অন্ধকার; মৃত নাসপাতিটির মতন নীরব'
১/
ঘড়িকলের কাঁটা নীল জড়তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে
লঘুগ্রামে বাজছে আমাদের যান্ত্রিক জীবনের মনোটোন
চাকার খাঁজে ক্রমশ জড়িয়ে যাচ্ছে অবসন্নতার ব্লুজ
শিলারের শব্দগুলো নবম সিম্ফোনিতে বসে গেলে
জীবনের উল্লাসে উচ্চগ্রামে উঠে পড়ে
তৃষ্ণার্ত ভায়োলিন,
সোনাটায় বাজে আমাদের অসুখের নীল সিম্ফোনি
আমাদের স্বপ্নসঙ্কুল চোখে রাত্রি নেমে আসে,
ঘুমেরা আরো নির্ঘুম হয়ে উঠে, রীতিবহির্ভুত
ভাবে মরফিয়াস হয়ে উঠে অপেশাদার, উৎকন্ঠাহীন
পাথরের মত চোখ, অপলক
কপট কৌশলে টিকটিক টহল দেয় বিভ্রান্তির কাঁটা
আমাদের মাঝরাতের পানশালায়
ঝুলতে থাকা ঘড়িকলের অনুক্রম স্বগতোক্তিতে
সৃষ্টি হয় জুডাস,
সেখানে কালের অদৃশ্য চক্র ঘোরে শব্দহীন
বরফকুচির নিঃশ্বাসে স্ফটিক পেয়ালায় সৃষ্টি হয় ইশ্বর
আমাদের প্রান্তিক চিন্তগুলো যেন উদ্দিপ্ত ছুরির ফলা
সিনপসিসের লেন ধরে স্বেচ্ছাধীনতায়
অক্সনের গলিপথে পৌছে যায় কপট কৌশলে
অতঃপর ডানাহীন রঙিন প্রজাপতির মত
ভাষতে থাকে শুন্যে
২/
আজও কিছু নৈরাজ্য রয়ে গেছে এই পৃথিবীতে
সেই ছোট্ট পৃথিবীর বসতবাড়ি আমার মানসপটে
উড়ন্ত কিছু ছায়া সেখানে স্বৈরাচারী বিভ্রান্তিতে ভোগে
যে নন্দনকাননে আমার কল্পনারা পাখা মেলে
তার নৈসর্গের মুক্তাশুক্তির নিষ্ক্রিয় অংশীদার
আমার যাপিত জীবন
উরোগামী যে মাকড়শাটা সেই কাননে
নিরিবিলি জাল বুনেছে তা গরোলদগারী
সেখানে আজ প্রায়ই শোনা যায় পাখির কলকাকলী
আর মৌমাছিদের গুঞ্জন
আমি সেই দেবীর আরোধনা করি না যে
বিক্ষিপ্ত রাতের ঘুমঘোরে বারেবারে হানা দেয়
দ্রুতই চোখের পর্দা টেনে দেই, অশুভ ছায়া
বিভ্রান্ত হয়ে ফিরে গেলে নৈসর্গে হানা দেয় তুষারঝড় ।
৩/
পাথরে থাকে না কারো অধীকার, থাকেনা পাথরের নিজেরও, নয় সে কোন বাগানের স্থাবর । নিশ্চল সেই পাথরের দৃশ্যদিগন্তে রোদের ফোঁটা ক্রমশ সম্প্রসারিত হয়ে পুর্নদৈর্ঘ্য একটা আকাশ আঁকে...
আলোর কুয়াশায় ডুবে থাকে পাথর, তার আঁধারে ঘুমের আস্বাদে লালিত করোটি কোনদিন জাগবেনা আর...
সেই পাথরে করোটির পুর্ন অধীকার ঘোষনা করে সমাধীফলক...
গোধুলীর অস্পষ্ট আকাশের নিচে নিঝুম ঘুমের এই কুয়াশাপুরীতে আমি দাড়িয়ে আছি একাকি, পাথরের মত হিম চোখে নিশ্চল ও অপলক...
এখানে নেই কোন প্রার্থনার অনুরণন কিংবা বিলাপের কন্ঠস্বর, ক্ষয়ে গ্যাছে ক্রমশ স্থাবর দেয়াল । সমুদ্রের শত শত বছরের তরঙ্গরাশির অব্যক্ত উচ্ছাস নিয়ে টিকটিক শব্দে টহল দেয়া ঘড়িকাঁটাও যেন নীল নিঃসীম নিদ্রায় ডুবে গেছে...
এখানে পায়ের দাগে হয়েছে পথের শেষ, সকল পড়ন্ত রোদ অবসর গ্যাছে, বিমর্ষ খুলি হারিয়েছে দ্যুতি, শুকিয়ে গ্যাছে সবুজরক্ত আর জলপাই পাতা, শুষে নিয়ে রোদের ঘ্রান বাতাসে বাজছে হাড়ের ঐকতান ।
অস্ফুট সংকেতলিপির বন্ধাত্ব কাটে না ।
রক্তশুন্যতায় ভোগা মৃ্ত বৃক্ষ শাখায় আংটার নেকাবে বের হয়ে আসে একটা সন্দিগ্ধহাত, কেঁপে কেঁপে উঠে জলের অবয়বে...
কালো পালকে সজ্জিত একটা ঘোড়া স্লেজের চাকায় গতিশক্তি যোগান দিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল এখানে, জিরিয়ে নিয়েছিল কিছুক্ষন...
মুছে গেছে পুরাতন পৃথিবীর সেই সব স্পন্দন । পাথরবদ্ধ চারদেয়ালের হিমশয্যা যেন পাথুরে গ্রন্থাগার এক যেখানে প্রতিধ্বনিত হয় নৈশব্দ্য, আর সে নৈশব্দ্যের দেয়াল বেয়ে বেদীতটে নেমে আসে অবনতমুখী ফার্ন ।
৪/
গোলাপীবরন গোধুলীর সীমানায় আধাঁর জেগে উঠে । ড্যান্ডিলায়ন ঘড়িটা সময় ভুলে গ্যালে রাত্রি নেমে আসে । পাখিদের কূজন থেমে আসে সাঝের বেলায়, পাখি সব ফিরে যায় আপন নীড়ে ।
আর আমাদের এই শহর হয়ে পড়ে সঙ্গীতহীন ।
মহুয়া গাছের বর্ষীয়ান প্যাঁচা দুটো হেঁড়ে গলায় এই শহর গ্রাসকারী ইটের কীটেদের প্রতি ছুড়ে দেয় প্রবল বিদ্রুপ । অঘ্রানের এই রাতগুলোতে লোডসেডিংয়ের সান্ধ আইন জারী হয় নিয়মমাফিক । আমাদের চোখে ঘুমেরা আরো নির্ঘুম হয়ে উঠে । শুনে যাই প্যাঁচাদুটোর সেই বিদ্রুপ সমাচার ।
এই পাথরের জঙ্গলে বন্দী কিছু ঝিঁঝি পোকা আজ হঠাত বিদ্রোহ ঘোষনা করেছে । দিনের আলোতে হলুদ পাতার নীড়ে চুপিসারে অর্কেষ্ট্রার স্কোর রচনা করেছিল আর রাতের অডিটোরিয়ামে সেই স্কোরের সাথে গানের ধুয়া তুলে কোরিওগ্রাফিতে অংশ নেয় । আধাঁরে জ্যোতস্নার যোগান দিয়ে ডুবে যায় শশী । রাতের সুনশান নিরবতায় রাতবিলাসী ঝিঁঝিরা বাজায় অপুর্ব সেরেনেড ।
ঝিঁঝি পোকারা ডাকে, থামে, আবার ডাকে ।
ঝিঁঝি পোকাদের সমবেত ঐকতান, শব্দমূর্ছণা ছড়িয়ে পড়ে গাঢ় হয়, জমাট বাধে অবিরাম । রাত্রি বেড়ে চলে নৈঃশব্দ্যে । গাছের কচি ডগায় শিশির সম্পৃক্ত হয় । ঝিঁঝি পোকাদের ব্যস্ততা বেড়ে গেলে নিস্তব্ধ রাত্রির নিঃসঙ্গতা প্রলম্বিত হয় ।
ক্রমেই অপসৃয়মান হয় রাতের এই কার্নিভাল ।
টহলদার ঝিঁঝি্রা সারা রাত নিদ্রাহীন কালক্ষয় করে ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগেই আবার লুকিয়ে পড়ে পাতাদের আড়ালে । সাদা ডেইজির ঔরষে জন্ম হয় পাস্তুরিত সকাল ।
ঝিঝির ডাক (ইউটিউব)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।