বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার অধীন চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির চিনিকলের ২২ কোটি টাকার চার হাজার ৪০৯ দশমিক ৬ মেট্রিক টন অবিক্রিত চিনি গুদামে পড়ে আছে। আর বর্ষা মৌসুম হওয়ায় গলে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ চিনি।
দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম সুদর্শন জানান, ২০১১-২০১২ মৌসুমে এই চিনিকলে চার হাজার ৩৭৩ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়। ২০১০-২০১১ মৌসুমের অবিক্রিত চিনি ছিল একশ’ ৯২ দশমিক ৬ মেট্রিক টন। ২০১১-২০১২ উৎপাদন মৌসুমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ১৫৬ মেট্রিক টন চিনি বিক্রি হয়েছে।
বর্তমানে চিনিকলের গোডাউনে অবিক্রিত চিনির মজুদ আছে চার হাজার ৪০৯ দশমিক ৬ মেট্রিক টন। সরকার নির্ধারিত দরে এর বর্তমান মূল্য ২২ কোটি ৫ লাখ টাকা।
এই চিনিকলে উৎপাদিত চিনির গুণগত মান তুলনামূলকভাবে ভালো। এদিকে বেসরকারি রিফাইনিং মিলগুলো সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে কমদামে বাজারে চিনি বিক্রি করছে। ফলে বাজারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চিনিকলগুলোর উৎপাদিত চিনির ক্রেতা নেই।
খোলাবাজারে চিনি বিক্রির অনুমতি দেওয়ার পর ৩১ জুলাই পর্যন্ত এ মিলের চিনি বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৫৬ মেট্রিক টন।
১৯ জুলাই থেকে সরকার প্রতি কেজি চিনির মিলরেট ৫টাকা কমিয়ে ৫০টাকা এবং বাজারে খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এর পরও কেরু কোম্পানির চিনিকলে উৎপাদিত চিনি বিক্রি হয়েছে মাত্র ১২ মেট্রিক টন। যা রীতিমত হতাশাব্যঞ্জক।
এ বিষয়ে চিনিকলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম সুদর্শন মল্লিক বলেন, আগামী দুই-তিন মাস পর মাড়াই মৌসুম শুরু হবে।
ফলে চিনি রাখার জায়গারও দরকার। চিনি বিক্রি না হওয়ায় আর্থিক সংকটও চলছে। মজুদকৃত চিনি সংরক্ষণে অসুবিধা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম হওয়ায় চিনি গলে যাচ্ছে।
২০১১-১২ আখ মাড়াই মৌসুমে কেরু চিনিকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ১১ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন।
কিন্তু আখের অভাবে ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। চিনি উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৩৭৩ মেট্রিক টন ।
১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই চিনিকলটিতে চিনি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৯০-এর দশকের পর থেকে কেবল লোকসানই হচ্ছে। লোকসানের জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতাই দায়ী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
দর্শনা বাজারের চিনির ডিলার আব্দুর রহিম, আবেদ আলী ও আব্দুল খালেক জানান, কেরু কোম্পানির ৫০ কেজির এক বস্তা চিনির দাম আড়াই হাজার টাকা ।
গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচ দিয়ে বাজারে আনতে খরচ পড়ছে প্রায় ২হাজার পাঁচশ’ ৫০ টাকা। এতে প্রতি কেজি চিনির ক্রয়মূল্য দাঁড়াচ্ছে ৫১ টাকা।
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন রিফাইনারি কোম্পানির যে চিনি পাওয়া যায় তা ধবধবে সাদা ও ঝরঝরে। আর কেরু চিনিকলের চিনি অপেক্ষাকৃত লাল ও ভেজা। সে কারণে দাম একই হলেও খুচরা ক্রেতাদের কাছে রিফাইনারি কোম্পানির চিনির চাহিদাই বেশি।
তাই এই মুহূর্তে লাইসেন্স টিকিয়ে রাখার স্বার্থে যতটুকু প্রয়োজন সেই পরিমাণ চিনি মিল থেকে উত্তোলন করছেন ডিলাররা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।