সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি সম্পর্কে কোরআনে সুস্পষ্ট আয়াত বা হুকুম বিদ্যমান। যেমন, পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে- 'তোমরা পানাহার করো যে পর্যন্ত না তোমাদের কাছে ভোরের কালো রেখা সাদা রেখায় প্রকাশ পায়, আর রাত পর্যন্ত সিয়াম পালন করো। '
ইফতারের সময় সম্পর্কে যাতে উম্মাহর মধ্যে কোনো সন্দেহ বা দ্বিধাবিভক্তির সৃষ্টি না হয়, এর সব প্রমাণ, নির্দেশ, দলিল ও ব্যাখ্যা কোরআনে বিদ্যমান। আল্লাহ দিবা-রাত্র এবং মধ্যবর্তী বিভিন্ন সময় উল্লেখ করতে ভিন্ন ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেমন 'লাইল' অর্থ রাত, তা কোরআনে ১৬২টি স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে; কোরআনে ব্যবহৃত 'লাইল' শব্দ দ্বারা কখনো, কোনোভাবেই সন্ধ্যাকে বা সূর্যাস্তের সময়কে বোঝায় না।
তদ্রূপ সবাইকে 'বুকরা', অপরাহ্নকে 'নাহার' বলা হয়েছে। কোরআনে বিকেলের সময় সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরা 'সুরা আল আসর' বিদ্যমান। সন্ধ্যা সম্পর্কে 'আসিল' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে (১৩:১৫)। প্রভাতকাল সম্পর্কে সুরা মুদাচ্ছিরের ৩৪ নম্বর আয়াতে 'সুব' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। সূর্যাস্তের সময়কে কোরআনে সুরা তাহা ১৩০, কাহাফ ৮৬ এবং ক্বাফ-এর ৩৯ নম্বর আয়াতে 'গুরুবে শামস' বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশে রক্তিম আভার সৃষ্টি হয়, যা ১৮ থেকে ২৬ মিনিট পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে, সে সময়কে সুরা ইনশিক্বাকের ১৬ নম্বর আয়াতে 'শাফাক্ব' শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে এবং শাফাক্বের পূর্ণ সমাপ্তির পরই যে 'লাইল' বা রাত শুরু হয় তাও সুরা ইনশিক্বাকের ১৬ ও ১৭ নম্বর আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।
উল্লিখিত সব আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, 'লাইল' বা রাত হলো এমন একটি সময় যা পরিপূর্ণভাবে বা সম্পূর্ণভাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন। যেখানে দিনের আলোর উপস্থিতির কোনো প্রশ্নই আসতে পারে না। 'লাইল' অর্থ রাত, শাফাক্ব, গুরুবে শামস, আসর বা আসিল নয়। কোরআনে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ আছে, 'রাতে তোমরা সিয়াম পূর্ণ করো।
' হাদিস শরিফ থেকেও আমরা প্রমাণ পাই, আল্লাহর রাসুল (সা.), সাহাবায়ে কেরামরা কখনো গুরুবে শামস বা সন্ধ্যার সময় ইফতার করেননি। সম্পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন তথা রাত শুরু হওয়ার পরই তাঁরা ইফতার করতেন।
ইমাম মালেকের মুয়াত্তার প্রথম খণ্ডের ২৩৯ পৃষ্ঠার ৬৯৪ নম্বর হাদিসে উল্লেখ আছে, 'হুমহিদ ইবনে আবদুর রহমান থেকে বর্ণিত, উমর বিন খাত্তাব (রা.) ও উসমান বিন আফফান (রা.) উভয়ে মাগরিবের নামাজ পড়তেন এমন সময়- রাতের অন্ধকার ছেয়ে যেত আর এটি ইফতারের আগে। অতঃপর তাঁরা উভয়ে ইফতার করতেন। এ শিক্ষা তাঁরা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছ থেকে পেয়েছেন।
'
বোখারি ও মুসলিম হাদিস গ্রন্থে হজরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, 'সূর্যাস্তের পর যখন পূর্ব দিক থেকে অন্ধকার হয়ে আসে এবং দিনের আলো পশ্চিম দিক থেকে সম্পূর্ণ চলে যায়, তখন রোজাদারদের জন্য ইফতারের সময়। ' (আরো দেখুন তাফসিরে ইবনে কাসির, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)।
হজরত ইবনে সা-দ সায়েদী থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যত দিন মানুষ জলদি ইফতার করবে, তত দিন তারা কল্যাণপ্রাপ্ত হবে। ' (বুখারি ও মুসলিম)।
সত্বর ইফতার করার মানে এই নয়, ইফতারের সময় হওয়ার আগেই ইফতার করে ফেলতে হবে! রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই হাদিস দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে, ইফতারের সময় হলে বিলম্ব না করে যেন ইফতার করে ফেলা হয়।
আল্লাহপাক আমাদের বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করুন এবং কোরআনের আদেশ-নিষেধ মেনে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।