আলো অন্ধকারে যাই... এমপিওভুক্ত শিক্ষক হওয়ার আশায় রাজধানীর জনতাবাগ হাই স্কুল ছেড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের সলিমগঞ্জ এআরএম উচ্চ বিদ্যালয়ে বাংলা বিষয়ের শিক্ষকের শূন্যপদে চাকরিতে যোগ দেন এস এম মনসুর আহমেদ। গত বছর ১৫ অক্টোবর এমপিওভুক্ত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিলেও এখন পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে কোনো বেতন-ভাতা পাননি। স্কুল থেকে দেওয়া অংশ বাবদ মাসে ১ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েই ৯ মাস ধরে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন তিনি। অথচ নিয়োগপত্র অনুযায়ী তার বেতন হওয়ার কথা ছিল ৯ হাজার ৩৮০ টাকা। এর মধ্যে সরকার থেকে পাওয়ার কথা ছিল ৭ হাজার ৮৮৪ টাকা।
কিন্তু এ টাকা থেকে বঞ্চিত হয়ে স্ত্রী ও স্কুলপড়ুয়া দুই সন্তানকে নিয়ে আর্থিক কষ্টে দিন যাপন করছেন তিনি। তার মতো দেশের প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক এভাবেই বিনা বেতনে কাজ করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ২০১১ সালের মে মাসের পর থেকে প্রায় ১৫ মাস ধরে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্যপদে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বন্ধ রেখেছে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তার গাফিলতির কারণেই এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। এতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।
মাউশি ও ভুক্তভোগী শিক্ষকদের কাছ থেকে জানা যায়, গত এক বছরে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শূন্যপদে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক সরকারি বিধি অনুযায়ী বেতন-ভাতা চেয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না জানানোয় তাদের বিষয়ে কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে জনবল কাঠামো অনুযায়ী শূন্যপদে নিয়োগ বন্ধ রাখার বিষয়েও কোনো রকম আদেশ বা পরিপত্র জারি করেনি মন্ত্রণালয়। অথচ গত ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেটে এমপিওভুক্তি বাবদ বরাদ্দ অর্থ থেকে ২৬ কোটি টাকা এবার ফেরত পাঠানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত জোট সরকারের শেষ সময় থেকেই বলতে গেলে প্রায়ই নানা অজুহাতে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্যপদে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বন্ধ রাখা হয়।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরও এ অবস্থা চলেছে। তবে মাঝে কিছুদিন এ অবস্থার পরিবর্তন হয়। ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নতুন জনবল কাঠামো জারি করে সরকার। এই জনবল কাঠামো জারির সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে আগের সব প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়। বর্তমানে কোন প্রতিষ্ঠানে কতজন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হবেন তা এই জনবল কাঠামোতে নির্ধারণ করা আছে।
সে অনুযায়ী বাজেটেও বরাদ্দ রাখা আছে। জনবল কাঠামো অনুযায়ীই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক মারা গেলে বা চাকরি ছেড়ে চলে গেলে তার শূন্যপদে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ২০১১ সালের মে মাস থেকে হঠাত্ করেই এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্যপদে নতুন নিয়োগ দেওয়া শিক্ষকদের বেতন-ভাতা আবারও বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ধরনের পদে নিয়োগ বন্ধের বিষয়ে কোনো নির্দেশ দেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও একে স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানেই আটজন শিক্ষককে শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু সরকার তাদের বেতন দিচ্ছে না। এভাবে সারা দেশে বিনা বেতনে কাজ করছেন ১০ থেকে ১২ হাজার শিক্ষক। এদের জন্য বাজেটে বরাদ্দও আছে। কিন্তু তারা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। এটা সম্পূর্ণই শিক্ষা ভবনের কিছু লোকের গোঁয়ার্তুমি ছাড়া কিছু নয়।
মাঝখান থেকে শিক্ষামন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান-উর রশীদ সকালের খবরকে বলেন, এ ব্যাপারটি গুরুত্বের সঙ্গে আমরা বিবেচনায় নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিব খুবই আন্তরিক। যথাসম্ভব শিগগিরই শিক্ষকদের এ সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া চলছে।
ষূত্র: Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।