আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভার্চুয়াল ভালবাসা -১

নিরর্থক এই জীবনে অর্থকতার খোঁজে চলেছি অজানায় আজ আকাশ মেঘলা, এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে সকালে। এখন ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। নীল আজ ঘুম ছেড়ে উঠতে চাইছিল না। এত সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিল সে!! নীরস জুনিয়রটার অসতর্ক ফোন দিল ঘুমের বারটা বাজিয়ে নীলের বেড জানালার পাশে, জানালা থেকে আসা ঠাণ্ডা বাতাসে ওর চুলগুলো উড়ছে। বাইরে তাকিয়ে দেখল এখনও টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে।

ভার্সিটি বন্ধ ভিসিবিরোধী আন্দোলনের জের ধরে। হলে অলস সময় কাটছে সবার। নীল ফেসবুকে লগইন করে, মৌ নতুন কোন ম্যাসেজ দিয়েছে কিনা চেক করে অধীর আগ্রহে। মৌ ভার্সিটির জুনিয়র,সে থাকে ছাত্রী হলে। মৌ একটা হ্যাপি ইমো দিয়েছে।

মন ভাল করার জন্য এসব ইমো আসলে ওষুধের মত কাজ করে । মৌ অনলাইনে । নীল নক করে । মৌ আজকাল নিজে নক করে না, যদিও নীল নক করলে সে খুশিই হয়। প্রথম প্রথম দুইজনই চ্যাট এ প্রায় সমান সমান কথা বলত।

নিজে থেকে দুইজনই অনেক প্রশ্ন করত। একদিন তারা ঈদ এর ছুটির পর হল এ ফিরছিল। মৌ চট্টগ্রাম থেকে আর নীল খুলনা থেকে। পথে দুইজন ঘণ্টার পর ঘণ্টা চ্যাট করেছিল- সেদিন থেকেই নীল দুর্বল মৌ এর প্রতি। এখন মৌ বুঝতে পেরেছে নীল তার প্রতি দুর্বল।

মৌ এখন ছোট্ট একটা খেলা খেলছে- সে তার জায়গায় থাকবে, নীলকে এগিয়ে আসতে হবে। নীলকে তার দুর্বলতার কথা প্রকাশ করতে হবে। নীল মৌ এর খেলা কিছুটা আঁচ করতে পারে। তবে মনে সন্দেহও হয়। হয়ত সাধারণ বন্ধু হিসেবেই দেখে মৌ।

নীল প্রপোজ করলে হয়ত মৌ রাগ করতে পারে, ঝাড়ি দিয়ে ব্লক মেরেও দিতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি। নীল পড়েছে উভয়সঙ্কটে- একদিকে সে তার ক্রমবর্ধমান দুর্বলতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না আরেকদিকে হুট করে প্রপোজ করার মত দুঃসাহসও দেখাতে পারছে না। শুধু "তোমাকে ভাল লাগে" এটা বলাই তো অনেক কঠিন। বন্ধু শুভকে সব খুলে বলে। বন্ধু হাজারটা বুদ্ধি দেয়, কিন্তু কোনটাই তার মনঃপূত হয় না।

একটা পথই খোলা সেটা হল চ্যাটে কথা বলে যাওয়া। নীল সেটাই করে। মৌ দিনকে দিন যেন কম কথা বলছে আরও। নীল এর একটা জিনিস খুব বেশি সেটা হল ধৈর্য। নিজে থেকে সে মৌ এর বিষয়ে যা যা জানা দরকার প্রশ্ন করে।

নিজের একটা ব্রেক আপ হয়েছিল কিছুদিন আগে সেটাও মৌকে বলে। মৌ খুব ভাল শ্রোতা। সে অনেক আগ্রহ নিয়েই এগুলো শোনে, নীল এর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে। নীল অনেক ভাল ফুটবল খেলে , ভার্সিটি টিম এ খেলছে দুইবছর ধরে। ফুটবল নিয়ে নীল এর অনেক প্যাশন, সে ফুটবলের অনেক গল্প করে মৌ এর সাথে, কিন্তু কেন যেন বেশিরভাগ মেয়েই খেলার কথা শুনে তেমন আগ্রহ বোধ করে না।

নীল মনে মনে হতাশ হয়, তবে কি আর করা কমন ফ্যাক্টর বলে কথা ! মৌকে তো আর দোষ দেওয়া যায় না। নীল আর মৌ এর পরিচয় বেশিদিনের না কিন্তু তাদের আলাপ এর পরিমাণ ও ফ্রিকোয়েন্সি অনেক বেশি । সারাদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শুধু ঘুমানোর সময় বাদে প্রতি আধঘণ্টায় তাদের কয়েকবার মেসেজ বিনিময় হয় ফেসবুক এ। কেউ ই দেখা করা বা ফোন নম্বর নেয়ার উদ্যোগ নেয় না। দুইজনই মাইন্ড গেম খেলছে।

মৌ একদিন অটোক্যাড শিখতে চেয়েছিল নীল এর কাছে। কিন্তু নীল পড়ে ইলেক্ট্রিক্যাল এ । তাদের অটোক্যাড শেখায় না। দুর্ভাগা নীল অন্য ডিপার্টমেন্ট এর বন্ধুদের পিছনে ঘুরতে শুরু করে - কেউ যদি তাকে শেখায় অটোক্যাড !! অবশেষে এক মহৎ বন্ধু তাকে শেখায়। নীল তো আনন্দে আটখানা, এবার একটা সুযোগ পাওয়া গেছে দেখা করার।

কিন্তু রুমমেট ও ব্যাচমেট কিছু বন্ধু নীল এর এই অটোক্যাড শেখার খবর জানতে পারে । সবাই মিলে নীলকে ক্ষেপায় "মেয়ে পটানোর জন্য তুমি অটোক্যাড শিখছ মামু!!! "। নীল লজ্জা পায় তবে নিরুৎসাহিত হয় না। বন্ধুরা যদি বুঝত তার মনের অবস্থা , মৌ এর জন্য তার মনে যে ঝড় উঠেছে তা কি কেউ বুঝবে?? নীল ভাবতে থাকে, অটোক্যাড তো হাতে আছেই কিন্তু ওইভাবে সে মৌ এর সান্নিধ্য পেতে চায় না। সে চায় আগে তার ভাললাগার কথা প্রকাশ করতে ।

মনে সাহস সঞ্চয় করে সে। মৌ কেমন ছেলে পছন্দ করে এটা জিজ্ঞাসা করে সে । মৌ বলে অনেক ভাবতে হবে এটা বলার জন্য , পরে বলবে । নীল বলে "ওকে "। কথায় কথায় মৌ বলে সে নাকি সিঙ্গেল হিসেবে অনেক ভাল আছে আর তার আইনজীবীদের পছন্দ পার্টনার হিসেবে ।

নীল যারপরনাই হতাশ । পরদিন সে বহু চিন্তার পর অফলাইন এ একটা লম্বা মেসেজ লেখে মৌ কে -- "মৌ, আর ন্যাকামি করতে চাই না.তুমি আগেই বুঝতে পেরেছ কিনা জানি না. তোমাকে আমার অনেক ভাল লাগে । তুমি হয়ত জিজ্ঞাসা করবে কেন-আগে থেকেই উত্তর দিয়ে দিই। দুই একটা গৌণ বিষয় বাদে তোমার সাথে আমার প্রায় সব চিন্তাভাবনা মিলে যায়। তোমার চেহারা সৌন্দর্যের কথা আর তুলতে চাই না।

আমার কাছে তুমি অনেক সুন্দর। আমি হয়ত আইনজীবী হতে পারব না এবং সিঙ্গেল হিসেবে তুমি অনেক সুখীও হতে পার। তবে আমি তোমার হ্যাপিনেসকে অনেক গুরুত্ব দেব। তোমাকে সবসময় খুশি রাখার চেষ্টা করব। প্রশ্ন করতে পার তোমাকে না দেখেই কিভাবে ভাল লাগল এত,ফেসবুক এ তো অনেক ছবি দেখলাম ই , সামনাসামনি দেখেও আমার অনুভুতির কোন পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না।

আর দেখা করার সুযোগ তো আছেই সামনে। আর যেসব সমস্যার কথা বলতে পার তা হল- তুমি উচ্চবর্ণের আর খুলনা ও চট্টগ্রাম ফ্যাক্টর। এটা আমার হাত এ থাকলে না হয় সমাধান করতে পারতাম। সবকিছু কি সব সময় সল্ভড থাকে! শেষে বলতে পারি এসব যুক্তি ও লজিক দিয়ে আমি তোমাকে পছন্দ করি নি,আগে পছন্দ করেছি এবং এগুলো নিয়ে ভেবেছি অনেক পরে। আর আমি কোনকিছু বানিয়ে বা তোমাকে খুশি করার জন্য বলি নি।

তুমি উত্তর দিও , আমি অপেক্ষা করব " দ্বিতীয় পর্ব ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।