নিঃস্ব , নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনের মূল্য আর বৃক্ষের ঝরে যাওয়া শুকনো পাতা ... একই কথা !!!
বর্ষণের সাথে দেখা হওয়ার কথা হলেই চিত্রার মনের ভেতরে গুড়ুম গুড়ুম মেঘ ডাকতে শুরু করে । অস্থির লাগে অনেক ।
চিত্রার ঠিক কলেজ গেট এর সামনে এসে বর্ষণ দাঁড়ায় । এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতো গত এক বছর । পুরো এক বছরে দেবীর কঠিন তপস্যার পর চিত্রাকে পেয়েছে সে ।
ওকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে দেখতে এবং ক্লাস শেষ এ বাইক নিয়ে পেছন পেছন আসার দৃশ্যে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে চিত্রা । এরপর একদিন যখন ওকে হুট করে প্রপোজ করে বসে , চিত্রার আর কোন কিছুই বলার থাকে না । দেবী তখন প্রতি নিয়ত এ তপস্যার অনুরক্ত হয়ে গেছে !
দুর্দান্ত সুন্দরীর লিস্ট এ অনেক আগেই নাম উঠেছে , ক্লাস এইট এ যখন থেকে উঠেছে ... ওই বয়সে মেয়েরা প্রজাপতির মতো খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসে পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে ! তাই যখন তখন বিয়ের জন্যে প্রপোজাল আসাটা চিত্রার মা বাবার কাছে ও কোন একটা ব্যাপার না ।
বর্ষণ আর চিত্রা এসে নদীর পানিতে পা ডুবিয়ে বসে । এই জায়গাটা অনেক ঠাণ্ডা আর মানুষজনহিন ।
আরাম করে বসে গল্প করা যায় । পাশেই কাশবন ... হু হু করে যখন বনের ভেতরে বাতাশ খেলে যায় ... কেমন একটা গা ছমছমে শব্দ হয় । চিত্রা ভয় পেয়ে বর্ষণের হাত ধরে বসে থাকে ... প্রায়ই করে এটা ... ভালোলাগা আর নির্ভরতার সে অনুভবে থাকে তাই হয়তো বার বার এটা করে !
দিন এভাবেই যাচ্ছিল ... আনন্দে ... পাখির ডানায় স্বপ্ন উড়িয়ে দিয়ে ... হেসে খেলে ...
কিন্তু একদিন হটাত ওরা বিয়ে করে ফেলে ! চিত্রা প্রস্তুত ছিল না তবে বর্ষণ ওকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করায় । বালিকার ১৭ বছর বয়স শেষের দিনে ওদের বিয়ে হয়ে যায় । সুখ কি হাতের মুঠোয় থাকবে তবে ... যখন ইচ্ছে কমিয়ে বা বাড়িয়ে নিয়ে জীবন সাজান যাবে ! যেতেও পারে ... দুজনের এই কম বয়স ... আর সেই অপরিপক্ব হাত ধরে বালিকার পথ চলা শুরু ... দারুণ সব দিন কাটতে লাগলো... স্বপ্ন পুরনের সব মুহূর্ত ... কাশের বনে এক সাথে বুনন করা এক একটা স্বপ্ন ... অথবা একা চাঁদের আলোয় ভিজতে ভিজতে দেখা স্বপ্ন ... সব পূরণ হয় ... অথবা হয় না ...
চারটা মাস কেটে যায় ... চিত্রা ওর মার বাড়িতেই থাকে ... শুধু সারাটাদিন বর্ষণের জন্য তুলে রাখতো ... দিন শেষে ঠিকই ফিরে আসতো আবার বন্দি জীবন এ ... নাকি আরেকটা পরম আশ্রয়স্থলে !?কে জানে !
হটাত কোন কারণে বর্ষণ আর সে মানুষটা থাকে না ! বদলে যায় ।
বিয়ের মাত্র ছয় মাস পার হলো । কি হল বর্ষণের ? কেনও এই পরিবর্তন ... ছোট ওই মেয়েটা কোন ভাবেই তাল খুঁজে পায় না ... সব চলছিল যে ভাবে চলার কথা ! জিজ্ঞেস করতেই কশে এক থাপ্পড় জোটে !! রাস্তায় ভরা মানুষের হাজার হাজার চাহনি, কিন্তু তাতে কি! ... টপ টপ করে গাল বেয়ে জল গড়ায় ... দেবীর যে জল কখনো মাটি ছোঁয়নি আজ সেই জল মাটির ধুলোতে বিলীন !! বর্ষণ তবে বদলে গেলো ! একদম !
মাকে বলবে ?কি করে ? মা যে নিজ হাতে তার একমাত্র মেয়েকে খুন করবে ! করুক ... সারারাত গুমরে গুমরে কেদে বালিশ ভেজায় ... সকালে আর্তসমর্পণ ! মা , মা তো এমনি তাই না রে চিত্রা ! বুকে টেনে রাখে সব কষ্টে সেই মানুষটাই হল মা । মার বুকে চিত্রা মুখ গুজে জলে ভিজিয়ে দ্যায় সে মমতার শাড়ি।
বোকা বালিকা নিজেকে চার দেয়ালে আটকে ফেলে একেবারের জন্য !
অনেক কিছুর পর ...অনেক ঝড় ঝাপটা ... অনেক বিচ্ছেদ দেখার পর ...আরও অনেক অনেক অনেক দিন পর ......... আজ চিত্রা ঘর হতে বের হল বিকেল দেখবে বলে , সোনা রোদে রাঙ্গানো সে সুন্দর বিকেল .. ...
জীবন অনেক নিষ্ঠুর ... জীবনের অনেক গল্পই না বলা থেকে যায় ... কেউ ভুলতে পারে কেউ পারে না ... যারা পারে তারা সত্যিকারের সাহসী মানুষ ... এরকম মানুষ হতে না পারলে হয় নারে চিত্রা ... কারো জীবন থেমে থাকে না ...
কারো জীবন থেমে থাকবে ও না ...
তবে সব সময় পাশে থাকবো , এটুকু জানবি ...
উৎসর্গঃ আমার অনেক অনেক প্রিয় একটা মানুষকে ... ... ... যার অনুমতি না নিয়েই লিখলাম!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।