এসো নীপবনে
নেই, তিনি নেই।
এই ক'দিন আগে ইমদাদুল হক মিলনের একটা লেখা থেকে খুব সুন্দর একটা জেনেছিলাম, 'তিনি আমাদের মেলা কাত করা লেখক। যিনি একলাই বই মেলাকে জনপ্রিয়ো করেছেন। দুই হাত খুলে লিখেছেন। ছোটদের জন্য, বড়দের জন্য, কিশোরদের জন্য যদিও তিনি নিজে বলেছেন তিনি লিখতেন শুধু নিজের জন্যই।
নিজের ভালো লাগা থেকে। অন্যের ভালো লাগবে কিনা সেই ভাবনা কখনো চিন্তাও করেন নি।
'এইসব দিন রাত্রি' নাটকটি হয়তো অনেকরই মনে পরতে পারে। কি রকম জনপ্রিয়ো হয়েছিলো। নাটক শুরু হলে দোকান-পাট বন্ধ করে মানুষ নাটক দেখতে যেতো।
সেই নাটকের জনপ্রিয়োতা নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন- 'আমি শুধু একটি রঙিন টেলিভিশন কেনার জন্য এই নাটকটি লিখেছি। যখন দেখেছি টাকা হয়ে গেছে, টুনি চরিত্র মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে শেষ করে দিয়েছি। '
শক্তিমান অভিনেতা আবুল খায়ের, পত্রিকায় পড়ে তার কাছে জানতে চান, আমরা এতো কষ্ট করে এত মমতা নিয়ে এই নাটকে অভিনয় করলাম এইসব কিছু না? তিনি খায়ের ভাইকে বাসায় এসে তিন মেয়ের আনন্দ দেখের জন্য অনুরোধ করলেন। আবুল খায়ের তার তিন মেয়ের আনন্দ দেখে দুঃখ ভুলে গেলেন। আমেরিকা থেকে যখন দেশে ফেরেন, মোটামুটি খালি হাতেই আসেন।
সেই সময় অন্যের বাসায় টেলিভিশন দেখতে যাওয়া, আবার দেখতে না দেওয়া এই সব তার মনকে কতটা নাড়া দিয়েছিলো বোঝা যায়। শুধু টাকার জন্য একটা সময় লেখা-লেখি করেছেন বাড়তি কিছু আয়ের উৎস হিসেবে। তিনি আমাদের হুমায়ূন আহমেদ।
দারিদ্র কত মহান! নয়তো আমরা, এই বাঙালী জাতি কি একজন হুমায়ূনকে পেতেন? পেতাম না।
আমার বই পড়া- গল্পের বই- শুরু মূলতঃ হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে।
একদিন শুভা আপাকে একটা বই দিতে বললো আরমান ভাই। কেন বললো? এই সব তখন তেমন বুঝে উঠিনি। আরমান ভাইরা বেশ বড়লোক। তাদের বাসাটা সবচেয়ে বড়। সামনে কত জায়গা! কত গাছ! তিনি ফুটবল খেলেন, ক্রিকেট খেলেন, আবার হকি স্টিক নিয়েও দৌড়া দৌড়ি করেন।
রংধনু ক্লাবের সক্রিয় সদস্যও।
একদিন তাদের দলের কয়েকজন সদস্য দৌড়ে দৌড়ে কোথায় যেন ছুটছেন। আমি কেবল বাসা থেকে গেটটা খুলেছি। এমন সময় আরমান ভাই আমাকে বইটা দিলো। বললো আমার কাছে রাখতে।
বলেই আমার দৌড়ে চলে গেল অন্যদের সাথে। আমি বইটা নিয়ে আর বের হলাম না। পড়তে শুরু করলাম ঘরে বসে। বইয়ের নামটা এখন আর মনে নেই। তবে বইটা তার মেয়েদের নিয়ে লেখা।
নোভা, বিপাশা আর শিলা। তারা কি করে, সেই সব ছেলে না মেয়ে মানুষি নিয়ে সেই বই। আমার খুব ভালো লেগেছিল। এরপর কিভাবে কিভাবে যে হুমায়ূন ভক্ত হয়ে উঠলাম কি জানি? প্রতি বছর বইমেলায় যাই, হুমায়ূন আহমেদ এর বইয়ের পাশাপাশি আরো কিছু বই কিনি। এখন কার বই কিনতে যাবো?
এখন আর কিছুই ভালো লাগছেনা।
সবাই তার জন্য দোয়া করেন।
ইন্নানিল্লাহে ওয়া ইন্নানিল্লাহে রাজীওন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।