আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি তব মালঞ্চের হবো মালাকার

মোট বিরাশি দেশের নানা বর্ণের, নানা আকারের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সমাবেশ ঘটেছে কুইনমেরি আইন অনুষদে। পরিচয় পর্বে বললাম-সমাবেশটিকে আমার জাতিসংঘের অধিবেশনের মতো লাগছে। আমাদের ইয়ান্কি সমন্বয়ক হো হো করে হেসে উঠলেন। নবীন শিক্ষার্থীরা পান্হশালায় পরস্পর পরিচিত হচ্ছিলো। ব্রাজিলিয়ান তণ্বী ক্যারোলিনাকে ফুটবল প্রসংগে কথা বলতে গিয়ে সাম্বা নৃত্য বিষয়ে তাত্ত্বিক প্রশ্ন করলাম।

লাস্যময়ি তরুণী সাম্বা প্রাকটিক্যাল দেখিয়ে দিলো। ভিড় জমে গেলো। ফ্রান্সের মেয়ে মারগাক্স এঁকেবেঁকে ধ্রুপদি ঢংয়ে আসর জমিয়ে তুলল। অন্যরাও এগিয়ে এলো। এশিয়ান শিক্ষা্র্থীদের মাঝে জড়তা লক্ষ্য করলাম।

আমি প্রায় সকল নৃত্যরতাকেই কানে কানে সার্টিফিকেট দিলাম-তুমিই শ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পী। কাউকে বললাম-এতো ভিড়ে তুমিই উজ্জল। এভাবে কারো সাজ, কারো দেহ বল্লরি, কারো দেশ-ঐতিহ্য নিয়ে প্রশংসা করলাম। এভাবে অতি সহজে আমি তরুণীদের গোপন প্রিয়পাত্র হয়ে গেলাম। অনুসিদ্ধান্ত-প্রশংসায় সারা দুনিয়ার নারী সমভাবে গলে যায় ।

পরিচয় পর্বে দেয়া আমার পেশা এবং সাহিত্য বিষয়ক প্যাশন সহপাঠীদের নজর কেড়েছিলো। রঙিন গ্লাস হাতে নিয়ে তুর্কি তরুণী জুমরা জানতে চাইল-কাউকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছি কী না? আমি বললাম-তুমি রাজি থাকলে তোমাকে যাবজ্জীবন দিতে পারি আমার কারাগারে নয়তো বঙ্গেয় ব-দ্বীপে দ্বীপান্তরে চলো। জুমরা উচ্চহাস্যে শরীর গমকে কপট অভিমানে বলে উঠলো-তুমি এতো অবলীলায় নিষ্ঠুর শাস্তির আদেশ দাও। ইসরায়েলি তরুণী লিরনকে বললাম-তুমি আমার দেখা প্রথম রক্ত-মাংসের ইহুদি মেয়ে। সে আমার দিকে গাঢ় চোখে তাকায়।

চাইনিজ এক ছেলের সাথে আলাপ শুরু করলাম। তার বধিরতা বা দূর্বল ভাষাজ্ঞান আলোচনায় পানি ঢেলে দিলো। কন্টিনেন্টাল কয়েকটা ছেলেকে মেনিমুখো মনে হলো। সে তুলনায় মেয়েগুলো বেশ সপ্রতিভ। একদল উছ্ছল নারী সহপাঠীর ভিড়ে আমি কিছুটা বিপন্ন বোধ করি।

আধো নেশাগ্রস্হ এক গ্রিক মেয়ে উপস্হিত ছেলেদের সংখ্যা ও সচলতায় ঘাটতি দেখে ফোড়ন কাটে। আমি রবি ঠাকুরের দ্বারস্হ হই- আমি তব মালঞ্চের হবো মালাকার। ভারতীয় ছেলে সিদ্ধার্থ হেড়ে গলায় পদ্যের ব্যাখ্যা করে। মাতাল তরুণী হেসে ভেঙে ভেঙে পড়ছে। ঘুম ভাঙলো বেশ বেলা করে।

আনুষ্ঠানিক পরিচয় পর্ব, অধ্যাপকমণ্ডলির কথামালা, পান্হশালার আড্ডা, লজ ঘুরে ফিরে দেখতে দেখতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো। প্রাতঃরাশ সেরে এক ঘন্টার সেশান। মার্থা ফায়ারস্টোন নামের এক অগ্নিশ্বরী তার উপস্হাপনায় সবাইকে মণ্ত্রমুগ্ধ করে রাখলেন। মেধা আর সৌন্দর্যের এরূপ সমন্বয় সচরাচর চোখে পড়েনা। কফি পান শেষে সবাই লজের চারপাশের প্রকৃতি দেখতে বের হলাম।

ইরানি মেয়ে দনিয়া একপাল হরিণ দেখে আভিভূত। সে এই প্রথম অবাধ হরিণ দেখলো। হতবাক তরুণীকে হরিণ শাবকের পাশে ক্যামেরার লেন্সে শকুন্তলার মতো দেখাচ্ছিলো। আমি তাকে দুর্বল অনুবাদে কবিতা শোনাই- সোনার মোহর চেয়োনা হরিণী। আফসোস, বাংলা সাহিত্যের এই সব সোনালি শস্যের কেনো যে অনুবাদ হয়নি।

ভাবলাম, আগ্রহী এ তরুণীকে একদিন জীবনানন্দের ঘাই হরিণী বিষয়ক স্তবক অনুবাদ করে শোনাবো। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।