আমি আমাকে নিয়েই তো এখনও বেচে আছি । একদিনআমাকে নিয়েই চলে যাব । সেদিন খুঁজলেও আর পাবি না..........আমার ভার্চুয়াল ফ্যাক্টরিতে স্বাগতম । আমার মন খারাপের সময়টা এখানে আর ফেসবুকে কাটে । মাঝে মাঝে দু একটা লেখা তৈরি করতে ইচ্ছা হলে চলে আসি এখানে ।
https://www.facebo জানালার অবস্থান সপ্তম তলার দক্ষিণ প্রশ্চিম পাশে । সারাদিন হু হু শব্দে বাতাস এসে খেলা করে যায় জানালা সংলগ্ন রুমটাতে । রুমটার রং আকাশী । হালকা আকাশী । আকাশের সাথে মিল আছে আছে রুমটার পরিবেশের ।
বেশ খোলা মেলা । রুমটার মালিকের নাম তিহান । তিহানের এমনটাই পছন্দ । খোলা মেলা সব কিছুই তার পছন্দ । মানুষ বদ্ধ পরিবেশ পছন্দ করে না , প্রকৃতির মুক্ত পরিবেশের সাথেই তাই তার সখ্যতা বেশি ।
তিহানের ক্ষেত্রে তা বাড়াবাড়ি রকমের সত্য । কিছু কিছু মানুষের অদ্ভুত ক্ষমতা আছে । তবে সেই ক্ষমতা কখনো তার নিজের বানানো দুনিয়ার বাহিরে শক্তি পায় না । যেমন চতুমার্ত্রিক চোখ । খুব অল্প মানুষেরই চতুমার্ত্রিক চোখ আছে ।
যে চোখ দিয়ে তারা দৈর্ঘ্য , প্রস্থ , উচ্চতার বাহিরেও সোন্দর্যের মাত্রা অবলোকন করে । তিহান সে অল্প কিছু মানুষের মধ্যে একজন ।
তিহানের রুমে একটি মাত্র জানালার কোন শিক নেই । শুধু থাই গ্লাস জানালার দ্বার হিসেবে কাজ করে । তাই থাই গ্লাসের একটা অংশ খুললেই সামনে সুবিশাল পৃথিবী উন্মুক্ত হয় ।
তিহানের ইচ্ছাতেই এমনটা করা হয়েছে । তিহানের মা বাবা ছেলের ইচ্ছাকে শতভাগ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন । তিহানের ইচ্ছাগুলো বেশ অদ্ভুত তবে তার ইচ্ছাগুলোর মধ্যে আভিজাত্যের কোন ছোঁয়া নেই , নেই কোন উচ্চাষা , অথবা গরিমার দাপট । নিতান্তই সাদামাটা ইচ্ছেগুলো তার বুকের গভীরে লালায়িত । পারতপক্ষে তিহান খুব কম কথা বলে ।
তার বাবা মাই তাকে এটা সেটা জিজ্ঞেস করে । তিহান তখন জানালার পাশে পেতে রাখা বেতের চেয়ারটাতে চুপ করে বসে ছিল ।
এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল বাহিরে । দূর দিগন্তে যেখানে সূর্যের লাল আভা গাছের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে । তিহানের মা রাহেলা বানু রুমে ঢুকলেন ।
খুব আস্তে করে বন্ধ করলেন দরজাটা । কিন্তু ছেলেকে বিরক্ত করার সাহস হলো না তার । চুপচাপ চশমার ভিতর দিয়ে বিষন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ছেলের দিকে । তার চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রুবিন্দু চিক চিক করে উঠলো শেষ বিকেলের আলোয় । তিহান ঘাড় না ফিরিয়েই বুঝতে পারলো যে তার মা রুমে ঢুকেছেন ।
কাকতালিয় কিছু নয় । মা কাছাকাছি থাকলে পৃথিবীর সব ছেলেই অন্যরকম এক টান অনুভব করে । রাহেলা বানু অনেক্ষণ দাড়িয়ে আছেন । হটাত্ তিহান বলে উঠলো "মা কিছু বলবে ?" । রাহেলা বানু যেনো একটু চমকে উঠলেন ।
বুঝে উঠতে পারলেন না যে ছেলে কিভাবে টের পেলো তার অস্তিত্বের কথা । ধাতস্থ হয়ে বললেন "বাবা তুই কিছু খাবি ? দুপুরেও তো কিছু খাস নি । " তিহান উত্তর দেয় না । চুপ করে আগের মতই বসে থাকে সে ।
সূর্য তখন বিদায় নিয়েছে ।
আকাশ এখন রক্তলাল । রক্তিম আভায় তিহানের মুখটাও লাল দেখাচ্ছে । হটাত্ই যেনো ঝপ করে নেমে এলো নিকষ কালো আধাঁর । আকস্মিকভাবেই এভাবেই আধাঁর নামে প্রতিদিন । কাওকে সময় দিতে রাজি নয় সে ।
তিহান উঠে দাড়ালো । ধিরে ধিরে বন্ধ করে দিলো জানালাটা । তারপর রাহেলা বানুর দিকে ঘুড়ে ইঙ্গিত করলো । রাহেলা বানু বুঝলেন ছেলে কি বলতে চাইছে । তিনি কোন কথা না বলেই ঘুড়লেন ।
দরজা খুলে বের হয়ে গেলেন । তার পিছু পিছু রুম থেকে বের হলো তিহান । রুমের ভিতরটা তখন অন্ধকার ।
(২)
তিহানের চুল কাটা হয় না গত চার মাস ধরে । চুলগুলো অনেক বড় হয়ে গিয়েছে ।
হটাত্ দেখলে মনে হতে পারে যেনো কোন পাখি হয়তো বাসা বেধেছে । নিজের ব্যাপারে সবসময়ই খামখেয়ালি তিহান । আজকের আবহাওয়াটা বেশ খানিকটা মেঘলা । ভেজা ভেজা একটা বিশ্রি অনুভূতি হয় । এ ধরনের আবহাওয়াতে জলীয় বাষ্পের পরিমানটা অত্যাধিক বেড়ে যায় ।
ফলে ঘাম দেখা দেয় । ফলে পরিস্থিতি জঘন্য হয়ে দেখা দেয় । তিহান ঘামছে । তবে তার এই ঘাম আবহাওয়া ঘটিত নয় । তার শ্বাস প্রশ্বাস ক্রমশ ঘন থেকে ঘনতর হয়ে উঠছে ।
চিত্কার করতে চাইলো সে । পারলো না । খাটের দিকে হেটে যেতে চাইলো । কিন্তু তার পা গুলো বিশ্বাসঘাতকতা করলো তার সাথে । হটাত্ করেই যেন অসম্ভব দুর্বল লাগছে নিজেকে ।
তিহানের হাটু আপনা আপনি ভাজ হয়ে গেলো । সে বুঝতে পারছে যে সে জ্ঞান হারাচ্ছে । শেষ মুহূতেত্ কাছের চেয়ায়টা আকড়ে ধরতে চাইলো সে । চেয়ারটা বেকায়দাভাবে ধরতে পারলো বটে তবে চেয়ারটা তার ভার রাখতে পারলো না । হুড়মুড় করে চেয়ারসহ মেঝেতে পড়ে গেলো তিহান ।
চোখগুলো লেগে আসছে । তখন আবছামত দেখতে পেলো যে তার মা বাবা দরজা খুলে তার রুমে ঢুকছে । তারপর আর কিছু মনে নেই তিহানের ।
নিজেকে হাসপাতালে আবিস্কার করলো তিহান । পাশে ফিরতেই দেখতে পেলো তার মায়ের বিমর্ষ মুখ ।
হাসার চেষ্টা করলো সে কিন্তু হাসতে পারলো না । ঠোটজোড়া একে অপরের সাথে সেটে আছে শক্ত করে । জোড় করে ছাড়াতে চাইলো সে । ফলসরূপ এক ঠোটের চামড়া উঠে গেলো । রক্ত বের হয়ে এলো সেখান থেকে ।
তিহানের মা রাহেলা বানু ব্যাপারটা খেয়াল করলেন । পরম মমতায় ছেলের ঠোটজোড়া আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরলেন । একটু পর রক্ত পড়া কমে এলো । কিন্তু একেবারে বন্ধ হলো না । তিহান মায়ের দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসি দিল একটা ।
তিহানকে সেদিনই বাসায় নিয়ে আসা হলো ।
তিহান আবারও ফিরে গেলো তার চিরচেনা রুমে । চুলগুলো তখনও কাঁটা হয়নি । বড় বড় চুলগুলো চোখের উপর এসে পড়ছে । চোখের উপর থেকে চুল সড়িয়ে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো সে ।
বাইরে শুধুই শুভ্র জোছনার আলো । জোছনার শুভ্রতায় পৃথিবী ধুয়ে মুছে একাকার হয়ে যাচ্ছে । তিহান চুপ করে বসে আছে । তার দৃষ্টি তখন পূর্নিমার চাঁদের দিকে আবদ্ধ । রুমের প্রশ্চিম দেয়ালে একটা ঘড়ি টিক টিক শব্দে বেজে চলছে ।
এখন রাত ১২.৪৫ । তিহানের সমস্যাটা ইদানিং তীব্র আকার ধারন করেছে । প্রায়ই সে অসুস্থ হয়ে যায় ।
তিহানের রোগটার নাম লিউকোমিয়া । পৃথিবীতে দু ধরনের লিউকোমিয়া আছে ।
ক্রোনিক আর একিউট । তিহানের একিউট লিউকোমিয়া । খুব খারাপ অবস্থায় ধরা পরেছে রোগটা । ওর রক্তের গ্রুপ AB নেগেটিভ । যা খুবই দুষ্প্রাপ্য ।
কোন আশাই নেই আর । তবুও ডাক্তাররা কেমোথেরাপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । মাত্র দুদিন পরই তিহানের কেমোথেরাপি । তিহানের বাবা মা তাকে সাহস দিতে চেষ্টা করেন , তাকে আশ্বস্থ করার চেষ্টা করেন । কিন্তু তিহানকে সাহস দিতে গিয়ে নিজেরাই ভেঙ্গে পড়েন ।
তিহান চুপচাপ সব দেখে যায় । তার কোন প্রতিক্রিয়া নেই । যেনো যা হচ্ছে সব অতি সহজেই মেনে নিয়েছে সে ।
(৩)
তিহানের কেমোথেরাপি আর মাত্র এক সপ্তাহ পর । কেমোথেরাপি খুব বেশি সুখকর ব্যাপার নয় ।
প্রচন্ড যন্ত্রনা হয় । তাছাড়া এর মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা যায় না শুধুমাত্র ক্যান্সার কোষের গ্রোথ কমানো যায় । তাছাড়া কেমোথেরাপির ফলে ফুসফুস , যকৃত , হৃদপিন্ড সহ শরীরের আরো অনেক অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হয় । শ্বেত রক্ত কণিকা নষ্ট হয়ে যায় । যার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই শূন্যের কোঠায় নেমে আসে ।
তবে যদি একদম প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে তখন একটু আশা থাকে । কিন্তু তিহানের ক্যান্সারটা অনেক খারাপ অবস্থায় ধরা পড়েছে । ডাক্তাররা আশাই ছেড়ে দিয়েছেন । তবুও সবার আশা আরো কয়েকটা দিন তাকে বাঁচিয়ে রাখার । তিহান কিছু খেতে পারে না ইদানিং ।
খেতে গেলেই তার রক্ত বমি হয় । তিহান খেয়াল করে তার মা ফুপিঁয়ে কাঁদে , তার বাবা আড়ালে চোখ মোছেন । এসব দেখতে তিহানের ভাল লাগে না । সে তাই নিজের রুমের বিশাল জানালার পাশে চুপ করে বসে থাকে ।
ইদানিং সে তার ডায়রিতে কি যেনো লিখে ।
রাহেলা বানু প্রায়ই ব্যাপারটা খেয়াল করেন । তবে গুরুত্ব দেননা তেমন । আসলে ছেলের অসুখের চিন্তায় তিনি এতোটাই চিন্তিত যে অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করার অবকাশ তার থাকে না । তিহান গত ৪ মাস ধরে ভার্সিটিতে যায় না । তিহানের বন্ধুরা তার সাথে দেখা করতে এসে ব্যার্থ হয়ে ফিরে যায় ।
তিহানের মা রাহেলা বানু অথবা বাবা আশরাফ হোসেন কেউই তার এই অস্বাভাবিক নিয়তিকে মেনে নিতে পারেন না । তারা আড়ালে কাঁদেন । তিহানকে দেখা যায় প্রতিদিন জানালার পাশে বসে থাকতে । রাত দিন বিরাম নেই সে বসে থাকার । তিহান বসে বসে ডাইরি লেখে ।
সদা হাস্যজ্বল , চন্চল তিহান কিভাবে এতো দ্রুত শান্ত হয়ে যায় তা কেউ জানতে পারে না । তিহান এখন একা থাকতেই বেশি পছন্দ করে ।
(৪)
রাত ৮.৩০ । দেয়াল ঘড়িটা টিক টিক আয়োয়াজ করে যাচ্ছে । আকাশ বেশ মেঘলা ।
গুমোট আবহাওয়া চারিদিকে । থেকে থেকে ঝড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে । ইলেক্টিসিটি চলে গেছে । তিহাদের বাসার জেনারেটর সাথে সাথেই চালু হয়ে গেছে । তবুও তিহানের রুমটা অন্ধকার ।
তিহানের ডাইরিটা খোলা । সেটা পরে আছে টেবিলের উপর । তিহান অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে । আজ তার দৃষ্টি অদ্ভুত । কেমন যেনো বিষন্নতায় ছেয়ে আছে তার চোখ মুখ ।
দরজা খোলার শব্দ হলো । ঘড়ে ঢুকলেন রাহেলা বানু আর আশরাফ হোসেন । আজ রাত দুটোয় তিহানদের ফ্লাইট । আমেরিকায় যাচ্ছে তারা ।
তিহান ফিরে তাকালো ।
উঠে এসে বাবা মায়ের হাত চেপে ধরলো । রাহেলা বানু আর আশরাফ হোসেন শক্ত করে চেপে ধরলেন ছেলের হাত । আবছা ছায়ায় তিনটি মানব মূর্তি চুপ করে বসে আছে । পৃথিবী যেনো শান্ত স্থবির হয়ে আছে । নিঃশব্দ পৃথিবীর বুকে কোথায় যেনো এক ভয়াবহ হাহাকার খেলা করছে ।
রাহেলা বানুর চোখ থেকে টপ করে এক ফোটা তপ্ত জল পড়লো তিহানের হাতের উপর । তিহান আরো শক্ত করে চেপে ধরলো মায়ের হাত । আশরাফ হোসেন তিহান আর রাহেলা বানুকে জড়িয়ে ধরলেন এক হাতে । তারপর আরেকহাতে তিহানকে শক্ত করে ধরলেন । যেনো তিহান ছোট বাচ্চা কোথায় হারিয়ে যাবে ।
আশরাফ সাহেবও কাঁদছেন । চুপচাপ বসে আছে শুধু তিহান । অনেকদিন মা বাবার এমন স্পর্শ পায়নি সে । প্রাণ ভরে তাই উপভোগ করছে ভালবাসার প্রতিটি মূহুর্ত । এভাবে কতক্ষণ বসে ছিলো তারা জানা হয়নি ।
বাইরে থেকে কে যেনো ডাক দিলো । আশরাফ হোসেন আর রাহেলা বানু উঠে দাড়ালেন । তিহানকে তৈরি হতে বলে বেড়িয়ে গেলেন রুম থেকে । তিহান কিছুই বললো না । বাবা মায়ের চলে যাওয়া দেখলো চুপচাপ ।
তারপর আবার এগিয়ে গেলো জানালাটার দিকে । মাথা ঝিম ঝিম করছে তার । গা গুলিয়ে উঠছে । চোখের দৃষ্টি ঝাপসা । আকাশ তখনও মেঘলা ।
জানালার সামনে থেকে চেয়ারটা সরিয়ে আনলো সে । তারপর শরীরের অর্ধেক অংশ জানালা দিয়ে বের করে দু হাত প্রসারিত করলো । যেনো মুক্ত বিহঙ্গ সে । প্রচন্ড বাতাসে তার চুলগুলো উড়ছে তখন । চোখ বন্ধ করে আছে তিহান ।
(৫)
ঠিক রাত ১০টায় তিহানের রুমে ঢুকলেন রাহেলা বানু । ছেলেকে জানালার কাছে আবিস্কার করলেন তিনি । চিত্কার করে উঠলেন । সাথে সাথে আশরাফ সাহেব সহ বাসার সবাই ছুটে এলো । তিহানকে জানালার উপর আবিস্কার করলো সবাই ।
তার কোমড় থেকে হাত সহ জানালার বাহিরে আর পা ঘরের ভিতরে । চোখ বন্ধ তার । মুখে রক্তের দাগ শুকিয়ে গেছে । তখনও মৃদু বাতাসে তার চুল উড়ছিলো । হটাত্ দমকা বাতাস বয়ে গেলো ।
প্রচন্ড বাতাসে তার চুলগুলো পতপত করে উড়তে লাগলো । বাতাসের ঝাপটায় তার ডাইরির শেষ পাতাটা উল্টে গেলো । সেখানে লেখা
"পৃথিবীর রূপটা বড়ই অদ্ভুত । চেনা পৃথিবীটাকেই আজ খুব বেশি অচেনা লাগে । প্রিয় মানুষগুলোর মুখের উত্কন্ঠা দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত ।
আর ভাল লাগে না । রঙ্গিন পৃথিবী হটাত্ করেই যেনো সাদা কালো হয়ে গেছে । পৃথিবীর সব সোন্দর্যই আজকে আমার কাছে ম্লান । আচ্ছা আমি কি মরে যাব ? মরে গেলে কি হয় ? আমি কি আবার ফিরে আসবো ? নাকি সবাইকে ছেড়ে যাওয়ার এই যাওয়াই শেষ যাওয়া । আমি কি আর ফিরতে পারবো না ? জানা নেই আমার ।
ইদানিং একটা অদ্ভুত শখ চেপেছে মাথায় । মুক্ত পাখি হয়ে উড়ার শখ । তবে সময়টা হতে হবে জোছনা রাত । যেখানে আধাঁরে ঘেড়া পৃথিবীতে অদ্ভুত শুভ্রতার বার্তা পৌছে দেয় জোছনার আলো । আজকে আমি চলে যাচ্ছি ।
অথচ আকাশটা মেঘে ঢাকা । আধাঁরে ঘেড়া পৃথিবী আরো বেশি কালো লাগছে । আধাঁরে শুভ্রতার খোঁজ কি পাবো না ?"
তিহানের লাসটা যখন এম্বুল্যান্সে উঠানো হচ্ছে তখন তার মুখটা আকাশের দিকে তাক করা ছিল । তবে সাদা কাপড়ে ঢাকা ছিল । হটাত্ দমকা বাতাসের ঝাপটায় মুখের উপর থেকে কাপড়টা সরে গেলো ।
আকাশে মেঘের ফাঁক গলে বের হয়ে এলো চাঁদ । জোছনার আলো চারিদিকে ছড়িয়ে গিয়ে মায়াবি আবেশ সৃষ্টি করছে । চারিদিক উদ্ভাসিত সে আলোয় । তিহান আধাঁরে শুভ্রতার খোঁজ পেয়েছিল কিনা জানা যায়নি । এ পৃথিবীর অনেক অব্যাক্ত কথার মাঝে আরেকটি ছোট্ট কথাও মিলিয়ে গেলো ।
কেউ তার খোঁজ জানে না ।
উত্সর্গ ও অব্যাক্ত কিছু কথাঃ
লেখালেখি এক ধরনের থেরাপি। ব্যাক্তিগত হতাশা , দুঃখবোধ থেকে বের হয়ে আসার পথ । আমি এই থেরাপি গ্রহণ করে নিজের মনকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করি
-হুমায়ূন আহমেদ । (বলপয়েন্ট)
স্যার পৃথিবীতে শতকরা নিরানব্বই শতাংশ মানুষই সাদা কালো পৃথিবীর গ্যাড়াকলে পিস্ট হতে পছন্দ করে ।
অথবা নিয়তির দান মনে করে কোত্ করে গিলে ফেলে । তারা ব্যাক্তিগত হতাশা দূর করার মাধ্যম খুঁজে পায় না । কি অদ্ভুত তাই না স্যার? আপনার এই কথাটার কত বড় প্রভাব যে আছে আমার জীবনে । আমার সাদা কালো পৃথিবীতে রঙ্গিন তুলির আচড় দিয়েছিল আপনার এই কথাটা । স্যার কোথায় চলে গেলেন আপনি ? আবার যখন হতাশাগ্রস্থ হয়ে যাব তখন কার কথায় আবার রঙ্গিন হবে আমার পৃথিবী ?
স্যার সবাই হিমু হতে চায় ।
পারে না হয়তো । আমার ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম । আমি কাঁদতে চাই । আমি না চাইতেও হিমু হয়ে গেছি । হিমুরা কাঁদে না ।
স্যার আমি কাঁদতে চাই স্যার. . . প্লিজ স্যার । স্যার আমাকে দয়া করে একটা উপায় বলে যান. . . . .প্লিজ স্যার পৃথিবীর হারিয়ে যাওয়া প্রশ্নের ভান্ডারে আমার প্রশ্নটা হারিয়ে যেতে দিবেন না প্লিজ । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।