সাধারন একজন লোক, চিকিৎসা বিজ্ঞানে আগ্রহী। ফ্যাট টিস্যু (এডিপোজ টিস্যু) বা চর্বি আমাদের শরীরের একটা গুরুত্বপূর্ণ কোষকলা। এদের যেমন উপকারী ভুমিকা আছে তেমনি ক্ষতিকর প্রভাবও কম নয়।
আমাদের শরীরে প্রধানত দুই ধরনের ফ্যাট টিস্যু আছে-
১। হোয়াইট এডিপোজ টিস্যু বা (WAT).
২।
ব্রাউন এডিপোজ টিস্যু বা (BAT).
এদের কাজও কিন্তু বিভিন্ন, যেমন ব্রাউন এডিপোজ টিস্যুর প্রধান কাজ হলো আমাদের শরীরের তাপ উৎপাদন করা বিশেষ করে ঠান্ডার সময়, শিশুদের শরীরে এটা বেশি থাকে আর বয়ো:প্রাপ্তির সাথে সাথে এটার পরিমান কমতে থাকে।
বাকি যে ফ্যাট টিস্যু আমাদের শরীরে পাওয়া যায় তা হোয়াইট এডিপোজ টিস্যু , স্থান ভেদে এদের নাম বিভিন্ন হয়-
যেমন- ১। সাবকিউটেনিয়াস ফ্যাট- এটা থাকে চামড়ার নিচে।
২। এপিকার্ডিয়াল ফ্যাট- এটা থাকে হার্টের চারপাশে।
৩। ভিসেরাল ফ্যাট বা অ্যাবডোমিনাল ফ্যাট- এটা থাকে পেটের ভিতরে বিভিন্ন অংগের চারপাশে।
৪। এপিডিডাইমাল ফ্যাট- এটা থাকে এপিডিডাইমিসের চারপাশে (ল্যাব এনিমেলে)।
এইটা হলো অ্যাবডোমিনাল ফ্যাটের একটা সেকশান।
হোয়াইট এডিপোজ টিস্যুর কাজ হলো আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় লিপিড জমা করে রাখা। একথা মনে রাখা দরকার যে একটা কার্বোহাইড্রেটের চেয়ে একটা লিপিড মলিকিউল থেকে দ্বিগুন বেশি শক্তি পাওয়া যায়, কাজেই প্রচুর পরিশ্রমের কাজে বা ফাসটীং কনডিশনে শরীরে জমানো লিপিড থেকেই শক্তির চাহিদা পুরণ হয়।
এডিপোজ টিস্যু কয়েক ধরণের কোষ নিয়া তৈরি, এডিপোসাইট, ফাইব্রোব্লাস্ট, ম্যাক্রোফেজ আর স্টেম সেল। এর মধ্যে এডিপোসাইট গুলা একটা বড় ফ্যাট ভ্যাকুউল থাকে যেখানে লিপিড জমা থাকে, কাজেই এদের সাইটোপ্লাজম খুবই কম থাকে, একটা মাত্র নিউক্লিয়াস কোষের একপাশে সরে থাকে, আর মাইটোকন্ড্রিয়ার পরিমানও কম থাকে।
এদিক থেকে BAT কিন্তু ভালো, কেমনে? BAT কোষে দুই তিনটা ফ্যাট ভ্যাকুউল থাকে যেখানে লিপিড জমা থাকে, সাইটোপ্লাজম আর মাইটোকন্ড্রিয়ার পরিমানও বেশি থাকে, এজন্য এরা বাদামী দেখায় (মাইটোকন্ড্রিয়ায় আইরন যুক্ত সাইটোক্রম কমপ্লেক্স থাকে)।
এখন বলেনতো আমরা এখান থেকে কি সুবিধা আদায় করতে পারি? ধাধা ১?
বেশি পরিমান ভিসেরাল ফ্যাট বা অ্যাবডোমিনাল ফ্যাট জমা হলে একে আমরা বলি সেন্ট্রাল ওবেসিটি। আর সেন্ট্রাল ওবেসিটির সাথে কার্ডিোভাসকুলার ডিজিজ, টাইপ টু ডায়াবেটিস, ইনসুলিন রেসিসটেন্স, হাইপারটেনশনের গলায় গলায় ভাব আছে, এটা আসলে আরগুলা আসা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এখনকার সময়ে এই এডিপোজ টিস্যুকে একটা এনডোক্রাইন অরগান বলে ধরে নেয়া হয়। লেপটিন, এডিপোনেকটিন, ইনটারলিউকিন ৬, টিএনএফ-আলফা, রেসিসটিন এই ধরণের হরমন গুলা এডিপোজ টিস্যু থেকে বের হয়।
-এর মধ্যে এডিপোনেকটিনটা ভালো, যেটা প্রি-এডিপোসাইট গুলাকে এডিপোসাইটে পরিবর্তিত হতে বাধা দেয়।
- ইনটারলিউকিন ৬, টিএনএফ-আলফা এই দুইটা ক্যান্সার সারাতে কাজে লাগে, কিন্তু ওবেসিটিতে এরা বেটা সেল ড্যামেজ করে, ইনসুলিন রেসিসটেন্স করে, কাজেই এরা খারাপ।
-লেপটিন, এইটা আরও বড় একটা হারামি, এইটা এডিপোজ টিস্যুকে লিপিড জমা হতে সিগনাল দেয়, নতুন এডিপোজ টিস্যু বানাতে সাহা্য্য করে, আমাদের ব্রেনকে বার বার খাওয়ার জন্য স্টিমুলেট করে।
মোটা লোকদের শরীরে এডিপোজ টিস্যু বেশি বলে লেপটিন, ইনটারলিউকিন ৬, টিএনএফ-আলফারা পরিমানও বেশি পাওয়া যায় তা তাদের এডিপোজ টিস্যুতে ইনফ্লামেশন করে, আর ব্রেনকে বার বার খাওয়ার জন্য স্টিমুলেট করে।
কাজেই আমাদের চর্বিকে ভালো রাখা দরকার, কিভাবে? পরিমিত সুষম আহার আর ব্যায়াম করে।
এই হলো মোটামুটি আমার চর্বি কথন, ভালো থাকুন।
গত দুই পর্বের লিংক
সহজ মেদভূড়িনামাঃ লিভার, ভালো রাখুন, ভালো থাকুন-
Click This Link
সহজ মেদভুড়ি নামা: প্যানক্রিয়াস, আপনার গ্লুকোজ লেভেলকে নরমাল রাখে
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।