একি হাল টি এস সি'র মাঠের!!!
এখানে এত পলিথিন কেন? একবার ভেবে বসলাম সহবাসের পর সবাই পলিথিন গুলো হয়তো ডাস্টবিনে ফেলতে ভুলে গেছে। পরক্ষনেই মনে হল না তা কি করে সম্ভব এসব ঐ ভন্ড মুসল্লিদের কাজ যারা ইফতার খেয়ে বাকিগুলো রেখে গেছে। তোদেরকি একটুও লজ্জা হয়না? এই কয়দিন আগেই জাপান থেকে ছেলেমেয়েরা এসে আমাদের ক্যাম্পাস পরিষ্কার করে দিয়ে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল তোদের জন্য ময়লা ফেলার ভাল গাড়ি দিয়েছি এবার এসে নিজেরাই পরিষ্কার করে দিয়ে গেলাম। তারপরও তোদের লজ্জা হয়না, এভাবেই যেখানে সেখানে ময়লা ফেলিস।
আমার হঠাৎ মনে হল একটা ডকুমেন্টারি বানানো হবে যেখানে সন্ধায় ময়লাখেকোরা শকুনের মত মেরুদন্ড বাকা করে বসে ময়লা খাচ্ছে, বার্ডস আই ভিউ থেকে দেখানো হবে। পরে ক্লোজ শটে শুধু ময়লার দৃশ্য গুলো দেখানো হবে।
বাসে করে বাড়ি ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি শাহবাগে যাচ্ছি। বাসে উঠতেই এক হুজুর সামনের সিটে বসে সংরক্ষিত আসনে বসা সুন্দরী নারীটিকে লেহন করে চলছে। মনে হচ্ছে যেন বলছে.......
"রোজার মাস, সারাদিন অনেক সংযম করেই চলতে হয়, চাইলেও, না চাইলেও, ক্ষুধার্তের যৌন চাহিদা বেশি থাকা সত্তেও চেপে রাখি কিন্তু এখন বাসায় গিয়ে গোসল করে সেহরী খাব।
"
ওদের সাথে মারামারি করাতো যাবেনা আর কিছু বলাও যাবেনা কেননা অস্বীকার করলে নিজেরই বিপদ হবে। তাই দুইজনের মাঝে নিজেই দেয়াল হয়ে ঝুলে ঝুলে যেতে থাকলাম। বাংলামোটরে সে নেমে গেল।
আমিও বাসায় ঢোকার আগে কিছু ধুম্রশলাকা কিনে নিলাম। বাসায় ঢুকেই দেখি তিঁনি এখনও আছেন।
আমায় ডেকে কিছু বলার আগেই ফোন করতে করতে রুমে ঢুকে গেলাম অতঃপর বাথরুমে কিছু সময় কাটালাম। আর শব্দ শুনে বোঝার চেষ্টা করছিলাম সে আছে না চলে গেছে................(চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।