এইচএসসির রেজাল্ট প্রকাশিত হল ১৮ই জুলাই । আমার রেজাল্ট গোল্ডেন ৫ জানতে পেরে ফ্যামিলি আর রিলেটিভদের আনন্দ দেখে ভালই লাগল ...
৬১১৬২ টা জিপিএ ৫ ! যাকে বলে কোপাকুপি অবস্থা !
কোন এক চ্যানেলে দেখলাম ভিকারুন্নেসা কলেজের এক ছাত্রীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হল । অতি বিমর্ষমুখে সে জানাল " দিনে ৮-১০ ঘন্টা পড়াশোনা করতাম " । টেলিভিশানের পর্দা থেকে ধাঁই করে আমার মাথা ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেল । মনে মনে বললাম , " সাধু ! সাধু ! "
পিচ্চিকালের এক বান্ধবীকে গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে ফেইসবুকে খুজেই পাওয়া যাচ্ছিল না ।
এই বছর জুন-এ দেখি তিনি আবারও ফেইসবুকে ! জানতে চেলাম , " কি ব্যাপার ! ফেইসবুক কে হঠাৎ ডিভোর্স দিলে দেখি !" ও বলল , "না ... মানে ... পরীক্ষা ছিল তাই আসি নি ! " ... একটা চুইং গাম চাবাচ্ছিলাম ... বিনা নোটিসে গলায় আটকে গেল ওটা ...
জীবনের হাজারটা ভিন্নমাত্রার ক্ষেত্র থাকবেই ... তাই বলে সব কিছু ক্লোজ করে দিয়ে ঝাঁপ দিতে হবে নাকি একদিকে !
আমাদের গড় আয়ু মাত্র ৬০ বছর ... রাস্তা ঘাটে ২-১ দিন পর কারও না কারও চেপ্টা হয়ে যাওয়ার খবর আমরা প্রায়ই দেখি ...মানে দেখতে বাধ্য হই ... পৃথিবীর এই দেশটাতেই কেবলমাত্র সুপারম্যানদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয় কি না [ড্রাইভিং লাইসেন্স কি আসলেই আছে তাঁহাদের?] ! সুতরাং মাথায় হেলমেট পড়ে না ঘুরলে বরাদ্দে ওই ৬০ ও না জুটতে পারে !
ওদের কথায় ভড়কে গিয়ে নিজের বিগত ২ টা বছরের কথা ভাবলাম ...
কিছুই ছাড়িনি আমি ... কিছু পেতে হলে নাকি কিছু দিতে হয় ...
উদ্ভাস এইচএসসি মডেল টেস্ট দিতে যাওয়ার নাম করে গেমিং ক্যাফেতে ঘন্টার পর ঘন্টা কল অফ ডিউটি / ফিফা নিয়ে মেতে থাকা , টিচারদের বাসায় না যেয়ে দৈনিক ৩-৪ ঘন্টা ফ্রেন্ডস সার্কেলকে দেওয়া , মাঝে মাঝে জরুরী ভিত্তিতে ঢাকা ত্যাগ করা [ব্যপক কাভার স্টোরি চারপাশে ছুঁড়ে ] , ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা ... ফেইসবুকে প্রায় সারাদিন বসে থাকা - এইচএসসির মাত্র ২ মাস বাকি যখন , তখনও সমানে চলছিল এসব কার্যক্রম ...
পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর , যেদিন প্রথম পরীক্ষা , সেদিন সেন্টার দেখতে গিয়ে রাত ৮। ৩০ এ বাসায় ফিরলাম ... বাসায় তো ঝড় ! পরদিন ইংরেজী পরীক্ষা , আমি ৪ ঘন্টা বাইরেই ছিলাম ... ফিজিক্স পরীক্ষার আগের বিকালে বের হয়ে রাত ৮তার আগে বাসায় আসতে পারলাম না ...
গড় করলে এই ২ টা বছরে আমি দিনে ১ ঘন্টাও পড়িনি সম্ভবতঃ ...
ছাড়িনি ফেইসবুক , ছাড়িনি কোন ধরনের বিলাসিতা-ই ... তাই বলে পরীক্ষার হলে অন্য কারও সাহায্যও নিতে হয়নি আমাকে ।
অথচ , ফলাফল আমাকে নিরাশ করেনি ...
যারা সামনের বার পরীক্ষা দিতে যাচ্ছ , তাদের শুধু বলব , পড়তে পড়তে ফেইন্ট হয়ে যেও না । টেইক ইট ইজি ! যেভাবে তুমি প্রতি সেকেন্ডে বাতাস টেনে নিচ্ছ বুকে - যতটা স্বাভাবিক এই ঘটনা , সেভাবেই পড়াশোনা চালিয়ে যাও । কোন অতিরিক্ত চাপ না , কোন রকম সেচ্ছা-বন্দীত্ব না ।
আমি ম্যাথ ছাড়া আর কোথাও প্রাইভেটও পড়ি নি । ওই সময়টা স্যারদের বাসায় যাওয়ার নাম করে দিয়েছি নিজেকে । স্টেডিয়াম এর চত্বরে , চায়ের দোকানে কত অলস বিকাল আড্ডা দিয়ে কাটিয়েছি ! আমি এই তত্বে বিশ্বাসী - ' মেইক ইয়োরসেলফ হ্যাপী , ডু হোয়াট ইউ ওয়ন্ট টু ডু - দেন ট্রাই টু ডু হোয়াট ইউ হ্যাভ টু ডু "
এই কথাগুলো শুধুমাত্র এইচএসসির জন্য বলা । তারপরে যখন অ্যাডমিশন টেস্ট এর জন্য প্রিপারেশান - সেক্ষেত্রে " ট্রাই টু ডু হোয়াট ইউ হ্যাভ টু ডু অ্যান্ড এগেইন ট্রাই টু ডু হোয়াট ইউ হ্যাভ টু ডু "
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।