নারী ও শিশু আমার ভাল লাগার বিষয়। এদের নিয়ে কাজ করতে ভাললাগে। কিন্তু এখন আমার কর্মক্ষেত্র সকল জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে। পুষ্টিবীদরা সব সময় রঙিন শাক সবজী ও ফলমুলের গুরুত্ত্ব বর্ণনা করে এসেছেন। যা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে উৎপাদন হয় তাই শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।
সেকারনেই সচেতন নাগরিকের কাছে অর্গানিক (ন্যাচারাল) খাদ্য দ্রব্যের চাহিদা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।
সবুজ শাক্ সবজীর মধ্যে ভিটামিন “সি”, হলুদ কিংবা রঙিন ফল মুল ও সবজীর (মিষ্টি কুমড়া, টমেটো ও গাজর ইত্যাদি) মধ্যে ভিটামিন “এ” প্রচুর পরিমানে থাকে যা গ্রহন করার ফলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
কিন্তু সাধারন জনগন হিসাবে আমরা নিত্য দিন কি খাচ্ছি, সেটা কতটুকুই বা স্বাস্থ্য সম্মত, তার খবর কি রাখি ?!
আপেল, কলা, আনা্রস, আম, কাঠাল, জাম, লিচু ও পেয়ারা ইত্যাদি সব কিছুতেই মেশানো হচ্ছে কেমিকেল। কিছু কেমিকেল কাঁচা কে পাঁকা করার জন্য আর কিছু কেমিকেল পোঁকামাকড়ের হাত থেকে এই সব ফলমুল কে রক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। যার ফলে আমরা নিজের অজান্তেই এই সব খেয়ে বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যার সম্মুক্ষীন হচ্ছি।
রোজার সময়ে যাঁরা চাকুরীজীবী পরিবার আছেন তাঁরা অধিকাংশ খাবারই কিনে খেতে পছন্দ করেন। যেমন জিলাপী, জুস, হালিম কিংবা যে কোনো ভাঁজা পোড়া ইত্যাদি। অনেকে শখ করেও কিনে খান।
তেলের মধ্যে মবিল দেওয়া হচ্ছে যাতে করে পিয়াজু , সিঙ্গারা ইত্যাদি মচ মচে হয়। জিলাপির রঙ কমলা করার জন্য যে কেমিকেল কালার দেওয়া হচ্ছে তা শরীরের জন্য ভীষন ক্ষতিকর।
রঙিন করার জন্য যে সমস্ত রঙ (textile colour) ব্যবহার হয় তাঁর মধ্যে কমলা রঙ সবচেয়ে ক্ষতিকর।
আমরা আমাদের বাচ্চাদের জন্য সখ করে কত কিছুই কিনে দেই যার মধ্যে এই সব ক্ষতিকর কেমিকেল ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ আইসক্রীম, চিপস্, বিস্কিট, ক্যান্ডি , চকলেট, কেক, চুইংগাম, রঙিন মিষ্টী এবং বিভিন্ন রকমের জুস ।
উন্নতশীল দেশে এই সব খাবারে সিনথেটিক কালার ব্যবহার করা হয় যা শরীরের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। তাঁরা একটা মানদন্ড অনুসরন করেন, যা আমাদের দেশে মানা হচ্ছে না।
আমাদের কোক, মিরিন্ডা, পেপসি এবং যে কোন রঙিন পানীয়ের মধ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে কেমিকেল কালার।
বেগুন কেনার সময় দেখে কিনুন যে পোঁকা আছে কি……… না ! পোকাঁ নাই দেখে কিনলে আপনি সাময়িক লাভবান হবেন কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী এক ভয়ানক শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হবেন ।
আমাদের শরীরের ভিতরে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়, তা লুকায়িত থাকে বলে আমরা টের পাই না, কিন্তু যখন তা বেদনার আকারে প্রকাশ পায় তখন টের পাওয়া যায় …। ততদিনে অনেক দেরী হয়ে যায়। সব সবজী কেনার ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য।
মাছের বাজারে মাছ কেনার সময় খেয়াল করুন মাছি আছে কিনা, মাছের গন্ধ পান কিনা ! মাছের বাজারে মাছের গন্ধ থাকবে, মাছি থাকব্, এটাই স্বাভাবিক।
অসাধু ব্যবসায়ীরা শুধু মুনাফার লোভে যে ক্ষতি দেশ ও দশের করে যাচ্ছেন তাঁর বিচার নিশ্চয় একদিন হবে। দরিদ্র চাষী তাঁর ফসল নষ্ট হবার ভয়ে যে সমস্ত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করছেন তাঁর বিরুদ্ধে গনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
আমার এই লেখা সাধারন জনগনের জন্য তাই ইচ্ছা করেই ফর্মালিন , কার্বাইড ইত্যাদি রাসায়নিক নামগুলো ব্যবহার করিনি।
ফর্মালিন পচন রোধ করে আর কার্বাইড দিয়ে কাঁচা ফলকে পাঁকা করার কাজে লাগানো হয় আর পানীয় জাতীয় খাবারে ব্যবহার হচ্ছে টেষ্কটাইল কালার।
সর্বোপরি নকল ভোজ্য তেল থেকে সাবধান থাকা খুবই জরুরী।
আসল রুপচান্দা বোতল ও প্যাকেটের এর নমুনা
নকল রুপচান্দা বোতলের নমুনা
বাংলাদেশে Bangladesh Standard and Testing Institution (BSTI) , Directorate of Consumers Rights Protection (DCRP) এবং Local government bodies আছে যারা এই সব নকল ও ভেজাল প্রতিরোধে কাজ করার কথা। কিন্তু যথেষ্ট মানব সস্পদ ও সমন্বয়ের অভাবে এরাঁ কতটুকু কাজ করতে পারছে তা বলাই বাহুল্য। সরকার যদি নিয়মিত ভাবে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে মনিটরিং করেন তাহলে হয়ত কিছুটা হলেও ভেজাল রোধ করা সম্ভব।
কিন্তু বর্তমান তথ্য মতে এই ১৫ কোটি ২৫ লাখ জনসংখ্যাকে এই সাপোর্ট দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মানব সম্পদ সমন্বয়ে গঠিত মাঠ প্রশাসন দরকার।
তা কি আদৌ সম্ভব !
কুজা চিত হয়ে শুতে পারে না । নিজস্ব খাদ্য দ্রব্যের (যা আমরা নিত্যদিন গ্রহন করি) নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের নিজেদেরকেই নিতে হবে। অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে লাভ নেই। জ্ঞানের শুন্যতা আমাদের মধ্যেই বিদ্যমান। আমাদেরকেই সচেতন হতে হবে।
জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে খাদ্য নিরাপত্তার দায়িত্ব ব্যাক্তি জীবন থেকেই মেনে চলতে হবে তবেই সমষ্টীগত ভাবে আমরা লাভবান হবো। না হলে ক্ষতির রাজ্যে আমারই বাস করব ।
সংযমের এই মাসে আমদেরকেই ভেজাল খাবার কে “না” বলতে হবে। আমরা যদি না কিনি তবেই এই সব অসৎ ব্যাবসায়ী ভেজাল বানানো এবং বিক্রি ও উৎপাদন বন্ধ করবে ।
Pure Food Ordinance(1959) অনুযায়ী ভেজাল খাবার বিক্রি করা আইন অনুযায়ী ভয়ানক অপরাধ ।
নকল ও ভেজাল প্রতিরোধে এগিয়ে আসুন। আমি, আপনি ও সবাই মিলে তৈরী করি বিষমুক্ত খাবার ব্যবস্থা ও পরিবেশ।
নিন্মের লিংক এর এই লেখাটিও পড়ে দেখতে পারেন।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।