সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল (সবাইকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা। নিতান্তই কোন বড় (!) কিছু না ঘটলে, গোটা রমজানে কোন রাজনৈতিক পোস্ট দেব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি)
ঢাকাইয়া নামটি শুনলেই চোখে একটা অন্যরকম চিত্র ভেসে আসে। মুখে হালা/গালি ছাড়া কথা নেই। মাথা গরম, মারদাঙ্গা। পরণে সাদা লুঙ্গি পাঞ্জাবি।
কালচার বলতে কিছু নেই। অনেকে পান খেয়ে মুখ লাল করে রাখে। কথার ছিড়ি শুনলেই পিত্তি জ্বলে উঠে। অনেকে আবার উর্দু মিশেলে বাংলা বলে। শুনলে বিহারি বলে ভুল হতে পারে।
সারা বাংলাদেশের অন্যান্য মানুষদের সাথে কোথায় যেন বেশ ভালো রকমেরই ফারাক।
কিন্ত এত দোষের(!) পরেও এদের বেশ কিছু গুণ আছে। সেগুলির কথা আজ থাক। দোষ গুণ নিয়েই যখন মানুষ, তখন এককভাবে ঢাকাইয়াদের দোষ দিয়ে কোনঠাসা করা খুবই অনুচিত হবে। বিশেষ করে আমি সেকাজটি করলে, সেটি নিজের উপরেই থুথু দেয়া হবে।
পবিত্র রমজান চলছে। আর রমজানের সাথে যে শব্দটি জুড়ে আছে, সেটি ইফতার।
ব্লগে যারা আমাকে চেনেন, তারা বিলক্ষণ আমার খাদ্যপ্রীতি সম্পর্কে অবগত। তাই একজন ঢাকাইয়া হিসাবে ঢাকার আদিবাসিদের ইফতার (ঘরোয়া) নিয়ে এই পোস্টটি সাজিয়েছে।
বাইরের খাবার দিয়ে ইফতার করাটা আমার বাবা মা দুজনের অপছন্দের বিষয়।
তাই বেশির ভাগই মা-র তৈরি করা।
শরবতঃ ঋতুভেদে লেবু-রুহ আফজা-তোকমা-ইসবগুল-বেল ।
তবে এক নম্বরে থাকতো মাঠা বা ঘোল। শীতের দিন হলে সাথে মাখন।
ফলঃ শশা এবং খেজুর অবশ্যই।
পেপে ঋতুভেদে।
মিস্টিঃ চকের জিলাপি। অন্য কোন মিস্টি মুখে রুচতো না।
তেলেভাজাঃ পিয়াজু, ফুলুড়ি, বেগুনি, আলুর চপ (ভেতরে কিমার-পিয়াজ কাচা মরিচ আর পুদিনা পাতার পুর দেয়া বেসনে ভাজা), সিঙ্গারা, পুলি পিঠার আদলে তৈরি ভেতরে কিমা দেয়া সমুচা নামে সুখাদ্যটি বোম্বে সুইটস বানায়। তবে খেতে সেই রকম।
এক বসায় ১০-১২টা খাওয়া যায়। এটা অবশ্য বাইরে থেকে কিনে আনা হতো।
আর মাঝে মাঝে রুই মাছ কিংবা আস্ত চিংড়িকে বিশিস্ট মিশ্রনে ডুবিয়ে ডুবো তেলে ভাজা হতো। নাম কি বলবো ! ইংরেজিতে বলে ফিস ফিঙ্গার
মুড়ির ভর্তাঃ ভাবছেন, এতে আবার এমন কি বৈশিস্ট ! সবাই খায়। তবে প্রসেসটা সামান্য ভিন্ন।
তার আগে বলে রাখি, বাজারে যে পিয়াজু পাওয়া যায়, তার চেয়ে আমার মায়ের হাতের পিয়াজুর স্বাদ একদমই ভিন্ন। পিয়াজুতে কাবাবের স্বাদ পেতে গেলে রেসিপিটাও সেই রকম তো হতে হবে, নাকি?
মুড়ির ভর্তার প্রধান উপাদান হলো ডাবলি সেদ্ধ। পিয়াজ কাচামরিচ, লবন, বড় লেবুর আস্ত একটা লেবুর রস, বেশি করে সরিসার তেল আগে এক সাথে মিশানো হতো। সেখানে ফুলুরি আর আর কাবাবের স্বাদওয়ালা পিয়াজু আর বেশ করে ডাবলি সেদ্ধ একেবারে ভালো করে মিশিয়ে ফেলা হতো।
ইফতারের প্রাথমিক অনুসঙ্গ শেষ করে, এর পর মুড়ি মাখিয়ে খাওয়া হতো।
ওই বস্ত খাবার পর কম লোকেরই সাধ্য হবে সেহরির আগে কিছু খাওয়া।
তবে এই ধরণের মুড়ির ভর্তা প্রায় ঢাকাইয়াদের বাড়িতেই পরিবেশিত হয়। তবে সেখানে অনেকে বিভিন্ন ধরণের কাবাব মেশান। আমার বাবা তো সেখানে অনেক সময় বিরিয়ানিও মিশিয়ে দিতেন।
এই মুড়ির ভর্তার সাথে শশার টুকরা খেয়ে দেখুন।
কোথায় লাগেদামি দামি হোটেলের ইফতার !
আমাদের পেটে তেমন সমস্যা হতো না। কেননা, এই মুড়ি ভর্তা খাওয়ার আগে, মাঠা- ইসুবগুলের বা বেলের শরবত, সাথে পেপে পেটকে বিগড়াতে দিতো না।
আমরা ভাই বোনেদের কাজ ছিল, মা এর তেলেভাজা তৈরি শেষ হলে, সব জিনিস বারান্দায় আনা। এর পর ফুলুরি আর পিয়াজু টুকরা টুকরা করে বোলের মধ্যে রাখা। বাবা এসে মেশানোর কাজটা করতেন।
ভাবছেন, বুট ছাড়া ইফতার !
আসলে ছোলাটা লবণ আর আদা দিয়ে পানিতে আগের রাতেই ভেজানো থাকতো। ইফতার শেষ হলে, মাগরিবের নামাজ পড়ে, সেই ছোলা টিভি দেখতে দেখতে খাওয়া হতো।
এই তো ! গরিবের ঘরে সামান্য ইফতারের গল্প। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।