আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই বর্ষণ সন্ধ্যায়

মুক্তমন। █▓▓▓▒▒▒░░░░ খুব বৃষ্টি হচ্ছে। ঝুম বৃষ্টি। কিন্তু কংক্রিটের ঢালাইকৃত ছাত। ওতে বৃষ্টির বড় বড় ফোটাগুলো ছট্ ছট্ শব্দ তুলে ছড়িয়ে পড়ছে।

অঝোরে। আমি ওদের পাশে দাঁড়িয়ে। তুমিও সাথে। খুউব উপভোগ করছি আমরা। বৃষ্টিদের ঝাঁপিয়ে পড়া।

# মিতু! ## কী... # তোমার কি মনে পড়ে! আমাদের যেদিন প্রথম দেখা হয়েছিল, সেদিনের কথা? ## হুম... মনে আছে মানে... সারা জীবন মনে থাকবেন। সেদিনটাও তো এমন বর্ষণমূখর ছিল! # তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে বৃষ্টিতে। কোনও কারণ বশতঃ তোমার কাছে ছাতা ছিলনা। তুমি সিএনজি’র অপেক্ষায় ছিলে। আমি তোমার দিকে আমার ছাতাটা বাড়িয়ে ধরতেই তুমি মুচকি হেসে বলেছিলে- “না থাক, ওটা লাগবেনা।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ” ## ওহ হ্যাঁ... মনে পড়ে। তুমি তো একটা পাগল। নইলে একটা অপরিচিত মেয়েকে ওভাবে কেউ সাহায্য করতে যায় নাকি! # কী বললে... আমি পাগল! তাহলে পরে ছাতা নিয়েছিলে কেনো? ## তোমার পাগলামো দেখে... হি হি হি হি... # দাঁড়াও... দেখাচ্ছি মজা... হো হো হো... ## অ্যাই... করছো কী তুমি... ছাড়ো... ছাড়ো... কেউ দেখে ফেলবে তো... ... ... ৫০ বছর পর আজও বৃষ্টির দিন। ১৪৪০ বাংলা বর্ষ।

বছরের প্রথম বর্ষণ সন্ধ্যা। কিন্তু বৈশাখী বৃষ্টির এই ছন্দময় ঝুম-ঝুম শব্দ আমার ভালো লাগছে। এই বৃষ্টি আমাকে মিতুর কথা মনে করিয়ে পীড়া দেয়। আজ ও বেঁচে নেই। পাঁচ বছর আগে ওপারের ডাকে পাড়ি জমিয়েছে।

প্রায়ই স্বপ্নে আসে। আমাকে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু আমি যে সময়ের আগে তার কাছে যেতে পারবো না! ও বেঁচে থাকলে আজ কতোইনা আনন্দ হতো। বৃষ্টিতে ভেজা ওর অনেক পছন্দের ছিল। আমি ভাবনায় হারিয়ে গেলাম....................... মিতুর সাথে আমার নতুন পরিচয়।

এরপর বন্ধুত্ব। অতঃপর গভীর বন্ধুত্ব। একটা সময় আমি ওকে ভালোবেসে ফেলি। কিন্তু তাকে বলা হয়না। কারণ, সেও একটা ছেলেকে ভালোবাসে।

তাকে সে বিয়ে করবে। তাই, আমি তাকে শুধু শুধু দুঃখ দিতে চাইনা। আমাকে সে একজন ভালো বন্ধু হিসেবেই জানে। আমি তার বন্ধুত্বের মূল্যায়নই করতে চাই। বেশি কিছু নয়।

কিন্তু তা-কী হয়? সূর্য কি মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দেয় না? ব্যাপারটা ঠিক তেমনই। একদিন ও আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করে বসল। “আচ্ছা” মিতু বলল, “তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?” “কে বলল আমি তোমাকে ভালোবাসি। ” আমি বললাম, “কী যা-তা বলছ এসব। ” “না, এমনিই বললাম।

কিন্তু তোমার হাবভাব দেখে তো আমার তা-ই মনে হয়। হি হি হি...” “ধ্যাৎ, বলেছি না, আমি তোমায় ভালোবাসি না!” আমি অন্যদিকে ফিরে বললাম, “আমার বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে তুমি যদি তা-ই মনে করো, তাহলে আমি আমার কিছু করার আছে!!” “আরে বাবা, তুমি রেগে যাচ্ছো কেনো! আমি তো এমনিতেই বললাম কথাটা। আসলে এইসব কথা লুকোতে নেই। এই জাতীয় কথা বুকে চেপে রাখলে শুধু কষ্ট বাড়ে বৈ কিছুই হয় না। তাই বলছিলাম কি, ভালোবেসে থাকলে অকপটে বলতে পারো।

” এই বলে সে মুচকি হাসতে থাকল। নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাসের অনুভব পেলাম। ভাবলাম। তাকে বলে কী লাভ! সে-তো অন্যকে ভালোবাসে। সে কি আমাকে ভালোবাসবে? সে কি রাতুলকে ভুলতে পারবে!! এটাতো কখনও সম্ভব নয়! তাহলে আর আমার ভালোবাসার কথা তাকে বৃথাই বলতে যাবো কেন? নাহ, তাকে কিছুতেই বলা যাবে না।

মিতু আর এই ব্যাপারে আমাকে কিছু বলল না। কিন্তু তার মনে খুঁত-খুঁত রয়েই গেল। ২ বছর পর। একদিন সকালে একটা ফোন এল। মিতুর কল।

কী ব্যাপার! এতো সকাল সকাল ওর আবার কী হলো! কলটা রিসিভ করতেই ওপাশে মিতুর কান্নাজড়িত কণ্ঠ শুনতে পেলাম। আমার খুব খারাপ লাগলো। “মিতু! তোর কী হয়েছে?” ও কেঁদে কেঁদে যা বলল–– “রাতুল গ্রামের বাড়ি গিয়েছিল। গত একমাস যাবৎ তার সাথে মিতুর কোনও যোগাযোগ ছিল না। তার সেল ফোনটাও বন্ধ ছিল এতদিন।

কাল যখন সে বাড়ি থেকে আসল তখন জানা গেল- বাড়ি গিয়ে সে বিয়ে করেছে। বৌকে নিয়েই ঢাকা এসেছে। ” আমি তো অবাক হয়ে কেবল শুনেই যাচ্ছিলাম। এক সময় ও আমাকে বলল, “শুভ, এখন আমার কী হবে রে...” “একটু শান্ত হ। ” আমি ওকে সান্তনা দিয়ে বললাম, “তোর কোনও ভয় নেই।

অফিসে ফোন করে জানিয়ে দে তুই অসুস্থ। তারপর হিরাঝিলে চলে আসবি। তখন আলাপ করা যাবে। ” ওর চোখ দু'টো ফুলে আছে। বোঝাই যাচ্ছে অনেক কেঁদেছে।

ও বলল, “জানিস, ওর সাথে কথা ছিল আগামী এপ্রিলে ও আমাকে বিয়ে করবে। অথচ দেখ কতবড় বিশ্বাসঘাতকতা করল। গত একবৎসর যাবৎ ওর ব্যবহার আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। কিন্তু ভাবনাকে প্রশ্রয় না দিয়ে সব সময় তাকে বিশ্বাস করে এসেছিলাম। আজ তার এই ফল পেলাম।

হুহ... মনটা চায় কতোগুলো ঘুমের অষুধ খেয়ে চিরতরে শুয়ে পড়ি। ” কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে গেল ও। “না, তোকে মরতে হবে না। ” আমি তড়িতে ওকে বললাম, “রাতুল ছাড়া তুই কি অন্য কোনও ছেলেকে পছন্দ করিস?” “করি। ” ও ইতস্তত করে বলল, “কিন্তু সে বোধ হয় আমাকে স্ত্রী হিসেবে পছন্দ করবে না।

” “আচ্ছা, তোর জানামতে কোনও ছেলে কি তোকে পছন্দ করে?” “তাতো বলতে পারি না... তাছাড়া কেউ পছন্দ করলেই কি তাকে বিয়ে করবো নাকি! পাগল ভেবেছিস আমাকে?” “তাহলে কী করবি?” “মরে যাবো...” “না; এটার চিন্তা বাদ দিয়ে বল...” “আচ্ছা শুভ... তোকে তো কোনও দিন কোনও মেয়ের কথা তুলতে শুনিনি! তোর কি কোনও প্রেমিকা টাইপ কিছু নেই? কিছু মনে করিসনা আবার। এমনিতেই জিজ্ঞেস করলাম। ” “না না। কী আর মনে করবো। আমি কিছুই মনে করিনি।

” “তাহলে বল... ” “হুম... আমার কোনও প্রেমিকা নেই। কিন্তু আমি একজনকে ভালোবাসি। ” “সেই ভাগ্যবতি মেয়েটা কে রে... আমাকে তো কোনওদিন বলিসনি!ত... অথচ আমার কতো কিছুই তো তোকে বলতাম!” “বলতেই হবে?” “বললে বল... না বললে না। আমি তো তোকে কোনও চাপ দেইনি...” এর পর কিছুক্ষণ নিরবতা.............................. “আসলে কী... আমি তোকেই ভালোবাসতাম। ” এক সময় আমি খুব ধীর গলায় ওকে বললাম, “এখনও ভালোবাসি।

কিন্তু তুই তো রাতুলকে ভালোবাসিস। তাই কোনওদিন তোকে জানতে দেইনি...” “ওহ! তাই নাকি...” মিতু মুচকি হেসে বলল, “তুই যে আমাকে ভালোবেসেছিস তাতো আমি কবে থেকেই অনুমান করেছিলাম। তোকে তো একবার জিজ্ঞেসও করেছিলাম। তুই-ই তো চেপে গিয়েছিলি। তুই নিজেকে অনেক চালাক ভাবিস, না? আসলে তুই একটা বোকা।

” “হুম... আমি আসলেই অনেক বোকা। শুধু তোর জন্যে। আচ্ছা... আমি যদি তোকে বিয়ে করতে চাই তাহলে তোর কোনও আপত্তি আছে?” ও কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর আমার হাতটা চেপে ধরে বলল, “কী যে বলিস না! তুই আমাকে বিয়ে করবি? হা হা হা হা... আমি যে তখন ধন্য হয়ে যাবো রে................ তুই আমার শুভ... তোকে আমি হারাতে চাই না...” মিতুর দু'চোখ বেয়ে ক'ফোটা অশ্রু তার গন্ডদ্বয় বেয়ে গড়িয়ে পড়ল... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।