সমগ্র বাংলাদেশ ৫ টন, তার মধ্যে আমি একাই ৫৪ কিলোগ্রাম কলেজ থেকে ফেরার পথে বাসে ওঠার আগে শাওন তার বন্ধুকে ডেকে বলেছিল
“জারিফ, তুই নোট টা ফটোকপি করার সময় আমার জন্য এক কপি এক্সট্রা করিস, আমি কাল তোকে টাকা দিয়ে দেবো”
বাসের নোংরা সিটে বসে আগামী মঙ্গলবারের পূর্বপরিকল্পিত আড্ডার কথা চিন্তা করছিল শাওন,
অনেকদিন পর স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে একটা চরম আড্ডা দেয়ার প্ল্যান টা তার মাথা থেকেই এসেছিল।
১০ তারিখে সবুজের জন্মদিনে কী উপহার দেয়া যায় তা নিয়েও চিন্তা করলো কিছুক্ষন।
বাস থেকে নেমে বাসায় ফেরার আগে ছোট বোন সাথীর আবদার অনুযায়ী একটা বড় kitkat কিনতে হব, লক্ষ্মী বোনটি নিশ্চয় ভাইয়ায় ঘরে ফেরার অপেক্ষায় আছে, আজ শাওন বাসায় গিয়ে বলবে যে সে kitkat আনতে ভুলে গ্যাছে, কল্পনায় বোনের অভিমানি মুখটি দেখে আপনমনেই হেসে ওঠে সে।
বিকেলে রিজভিদের বাসার সামনে ক্রিকেট ম্যাচ আছে, একটা টেপ আর টেনিসবল কিনতে হবে।
হঠাৎ পকেটে মোবাইল বেজে ওঠে, মায়ের কল...
“কইরে মনু!! কতদুর??” উদ্বিগ্ন কণ্ঠে প্রশ্ন করে মা।
(মা আদর করে মনু ডাকে, যদিও নামটা শাওনের খুব একটা পছন্দের না!!!)
“এইতো আম্মু আসছি, বাসে উঠেছি”
“আসার সময় আমার জন্য প্রেসারের ওষুধ আনতে পারবি?!! টাকা আছে তোর কাছে?!!”
“হ্যাঁ আম্মু আছে, নিয়ে আসবো। আর কিছু?!!”
“সাবধানে আসিস বাবা....”
শাওন বুঝে পায়না মা এতো দুশ্চিন্তা কেন করে!! মায়ের আরও কিছু উপদেশ শুনে কোনোমতে “হ্যাঁ... হুঁ....” উত্তর দিয়ে লাইন কেটে দ্যায় ও।
“এক্সকিউজ মি বস ইউ হ্যাভ আ নিউ ম্যাসেজ”
মোবাইল পকেটে রাখতে গিয়েও ম্যাসেজ টোন শুনে আবার বের করে সে...
সুমনার ম্যাসেজ...
“বাসায় গিয়ে কল দিও তো, নোট লাগবে কয়েকটা”
সুমনা ওর সহপাঠিনী (শুধু সহপাঠিনী বললে ভুল হবে, আরেকটু বেশিই বটে)
অসুস্থ বলে গত তিনদিন ক্লাসে আসেনি। শাওন সিদ্ধান্ত নেয় আজ সন্ধ্যায় সুমনার বাসায় গিয়ে নোট গুলো দিয়ে আসবে (বাসায় যাওয়ার মূল কারন ‘নোট দেওয়া’ না, মূল কারন হল গত তিনদিন ওদের দেখা হয়নি)
সারাদিন বিভিন্ন প্রকার কাজে (এবং অকাজে) এতো ব্যাস্ত থাকে যে কোনো কিছু ঠিকভাবে চিন্তা করার সময়ই পায়না, আর বাসে করে বাসায় ফেরার এই সময়টায় এইসব চিন্তা একসাথে মাথায় এসে ভর করে...
সামনেই নেমে যাবে শাওন, এতক্ষন ধরে চিন্তা করে বের করা কাজগুলো সাজিয়ে নিতে থাকে সে মনেমনে...
বাসের সিট ধরে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বলে
“মামা, সামনে নামিয়ে দিও”
রিয়ারভিউ মিররে আড়চোখে তাকিয়ে শাওনকে দেখে ড্রাইভার। সামনে তাকায় আবার, সামনেই পুলিশের অস্থায়ী চেকপোস্ট, সার্জেন্ট দাঁড়িয়ে, তার ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।
চলন্ত বাস থেকেই ছেলেটাকে নামিয়ে দিয়ে দ্রুত চেকপোস্ট পারহয়ে যেতে হবে, স্লো করলেই গচ্চা গিতে হবে ৫০০ টাকা...
“মামা স্লো করো নামবো তো...!!!”
“আর স্লো হইবোনা নামেন” কমবয়সী হেল্পার বলে ওঠে...
ডান হাতে বাসের দরজার হাতল ধরে, বাম পা বাড়িয়ে দ্যায় শাওন।
কাঁধে ব্যাগ, চোখে স্বপ্ন আর পায়ের নিচে দ্রুত পিছনে সরে যাওয়া রাস্তা।
বাসটা আরেকটু স্লো হলে ভালো হতো, তবে অসুবিধা হবেনা এভাবে আগেও নেমেছে শাওন, একধরনের বিরল অনুভুতি ভর করে এভাবে নামার সময়।
হাতল থেকে হাত ছেড়ে দিচ্ছে শাওন, পুলিস সার্জেন্ট তাকিয়ে আছে বাসটির দিকে, আক্সিলেটরে চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে ড্রাইভার।
হতচকিত শাওন কিছু বুঝে ওঠার আগেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে রাস্তার ওপর।
বাসের ভিতরের, রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে বসে থাকা মানুষগুলো হইহই করে ওঠে, উঠে দাঁড়িয়ে যায় বাসটির দিকে তাকিয়ে।
শাওন দেখতে পায় বাসের পিছনের জোড়াচাকা এগিয়ে আসছে তাঁর দিকে।
মারা যাওয়ার ঠিক পূর্বমুহূর্তে শাওন পোড়া পেট্রোলের গন্ধ পায়...
শাওন স্বপ্নভরা চোখ বন্ধ করে ফেলে।
ওইসময় তাঁর খুব ইচ্ছা করছিল খরতপ্ত রাস্তায় বৃষ্টির ফোঁটা দেখতে,
আর ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ নাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে...
পুনশ্চঃ জারিফের আর এক্সট্রা এক সেট ফটোকপি করা লাগেনি
পুনশ্চঃ আগামী মঙ্গলবার আড্ডা হবে কি না নিশ্চিত না
পুনশ্চঃ জন্মদিনে সবুজ একটা উপহার কম পাবে
পুনশ্চঃ সাথী kitkat এর চেয়ে তাঁর ভাইকে বেশি ভালবাসে
পুনশ্চঃ রিজভিদের আজকের ম্যাচ কোনও ঘোষণা ছাড়াই ক্যান্সেল হয়ে গ্যাছে
পুনশ্চঃ মায়ের প্রেসারের ওষুধ কেনা হয়নি এখনো
পুনশ্চঃ তিনদিন পর সুমনা আর শাওনের দেখা হয়েছিল, তবে কথা হয়নি
বিকেলের দিকে বৃষ্টি হয়েছিল, খরতপ্ত রাস্তায় ইট দিয়ে ঘিরে রাখা, কাগজ দিয়ে ঢেকে রাখা শাওনের রক্ত বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে মিশে গিয়েছিল বৃষ্টির সাথে... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।