হাজার বছরের পুরনো স্বর্ণমুদ্রার কলস পাওয়া গেছে ইসরাইলের উপকূলীয় আরসুফে। স্বর্ণমুদ্রার ওই কলস ১৩ শতকের ধর্মযুদ্ধের খ্রিস্টান সেনাপতি রিচার্ড দ্য লায়ন হার্টের দুর্গের মেঝের নিচে পাওয়া যায়। অমূল্য ১০৮টি প্রাচীন স্বর্ণমুদ্রা ইসরাইলের উপকূলীয় এলাকা আরসুফের ভগ্নপ্রায় দুর্গের টাইলসের নিচ থেকে বের করা হয়। তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ওরেন টাল বলেন, এটি একটি দুর্লভ সংগ্রহ। আরসুফ ভূমধ্যসাগরের পাড়ে অবস্থিত।
এখানে ১১৯১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মুসলিম নেতা সালাদিনের সেনাবাহিনীকে খ্রিস্টান সেনাপতি রিচার্ড পরাজিত করেন। এই শক্ত ঘাঁটি এবং প্রাচীন বন্দর জাফা ও কায়েসারেয়ার মাঝে অবস্থিত। ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত ১২৪১ সাল পর্যন্ত এটি ব্যবহার করা হয়। উদ্ধার করা মুদ্রাগুলো মূলত দিনার (ইসলামী মুদ্রা)। এগুলো ফাতেমীয় আমলের অর্থাত্ ৯০০ থেকে ১১০০ অব্দের মুদ্রা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের খনন কাজের সময় স্বর্ণমুদ্রার কলসটি পাওয়া যায়। মুদ্রায় সুলতানের নাম এবং বাণী উদ্ধৃত ছিল। মুদ্রাগুলো কোন সময়ের, তার তারিখও ছিল। অধ্যাপক ওরেন টাল বলেন, মুদ্রাগুলোর বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব অপরিসীম। ইসরাইলে এই প্রথমবারের মতো লুকানো কোনো স্বর্ণমুদ্রা পেলাম।
ধর্মযুদ্ধের সময় সম্পর্কেও জনা যাবে এ থেকে। ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ওই সময়ে কীভাবে ব্যাপকভিত্তিক অর্থকড়ির লেনদেন হতো—তা মুদ্রার কলস পাওয়ায় উল্লেখযোগ্য প্রমাণ দেবে। ওই সময় খ্রিস্টানরা মুসলমানদের সঙ্গে প্রবল সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। অধ্যাপক টাল আরও বলেন, প্রাচীন এই মুদ্রা ব্যবহার করতে আমরা ভয় পাচ্ছি না। অথবা বড় ধরনের ব্যবসা পরিচালনার কাজেও লাগাতে পিচপা হবো না।
তিনি বিশ্বাস করেন, উদ্ধার করা মুদ্রার কলসটি হচ্ছে আরও বহু লুকোনো কলসের মধ্যে একটি। আরসুফ এক সময় ব্যবসাকেন্দ্র ছিল। এখানে শিল্প ও কৃষিপণ্যের বাণিজ্য হতো। স্বর্ণমুদ্রাগুলো পাওয়ায় বর্তমানে বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ধর্মযুদ্ধের সময় স্বর্ণমুদ্রা ছড়ানোরও গুজব রয়েছে।
তখন এ এলাকায় খ্রিস্টান ধর্ম প্রতিষ্ঠায় সামরিক বহিরাক্রমণের ঘটনাও ঘটেছে। যে মুদ্রাগুলো পাওয়া গেছে, তা থেকে সে আমলের সম্পদ ও সক্ষমতা সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। অধ্যাপক টাল আরও বলেন, ওই মুদ্রাগুলো অমূল্য। এগুলোর মূল্য কত হবে—তা নির্ণয় করা কঠিন। কায়রো গেনিজাহর এক রিপোর্টে বলা হয়, আবিষ্কৃত দুই দিনার দিয়ে ১২ থেকে ২৪ জনের পরিবারের এক মাস চলে যাবে ভালোভাবে।
প্রত্নতাত্ত্বিক খননের সময় আরও পাওয়া যায় অনেক পট, গ্লাস, তাম্র পাত্র, তীর, পাথর এবং বিভিন্ন সময়ের জানালা। এসব পাওয়ায় গবেষকদের ধর্মযুদ্ধের সাংস্কৃতিক বিষয় এবং ইসলাম ও খ্রিস্টান বিশ্বের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।