ছাত্র দি ব্লাইন্ড সাইড মুভির নাম ইতিমধ্যে অনেকেই হয়তো শুনেছেন। মুভিটিতে অভিনয়ের জন্য সান্ড্রা বুলক বেস্ট অ্যাক্ট্রেস এর পুরস্কার পেয়েছেন। মুভিটিতে তার পারফর্মেন্স ছিলো খুবই ভালো। তবে তার শক্ত প্রতিদন্ধি ছিলেন আরেক শক্তিমান অ্যাক্ট্রেস মেরিল স্ট্রিপ। শেষ পর্যন্ত সান্ড্রা বুলকই অস্কারের শেষ হাসিটুকু হাসলেন।
যারা মুভিটি দেখেছেন তারা অবশ্যই স্বীকার করবেন, সান্ড্রা তার অভিনয়ের যথার্থ সম্মানই পেয়েছেন। তবে এ বছর সান্ড্রা বুলক আরেকটি পুরস্কার পেয়েছেন। সেটি হলো রেজি এওয়ার্ড। এটি দেওয়া হয় সবচেয়ে বাজে অভিনয়ের জন্য। অল অ্যাবাউট স্টেভ মুভিতে বাজে পারফর্মেন্সের জন্য তিনি পেয়েছেন ওরস্ট অ্যাক্ট্রেসের খেতাব।
অতএব একই বছর ভালো এবং মন্দ দুই ধরনের অ্যাওয়ার্ডই তিনি পেয়েছেন।
যাই হোক, দি ব্লাইন্ড সাইড মুভিটি ট্রু স্টোরি বেইজড। মাইকেল অহের এর উপর মুভিটি নির্মিত। আফ্রিকান-আমেরিকান বংশোদ্ভব অহের বড় হয় তার ড্রাগ এডিকটেড মার সাথে মেনফিসে। তার বাবার কোন খূজ নেই।
পরে মাইকেল যখন একটু বড় হলো তখন সে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ে। তার থাকার কোন জায়গা নেই। ভাগ্যক্রমে সে প্রাইভেট ক্রিশ্চিয়ান স্কুলে ভর্তি হয় একজন প্লেয়ার হিসেবে। এবং ঐ স্কুলে পড়ে সান্ড্রা বুলকেরই ছেলে-মেয়ে। এক কনকনে শীতের রাতে মাইকেল রাস্তা দিয়ে হাটছিলো।
এমন সময় সান্ড্রা বুলক তার ছেলে-মেয়ে এবং হাসবেন্ডকে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গাড়ির সামনে পড়ে মাইকেল। মাইকেল ছিলো খুবই মোটা। তার পরনে ছিলো থ্রি কোয়াটার্স এবং একটি গেন্জি। তার হাতে একটি ব্যাগ ছিলো।
শিতে সে কাপছিলো। মাইকেল যাচ্ছিলো তাদের স্কুলের জিমে। কারন সে জায়গাটা গরম। সেখানে তাকে রাতে ঠান্ডায় কষ্ট পেতে হবেনা। সান্ড্রা তার ছেলের কাছ থেকে জানতে পারে মাইকেল তাদের স্কুলেই পড়ে।
সবাই তাকে বিগ মাইক বলে ডাকে। মাইকেল খুবই কম কথা বলে। এবং সে কারো সাথে মিশে না। এমনকি সে হাসেও না। সান্ড্রা বুলক তার গাড়ি থামায়।
মাইকেলের কাছে জানতে চায় সে কোথায় যাচ্ছে। মাইকেল বলে জিমে যাচ্ছি। এরপর সান্ড্রা বুলক চলে যায়। কিন্তু কিছুদূর গিয়ে আবার গাড়ি ব্যাক করে। মাইকেলকে বলে এখন তো জিম বন্ধ।
তখন মাইকেল কোন কথা বলেনা। বুলক তাকে গাড়িতে উঠতে বলে। মাইকেল গাড়িতে উঠে। বুলক তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়।
এরপর শুরু হয় মাইকেলের লাইফ চেইন্জ হওয়ার দিন।
একের পর এক তার লাইফ চেইন্জ হতে থাকে। তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু সান্ড্রা বুলকের ছোট ছেলে। স্কুলে মাইকেল ভালো রেজাল্ট করতে পারেনা। পড়া পারেনা। খেলাধূলায়ও ভালোনা।
কিভাবে খেলতে হবে সেটাও জানেনা। তবে আছে অনেক শক্তি। সেই শক্তিটাকে সে প্রপার অয়েতে কাজে লাগাতে পারেনা। এই সকল সমস্যায় তাকে হেল্প করেন সান্ড্রা বুলক এবং তার ফ্যামিলির মেম্বারারা। এভাবে তিনি একজন ধারুন প্রতিভার ছেলেকে স্পোর্টের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে তার লাইফ পাল্টে দেন সান্ড্রা বুলক।
মাইকেল প্রথমদিকে খারাপ করলেও পরে আস্তা আস্তা ভালো করতে থাকে। আর এসবই যে সান্ড্রা বুলক এবং তার ফ্যামিলির জন্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রতিটি মানুষেরই প্রতিভা থেকে। সবাই সেই প্রতিভাটা দেখানোর সুযোগ পায়না। এটা হতে পারে সঠিক গাইডের অভাবের কারনে।
আবার হতে পারে আর্থিক অসচ্চলতার কারনে। এদের প্রতিভাটা তাই সুপ্তই থেকে যায়। এরা জীবনে না পারে নিজের কোন পরিবর্তন করতে না পারে দেশের পরিবর্তন করতে। অনেক সময় সঠিক সাপোর্টের কারনে বিপথেও চলে যেতে পারে। খিন্তু যখন তারা আশেপাশের মানুষের সহযোগিতা পায় তখন তারা তাদের নিজেদের সেরা কাজটা উপহার দিতে পারে।
এই প্রাপ্তিটুকু যে শুধু তাকে বদলে দেয় তা না। এটা সমাজ এমনকি দেশকেও বদলে দিতে পারে। তারা হতে পারেন দেশের জন্য গর্ব। হতে পারেন আইডল।
মুভিটিকে সাধারনভাবে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথম ভাগটা হলো প্রচন্ড টাচি। মাইকেলের অভাব-অনটন, তার লাইফ স্টাইল সবই আমাদেরকে নাড়া দিবে। যখন মাইকেল গরমের জন্য জিমে গিয়ে রাত কাটায়, একটি গেন্জি পরে তাকে দিনের পর দিন কাটাতে হয় তখন অবশ্য চুক্ষে পানি না এসে পারেনা। আবার যখন তাকে নিজস্ব একটি বেডসহ রুম দেওয়া হয় তখন আবার তার যে অভিব্যাক্তি তা দেখেও মান খারাপ হয়ে যায়। মাইকেলের প্রতি তখন সবারই সহানুভূতি বেড়ে যাবে।
আর যারা বেশি আবেগপ্রবন তাদের চুক্ষের পানি আটকানো খুবই কষ্টকর হবে।
অন্যদিকে মাইকেল যখন তার লাইফ চেইন্জ করতে থাকে তখন অনেককেই আনন্দ দিবে। মাইকেল যখন স্পোর্টে নাম করে ফেলে তখন সারা দেশ থেকে তাকে হায়ার করার জন্য লোক আসে। এ সময় আগতদের সাথে কথা বলেন মাইকেল এবং তার ছোট বন্ধু-বুলকের ছেলে। এখনে সবাই আনন্দ পাবেন যখন দেখবেন মাইকেল কথা না বলে তার ছোট বন্ধু কথা বলছে।
এবং তার কথা খুবই উচু লেভেলের।
একই সাথে মান খারাপ করা এবং হাসি-আনন্দের মুভি দি ব্লাইন্ড সাইড। মুভিটি দেখার পর অনেকেরই চিন্তায় প্রভাব ফেলবে। তবে ক্যারিয়ার হিসেবেও মুভিটিকে রাখা যাবে। মুভিটির পপুলারিটি এখন তুঙ্গে।
গত সপ্তাহে এর পপুলারিটি বৃদ্ধির হার ছিলো ২০০ পারসেন্ট। এবং এর আএমডিবি রেটিং ছিলো ৭.৭। অতএব বুঝতেই পারছেন মুভিটি কতটুকু পপুলার হয়েছে। এই চমৎকার মুভিটির ডিরেক্টর হলেন জন লী হংকক। একই সাথে বায়োগ্রাফি, ড্রামা এবং স্পোর্ট বিষয়ক মুভিটি ২০ নভেম্বর ২০০৯ সালে আমেরিকায় রিলিজ পায়।
অস্কার পাওয়া মুভিটিতে সান্ড্রা বুলক ছাড়াও অভিনয় করেন টিম ম্যাকগ্র, কুইনটন আরন প্রমুখ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।