আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুভূতি,চেতনা আর বিপ্লবের মেটামরফোসিস এবং ভালো লাগা একটা ব্যান্ড, কিছু গান। [পর্ব -২]

একি আজব কারখানা........... ব্যাক্তিগত ভাবে আমি অনেক ইমোশনাল টাইপের একটা ছেলে। রুদ্র, শক্তি কিনবা হেলাল হাফিজের একটা মর্মস্পর্ষী কবিতা, দস্তয়ভস্কি কিংবা হুমায়ুনের হৃদয় ছোয়া গল্প, অথবা কুবরিকের একটা মুভি দেখে আমি কেদে ফেলি অনায়াসে। যথাসম্ভব আমি অনেক দূর্বল চিত্তের মানুষ, কিন্ত এই মানুষ টার ভিতরে লুকিয়ে আছে একটা অভিমানী, বিপ্লবী সত্তা। এই সত্তাটাকে আজ নাড়া দিয়ে গেছে কিছু গান, একটি এলবাম, একটি ব্যান্ড। সেই জন্যেই মনের ভিতরের অনেক কথা বেরিয়ে এসেছে সুশীলতার দেয়াল টপকে।

এই পোস্ট প্রসবের পিছনে ইহাই মূল কারন। সেই সাথে গানগুলো নিয়ে কিছু কথা তো হবেই। তার আগে আমার কিছু কথা, আমাদের এক স্যার সবসময় বলতো, "তোমরা যারা ক্রিয়েটিভ স্টাডিজে পড়ছো,তারা একটা কথা মনে রেখো, এই যে তোমাদের মনে এত অভিমান বা দুখ, কারো প্রেম নিয়ে আর কারো বাস্তবতার টানাপোড়নে, এইগুলা কিন্ত বৃথা যাবেনা। এই অনুভূতিগুলার বহিপ্রকাশ ঘটবে তোমাদের শিল্পসত্তার মাধ্যমে। কারো আকা ছবি থেকে, কারো বানানো ফিল্ম থেকে, অথবা কারো সুরের মূর্ছনায়।

" গ্রাজুয়েশনের শেষ দিন পর্যন্ত স্যার এ কথা বার বার বলতেন। এখন বুঝতে পারি,স্যারের প্রতিটা কথাই চরম ভাবে সত্যি। কল্পনা শক্তির সীমারেখা না থাকলেও তার ফুয়েল কিন্ত বাস্তবতার কাছ থেকে ধার করা। আজকে কেউ গান/কবিতা লিখে প্রতিবাদ করছে, কেউ এক্টিভিজমে, কেউ বা আমার মত স্বপ্ন দেখে সেলুলয়েডে বিপ্লবের। দিন শেষে দেখবেন আমাদের সংগ্রাম আর বিদ্রোহের সমস্ত আউটপুট শিল্প সংস্কৃতির মাধ্যমেই।

বুড়া মৌলবাদীদের দিন আর নাই, এই যায়গাটা দখল করবে মুক্তমনা সব তরুন। মিডিয়া বা সাংসকৃতিক আগ্রাসনের মোকাবেলা করতে হবে শিল্পের মাধ্যমেই। এখন সময়টা লিটারেলি হাতিয়ার বা অশ্রসস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করার নয়, বরং কলমের আর ক্যামেরার মাধ্যমে যুদ্ধ করার। হেজেমনিকভাবে বৃটিশ বেনিয়ারা, তারপর পাকি কুত্তারা আর এখন কালচারাল এগ্রেসনের মাধ্যমে আমাদের মাথায় যে সব অনাচার বসিয়ে দেয়া হয়েছে তা উপড়ে ফেলার সময় হয়ে গেছে। এগ্রেশন টা এখন শিল্পের, মিডিয়ার, কাজেই যুদ্ধটাও হবে টা এখন শিল্প সংস্কৃতি আর মিডিয়ার মাধ্যমে।

নিজেদের কালচার কে আমরা বিশ্ব দরবারে একটা বেস্ট প্লেস করে দিতে পারলে, সেটাই হবে আমাদের বড় জয়। আমাদের তরুনদের ,মনে অনেক ক্ষোভ, অভিমান দানা বেধে আছে,যা খুজে পাওয়া যাবে শিল্পের মাধ্যমে। আমি একেবারে রিসেন্ট সময়ের কথা বলি। সেই ২০০৩-০৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড হটাৎ করেই একটা ভীষন নাড়া দিয়েছিলো কিশোর তরুনদের মনে। যারা ২০০১-২০০৬ এর মাঝে এসএসসি বা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সময় টা পার করেছেন, তারা অনুভব করবেন ব্যাপার টা।

এখনো মনে আছে পাগলের মত ছুটে যেতাম তাদের যে কোন কনসার্ট এ, সবগুলা এলবাম কিনে শুনতাম। দারুন আশাবাদী হয়ে গিয়েছিলাম,তারুন্যের উদ্যমতায় বাংলা ব্যান্ডের গান নিয়ে। প্রথমত একটা ফেজ গেছে নাইন্টিযে যে সময়ে প্রমিথিউসের মত ব্যান্ড পর্যন্ত "এখনো আমি কৃতদাস" টাইপের বিদ্রোহী গান গাইতো। দ্বিতীয়ত, সেই আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডের ফেজ টাতে, যখন ব্ল্যাক, আর্টসেল অর্থহীন অথবা ক্রিপ্টিক ফেইটের মত ব্যান্ড বাদ দিলেও আরো শত ব্যান্ড পাওয়া যেত রক বা মেটাল ঘারানার। তাদের লিরিক্স ছিলো বিয়ন্ড প্রেম, সমাজ থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত।

লিরিক্স আর কম্পোজিশনের এই পরিবর্তন সবাইকেই একটা ধাক্কা দিয়েছিলো। এই রকম ধাক্কা আরো দরকার। কেন তা বলছি ক্রমান্বয়ে। কোন এক অদ্ভুত কারনে, আমাদের গায়ে পরিবর্তনের ছোয়া লাগতে দেয়া হয় না, পরিবর্তনের প্রসেসে আমাদের কঠিন ভাবে বদ্ধ করে রাখা হয়। এই একগুয়েমি কি জন্যে, তা আমি বুঝিনা।

এই যে পরিবর্তন, এটা কিন্ত নতুন কিছু নয়, সেই ইংরেজী লিটারেচারে পিউরিটানদের ঝেড়ে ফেলে ক্লাসিক লিটারেচারের আগমন, কবিতার হাংরি মুভমেন্ট কিংবা সিনেমায় কুবরিকের ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ। এ সবি ছিলো প্রচলিত সমাজ , সংস্কৃতির উপর চপেটাঘাত। যেটা এই মুহুর্তে আমাদের সমাজে খুব দরকার। রাজ কাপুরেরা এক সময় ওয়েস্টার্ন কালচারের কাছ থেক এডপ্ট করেছিলো বলেই আজ বলিউড ইন্ডাস্ট্রি এই যায়গায়। আমরা তো বারাবরি প্রগতিশীল।

৭১ এর পর আমাদের ছাত্র সমাজে চলতো কমিউনিজমের চর্চা, এমনকি আমাদের সিনেমাতেও পাওয়া যেত তার আভাস। তৈরি হতো "জীবন থেকে নেয়া, একাত্তরের যীশু, কিংবা ভাত দে'র মত বিপ্লবী ছবি। তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চর্চা হত মার্ক্স, লেলিনের। কিন্ত কিভাবে যেন সব চেঞ্জ হয়ে গেলো। উন্নতির কার্ভ টা বেকে গেলো অবনতির দিকে।

কর্পোরেট বেনিয়ারা রুদ্ধ করে দিলো আমাদের মানসিকতা, সৃজনশিলতা আর অধিকার বোধ কে। "কি মজা কি মজা এসে গেছে কোকাকোলা, এদিকে সাধারন মানুষের এখনো বাকি আছে দেনার দায়ে কাপড় খোলা"। এই অবস্থাটাকে আবার আগের যায়গায় নিয়ে যাবার জন্য দরকার কিছু বেয়াদপ ছেলেপেলের যারা সুশীল সমাজের মুখের উপরে সত্যকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে করতে পারবে চপেটাঘাত। দরকার একজন নচিকেতার, দরকার একজন তারেক মাসুদের, দরকার একজন হুমায়ুন আজাদের। আমিও অমন বেয়াদপ হতে চাই, চাই ঠোটকাটা হতে।

হয়তো এর রেজাল্ট আমি আজ পাবোনা, কিন্ত বিশ পঞ্চাশ বছর পর ঠিক ই সবাই বলবে, একটা সময় ছিলো- যখন বৃদ্ধ ফান্ডামেন্টালিস্ট রা তরুনদের দাবিয়ে রাখতো সমাজ সংস্কৃতির আর ধর্মের দোহাই দিয়ে, তখন এই সব ছেলে মেয়েরাই চপেটাঘাত করে ফিরিয়ে এনেছিলো তারুন্যের জয়গান কে। আমরা যাতে বিদেশী সংস্কৃতিতে গা ভাসিয়ে না দেই, তার কারনে তথাকথিত মুরুব্বিদের কত্ত চিন্তা। তারা একবারো ভেবে দেখেনা, সংস্কৃতি তার নিজস্ব গতিতে চলবে। সময়ের দাবীতে সে এডপ্ট করে নিবে নানান ধারা। এক ওয়েস্টার্ন কালচার কে ধারন করে নিজেদের কালচার কে নষ্ট করার ভয়ে আমাদের যে কোন কিছুই এডপ্ট করতে দেয়া হয়না।

না খারাপ, না ভালো। এতে করে আমরা কি পিছিয়ে পড়ছিনা চলমান আধনিক বিশ্ব হতে। ? এটা গ্লোবালাইজেশনের যুগ। এটা দরজা বন্ধ করে বসে থাকার যগ নয়। বোধকরি বিদ্রোহী কবি অনেক আগেই তা বুঝতে পেরেছিলেন, এবং রচনা করেছিলেন, "থাকবোনাকো বদ্ধ ঘরে, দেখবো এবার জগৎটাকে কেমন করে ঘুরছে মানুষ, যুগান্তরের ঘূর্নিপাকে" সত্যি আমরা দেখতে চাই যুগান্তরের ঘুর্নি।

তরুনরা একটা সমাজের মূল শক্তি। এরাই বিদ্রোহ করে, এরাই বিপ্লব ঘটায়। ৫২, ৬৯, ৭১, ৯০ এ আমরা তা ইতিহাস থেকে শিক্ষা পেয়েছি। কিন্ত মনে রাখতে হবে সময়ের সাথে সাথে বদলে যায় স্টাইল, কৌশল। এখনের যুগ টা হচ্ছে মিডিয়ার যুগ, অনলাইনের যুগ।

এখন স্মার্ট ফোন এবং ইন্টার নেটের কল্যানে সবাই অনেক ইনফরমেটিভ। সিটিজেন জার্নালিজম, ব্লগিং, মাইক্রো ব্লগিং, ফেসবুক আর টুইটারের এর এই স্বর্নযুগে আমরা কিন্ত পলিটিকাল এফিলিয়েন্সে আটকে থাকা প্রিন্ট মিডিয়া বা টিভি চ্যানেলের দিকে চেয়ে থাকিনা। আমরা নিজেরাই এখন অনেক সচেতন। আমরা দশটা পাচটা অনলাইন নিউজ দেখে জাজ করে ফেলতে পারি সত্যি ঘটনাটা কি। বিটিভির সর্বচমৎকারক যুগ এখন আর নাই।

বিটিভি হয়তো থাকবে, কিন্ত থাকবেনা বিটিভি দেখার মানুষ। ইনফরমেশন ইজ গড। আপনি অবাক হয়ে যাবেন, পশ্চিমারা কিন্ত আমাদের চেয়ে অনেক বেশি স্মার্ট নয়, তারা যাস্ট আমাদের চেয়ে বেশি ইনফরমেটিভ। তাদের জানার সুযোগ বেশি। সেখানে একটা অখ্যাত বিশ্বিবদ্যালয়ের লাইব্রেরিও আমাদের অনেক এনরিচ লাইব্রেরির চেয়ে সমৃদ্ধ।

তাদের নেট এক্সেস সুবিধা বেশি,কিউরিসিটি বেশি এবং তা মেটানোর উপকরন ও বেশি। শুধু এইটুকুই। আমাদের যদি অমন একসেস থাকতো, তাহলে দেখতেন, আমরা অনেক অনেক স্মার্ট এন্ড এফিশিয়েন্ট। ইউএসএর সাধারন জনগোষ্টীর এমনকি অনেকেই আছেন যারা তাদের প্রেসিডেন্টের নাম ও জানে না। এন্ড দে ডোন্ট কেয়ার।

তাদের জব অপরচুনিটি ভালো বিধায় অনেকে হাই স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে আর পড়ালেখার দিকে যেতে চায়না। সেই দিক থেকে আমাদের দেশের তরুন রা অনেক বেশি বুদ্ধিমান। অনেক বেশি ক্রিয়েটিভ। আমাদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকলেও আমরা চমকপ্রদক সব কাজ করতে পারি। আমাদের ই-হক স্যার সবসময় বলতেন," বাংলাদেশে ঘরে ঘরে ল্যাব থাকলে প্রত্যেক ঘর থেকে এক একটা নিউটন, আইন্সটাইন বের হতো"।

আমি এই কথাটা মনে প্রানে বিশ্বাস করি। দরকার শুধু এক্টুখানি ইউনিটি, অপরচুনিটি আর ইনস্পাইরেশন। আর এখানেই যত সমস্যা। আমাদের দাবিয়ে রাখা হয়, ইন্সপাইয়ার করা তো অনেক পরের কথা। আমরা একটা আধুনিক প্রক্ষাপটে মুভি বানালে তা সেই বাকা করে কাধের উপর ফেলা কাশিমীরি শাল আর নাকের উপর চশমা চোখে দেয়া তথাকথিত সমালোচকরা বলে বসেন, "এটা ঠিক ব্যাকরন সম্মত হলো না, নাহ, এইটা আমাদের সমাজের সাথে যায় না।

কি যে করছে আজকালকার তরুন রা। আমাদের সময় তো আমরা...ব্লা ব্লা ব্লা....." । সেই আমাদের সময় থেকে তারা বের হতে পারেন নি। কাজেই তাদের উপর দিয়ে আধুনিকতার গদাম দিয়ে চালিয়ে যেতে হবে শিল্পকর্ম। উদাহরন দিয়ে বলি, থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, লিভ টুগেদার বিষয়ক ছবি।

কাজেই ইহা যতই বাইরের দেশে সমাদৃত হোক আর পুরস্কার পাক না কেন, ইহাকে ছবির মর্যাদা দেয়া যাইবে না। তাতে এফডিসির উপর যে চপেটাঘাত পড়ে। মানে সুশীল সমাজ গোপনে যেতে পারবে বেশ্যার ঘরে আর সেলুলয়েডে লিভ টুগেদার দেখালে সেটা হয়ে যবে অচ্ছুত। কর্পোরেট নোংরামি চলবে, ঘুষ চলেবে, চলবে বুরোক্রেসি, কিন্ত তা মিডিয়া, সিনেমা বা গানে আসলেই তা হয়ে যাবে খারাপ, বেয়াদপি, সমাজের প্রতি হুমকি। হা হা হা পায় যে হাসি।

একজন মানুষ কে কিভাবে খুন করা যায় তা নিয়ে ছবি বানালে হয়ে যাবে আর্ট ফিল্ম, আর প্রকাশ্যে চুমু খেলে তা হয়ে যাবে সেন্সর্ড। সব ভেঙ্গে চুরে ফেলতে ইচ্ছা করে যখন "দেবদাস" ছবিটি মুক্তি পায়না চুনিলালের "মুজিব কোটের" জন্য। সেন্সর বোর্ড আটকে রাখে, ৬০% নাকি কেটে রাখতে হবে। শুয়োরের বাচ্চারা মুজিব কোট কি আওয়ামিলিগের বাপের সম্পত্তি ? তার একশ বছর আগে থেকেই বিজেপি, কংগ্রেস এই কোট পরে আসছে না ? যেখানে মুজিব নিজেই বুকে টেনে নিয়েছিলেন জহীর রায়হার, আলমগীর কবির, সুভাষ দত্তদের, সেইখানে তার ই উত্তরসুরী কুত্তার বাচ্চারা মহান শেখ মুজিবের সন্মানকে ধুলায় লুটাচ্ছে। আর একদলের কথা নাই বা বললাম, তারা জামাত কে করে দেয় পলিটিকাল প্লাটফর্ম, সেই জামাত, যারা দেশের সর্বনিকৃষ্ট, সর্ব ঘৃন্য রাজাকার আল্বদর।

এই দ্বিডাকিনিতন্ত্রের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারে একমাত্র শিক্ষিত তরুনদের একটা রেভুলিউশন। হয়ে যাক আরেক টা ফ্রেঞ্চ বিপ্লব বা রেনেসা। যাই হোক, রাজনীতির দিকে যেতে চাই না। তথ্য দেই বরং, বাংলাদেশে এখনো ১৯৬৩ সালের সেন্সর আইন ফলো করা হয়। সারা পৃথিবী যখন চলে ২০১২ তে, বাংলাদেশ চলে ষাটের দশকের আইনে।

আসলে এই সেন্সর হচ্ছে ক্ষমতাবান সরকারের এক প্রকার প্রহসন। তবে মনে রাখিস মাদারচোদেরা, এইভাবে আর বেশীদিন না। সেন্সর যত কঠিন হবে, ততই বাড়বে ইঙ্গিতের ভাষা। সেই ভাষাকে কি করে আটকাবি ? মানুষের বুকের ক্ষোভ এখন ক্ষমতাবানদের সমস্ত ফুটো দিয়ে বের হচ্ছে। তার পর ফাটল, তারপর বাধ ভাঙ্গা ঢেউ।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা শ্রেষ্ঠ ছবি হুমায়ুন স্যারের "আগুনের পরশমণি"। তার "ছবি বানানোর গল্প" বইতে পড়েছি এই ছবি বানানোর আগে নাকি হুমায়ুন স্যার কে চাষী নজরুল ইসলাম এর লিডিং এ এফডিসির (আবালচোদা) পরিচালকদের কাছে পরীক্ষা দিতে হয়েছিলো। সেই আগুনের পরশমণি ফাইল এখনো ঘুরছে তথ্য মন্ত্রনালয়ের রুমে রুমে। বলেন কই যাই। নবীন দের যায়গা করে দেয়ার জন্য তাদের মনে বড় শংকা।

তাতে যে তাদের সুশীল ধুতিতে টান পড়বে। সেই গানগুলো, যেই কারনে পোস্টের সূচনা, যাই হোক, পোস্ট শুরু করেছিলাম একটা এলবামের কিছু গানের কথা দিয়ে। কোথা হতে কোথা চলে আসলাম, ঐ যে বললাম, মনের সব ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলার জন্য এক্রটা শিল্পকর্মই যথেষ্ট। আগের কথায় ফিরে আসি, ২০০৩-০৬ এর আন্ডারগ্রাউন্ড বিপ্লবের পর কেন যেন সব ধীরে ধীরে ফেড হয়ে গেলো। হটাৎ করেই হারিয়ে গেলো একে একে।

কেন ঠিক জানিনা। বালাম বা তার মত অনেকেই ব্যান্ড ছেড়ে তৈরি করতে লাগ্লো একক এলবাম। চলে আস্লো হাবিব, ফুয়াদের রিমিক্স এরা। তারা যে খারাপ তা বলিনা, তবে ভীষন মিস করি সেই ভিন্ন ঘারানার লিরিক্স আর কম্পোজিশন। আমি এখনো খুজে ফিরি।

দীর্ঘদিন পর আবার যেন আশা পুর করলো "শহরতলী" নামে একটা ব্যান্ড। একটা নাড়া খেলাম এই এল্বাম টা শুনে। অসাধারন লিরিক্স, সাউন্ড ডিজাইন। আবার আশাবাদী হয়ে উঠতে মন চায়। আবার ভয় ও লাগে,পাইরেসি আর শিল্পী-প্রযোজকদের দ্বন্দের দরুন যেভাবে অডিও ইন্ডাস্ট্রি মরে যাচ্ছিলো, এই আশাঅ আবার না হারিয়ে যায়।

তারপরেও স্বপ্ন দেখি, একটা এনরিচ অডিও এবং ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির। নিশ্চই সুদিন আসবে, আসতেই হবে। আমি "শহরতলীর ওয়েবসাইটে খুজে পেলাম ১৪ টি ট্র্যাক। প্রতিটা ট্র্যাক এর লিরিক্স ও সাউন্ড ডিজাইন অসাধারন। ফানের মাঝে মাঝে আপ্নারা পাবেন রক্ত ছল্কে দেয়া কিছু কবিতার আগুন লাইন।

প্রাসঙ্গিক ভাবেই সুর ও লিরিকের সাথেই কবিতাগুলো আপনাকে নাড়িয়ে দিবে। ভাবাতে বাধ্য করবে এই শহর, দেশ, সমাজ আর রাষ্ট্রকে নিয়ে। একুইষ্টিক থেকে শুরু করে থিয়েট্রিকাল রকের এক চমৎকার ফ্লাভার পাবেন এই ব্যান্ডের গানগুলিতে। "ফেলানী ২০১১" নামের একটা ট্র্যাকের কিছু অংশ উঠিয়ে দেয়ার লোভ সামলাতে পারছিনা। "একটি রাইফেল, একটি সীমান্ত একটি ভিনদেশী বুলেটের আততায়ী অনুপ্রবেশ কাটাতারের বেড়ায় ঝুলছে কিশোরীর লাশ ধর্ষিত পতাকায় আমার অক্ষম বর্ধিত দীর্ঘশ্বাস..." কি, আসলেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসার মত লিরিক না ? পুরা লিরিক দিয়ে দিলাম, শহরতলী ব্যান্ড,বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের এক অনন্য ধারার স্রষ্টা।

গানের সাথে কবিতার সংমিশ্রনে আবহভিত্তিক প্রকাশনা তাদের অনন্যধারার পরিচয় বহন করে। থিয়েট্রিকাল রক এর প্রচলন শহরতলী সম্ভবত বাংলাদেশের প্রথম ব্যান্ড যাদেরকে বলা হয় "থিয়েট্রিকাল রক" ব্যান্ড। এ ধরনের গান নিয়ে চিন্তা ভাবনা কেন তা জানতে চাইলে ব্যান্ডের ভোকালিষ্ট ও গীতিকার গালিব আজিম বলেন, "আমাদের অনেকের একটা বাজে ধারনা আছে সেটা হচ্ছে আমরা কবিতাকে বইয়ের মলাট কিংবা পাঠ্যপুস্তকে আবদ্ধ রাখতেই বেশী ভালোবাসি। কিন্তু এটিও আমাদের সাহিত্যের একটা অংশ"। "আসলে একটা মঞ্চে যেমন একই সাথে গান, নাচ, কবিতা, গীতিকবিতা,অভিনয় গীতিনাট্য সবকিছুকে এক বিন্দুতে নিয়ে এসে একটা আবহ তৈরি করা হয় এবং সব অভিব্যক্তি ঐ আবহ ঘিরেই প্রকাশিত হয়; ঠিক তেমনি আমরা সংগীত, সুর, কবিতা ও গীতিকবিতা দিয়ে একই কাজ করার চেষ্টা করছি, এবং এটিই আমাদের থিয়েট্রিকাল রকের পরিচায়ক",ব্যান্ডের বেজিষ্ট ও গীতিকার তপন মাহমুদ বলেন।

ব্যান্ডের পথচলা: ২০০৪ সালে শহরতলী (তখন কোনো নাম ছিলা না) ব্যান্ড গঠিত হলেও তখন সদস্য ছিল মাত্র ৩জন। মিশু,গালীব ও বিদ্যুত; পরবর্তীতে এসে যোগ দেন তপন ও সানি। ২০০৫ সালে "শহরতলী" নামে ব্যান্ডটি গঠিত হয় লাইন আপ: গালিব আজিম: ভোকাল,গীতিকার মিশু-ভোকাল, গিটার, গীতিকার বিদ্যুত-গিটার(লিড) তপন-গিটার(বেজ),গীতিকার সানি- ড্রামার,সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার। "আসাদের খোলা চিঠি" নামে একটি প্রিয় গানের ভিডিয় দিয়ে দিলাম, দেখবেন অবশ্যই। "গির্জার ধর্ষিতা সোফিয়া লোরেনকে দেখে নিশ্চয়ই কেঁদেছিলে আমি কাঁদিনি, বুকটা শুধু খাঁ খাঁ করেছিল- সোফিয়া লোরেনকে পাঠিয়ে দিয়ো বাংলাদেশে তিরিশ হাজার রমণীর নির্মম অভিজ্ঞতা শুনে তিনি শিউরে উঠতেন।

অভিধান থেকে নয় আশি লক্ষ শরণার্থীর কাছে জেনে নাও, নির্বাসনের অর্থ কী ? জর্জ ওয়াশিংটনের ছবিওলা ডাকটিকেটে খোঁজ থাকবে না স্বাধীনতার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কাছে এসো- সাধু অ্যাবের মর্মর মূর্তিকে গণতন্ত্র আর মানবতার জন্য মালির ঘামে ভেজা ফুলের তোড়া দিয়ো না- নিহত লোকটি লজ্জায় ঘৃণায় আবার আত্মহত্যা করবে। " এরপরেও এদের গান শুনে ভালো না লাগে কিভাবে ? প্রতিটা লাইনেই ক্ষুদ্ধ অনুভূতির ছোয়া, আবার কোথাও বা বিষাদের সুর। আশা করি আপনারা সবাই তাদের এলবাম শুনবেন, গানের লিরিকগুলো উপলদ্ধি করবেন এবং এলবাম বের হলে কিনে পড়বেন। । এত কষ্ট করে দীর্ঘ পোস্ট টি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।

"শহরতলি"র অফিসিয়াল সিট। এখান থেকে আপ্নারা গানগুলো শুনতে পারবেন। ফেসবুক পেজ। টুইটারে শহরতলী। ইউটুবে তাদের ভিডিয় চ্যানেল।

ধন্যবাদ সিফাত ভাইকে,লিঙ্কগুলি শেয়ার করার জন্য। তিনি শহরতলীর বর্তমান ম্যানেজার । তিনি একজন ব্লগার এবং আমাদের সাথেই আছেন। চাইলে তাকেও জিজ্ঞেস করতে পারেন ব্যান্ড বা লিরিকের ব্যাপারে। ------------------------------------------- পোস্ট উৎসর্গঃ প্রিয় ব্লগার কালীদাস ভাইয়া।

উনি আর আমি একই কলেজের ছাত্র ছিলাম। অবশ্য ভাইয়া আমার অনেক সিনিয়ার। গান পাগল এই মানুষটার জন্য থাকুক এই পোস্ট টি। দেখা যাক, কোন সময়ে ওনার চোখে পড়ে কিনা এই ছোট্ট উপহার।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।