আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প:জ্ঞানী সাধক ও মূঢ় নওল কিশোর

নিরাকার "সুশীল সমাজের" চরণকমলে উৎসর্গীকৃত: সকল চরিত্র কাল্পনিক বিদ্যাশাহীর নামটি যেমন, কাজেও তাহারই পরিচয়। দেশের জ্ঞানী গুনীর অভাব নাই। আর তাহাদের শিরোমণীকূল হইতেছেন জ্ঞানরত্ন। তাঁহার পান্ডিত্য, সাধনা,বিদ্যাগরিমা কিংবদন্তীসম। লোকে বলিয়া থাকে বিদ্যাশাহীর নামটি সাধক জ্ঞানরত্নের কারণে ধন্য হইয়াছে।

তাঁহার নামের পূর্বে অর্জিত সম্মানসূচক উপাধি আর পদবীসমূহ লেখিবার নিমিত্ত অনুচর নিযুক্ত করা হইয়াছিল। তাঁহার এহেন দীর্ঘ পদবী আর উপাধিরাশি শুনিবমাত্র অন্তরে সমীহ জাগিত। নিজ দেশের গন্ডি ছাড়াইয়া জ্ঞানরত্নের জ্ঞানের সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়াইয়া পড়িয়াছিল। অন্য দেশের রাজা মহারাজারা পর্যন্ত রাষ্ট্রপরিচালন, পররাষ্ট্রনীতি , রণকৌশল প্রভৃতি বিষয়ে পরামর্শলাভের নিমিত্তে জ্ঞানরত্নের নিকটে আগমন করিতেন। আর বিদ্যাশাহীর কথা তো বলাই বাহুল্য।

তাহার বিনি আজ্ঞায় বিদ্যাশাহীর পাতাটিও নড়িত না। রাজা থেকে পেয়াদা পর্যন্ত জ্ঞানরত্নের কথায় উঠিত বসিত। সাধক মহাশয় অপরাপর সকলকেই তাঁহার বিদ্যাবুদ্ধির মহিমায় মোহাচ্ছন্ন করিয়াছিলেন কেবলমাত্র ক্ষুদ্রবালক আপন ভ্রাতুষ্পুত্র হামুদকে তিনি কিছুতেই বশ করিতেপারেন নাই। সেই শিশুকাল হইতে , হামুদ সাঙ্গোপাঙ লইয়া তাঁহার আশ্রমে হানা দিতো। বিশেষত তাঁহার সুসজ্জিত প্রাসাদোপম আবাসগৃহ একান্ত অগোছালো করিবার দিকে তাহার বিশেষ ঝোঁক পরিলক্ষিত হইতো।

তাঁহার বহুমূল্য লেখনীর উপর শিল্পকর্ম রচনাতেও হামুদের আগ্রহ উল্লেখ করিবার মত ছিল। জ্ঞানরত্ন বিশেষভাবে অপ্রস্তুত হইতেন যখন তাঁহার নিকট আগত ভদ্রমন্ডলীর সহিত কোন অতীব ভাবগম্ভীর আলোচনার মধ্যখানে হামুদ মূর্তিমান দুঃস্বপ্নের মত আগমণ করিয়া সুতীক্ষ সুউচ্চস্বরে সুউচ্চস্বরে 'থামো'বলিয়া চেঁচাইয়া উঠিত। বিবেচনাহীন ক্ষুদ্র মূঢ় শিশুর এহেন কান্ডে সমবেত লোকসকলের বেজায় আমোদ হলেও জ্ঞানরত্ন মহাশয় বড়ই বিব্রত বোধ করিতেন। কালক্রমে হামুদ এখন দুরন্ত কিশোর হইয়াছে কিন্তু তাহার স্বভাবের বিন্দুমাত্র সংশোধনও হয় নাই। দেশসুদ্ধু লোকের নিকট অতীব প্রভাবশালী জ্ঞানরত্নের সহিত বিপুল দুঃসাহসে সে প্রায়শই তর্কে লিপ্ত হয়।

মানীর মর্যাদা সকলে বুঝিতে পারে না বলিয়া জ্ঞানরত্ন মনে মনে আক্ষেপ করেন। এমন ভাবেই দিন কাটিতেছিল, কিন্তু অকস্মাৎ একদিন বিদ্যাশাহীর চিরশত্রুরাষ্ট্র দনশাহী রাজ্য আক্রমণ করিল। শত শত লোকের প্রাণহানী হইতে লাগিল। রাজামহাশয় জ্ঞানশাহীর পরামর্শে অশ্বারোহী যোদ্ধাবার ব্যুহ রচনা করিলেন, শত্রুপক্ষ শক্তিশালী কামান দিয়া সৈন্যদলকে উড়াইয়া দিল। পাল্টা জবাব দিবার মত মারণাস্ত্র জ্ঞানরত্ন এত অত্যল্প কালে প্রস্তুত করিতে অপারগতা জানাইলেন।

রাজা তাঁহার পরামর্শক্রমে পরিখা খনন করিলেন , রাত্রীর আঁধারে কৌশলে শত্রুসেনা পরিখার উপরে বংশদন্ড ফেলিয়া পরিখা অতিক্রম করিল। রাজা ব্যাকুল হইয়া পুর্নবার জ্ঞানরত্নের শরণাপন্ন হইলেন। কোন উপায় না দেখিয়া জ্ঞানরত্ন রাজাকে পরাজয় স্বীকার করিয়া আত্নসমর্পন করিতে বলিলেন। ঐদিকে স্বদেশের এই ঘোর দূর্দিনে হামুদও বসিয়া নাই। পরাজয় আসন্ন দেখিয়া প্রাণভয়ে লোক পলাইতেছিল, হামুদ তাঁহার সঙ্গীসাথী নিয়া উহাদের পথরোধ করিল।

নবীন কিশোরের তেজোদীপ্ত মূর্তি দেখিয়া পলায়োন্মুখ জনতা উজ্জীবিত হইলো। সমরজ্ঞানবিহীন জনতা মাতৃভূমির রক্ষার্থে অকুতোভয়ে অস্ত্রহাতে শত্রুসেনানীকে প্রতিহত করিতে অগ্রসর হইলো। জ্ঞানরত্ন নিজ প্রাসাদে বসিয়া রণকৌশলে অনভিজ্ঞ ভ্রাতুষ্পুত্র হামুদের এহেন হঠকারী পদক্ষেপে তাহার বেঘোরে প্রাণহানীর ভবিষ্যৎবাণী করিলেন। রাজপ্রাসাদের ক্রমশঃই নিকটবর্র্তী হইতে থাকা বিজয়ীপক্ষের দামামাধ্বনী শুনিয়া রাজা বিষন্নচিত্তে রাজমুকুট সহ আত্নসমর্পণে প্রস্তুত হইলেন। কিয়ৎকালের মধ্যেই রাজদরবারের কপাট খুলিয়া কিশোর হামুদ বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করিল।

বিস্মিত আনন্দিত রাজা বিজয়ী বীরের গলায় পুশ্পমাল্য পরাইয়া দিলেন। রাজ্যজুড়িয়া পক্ষকালব্যাপী উৎসব ঘোষিত হইলো। উৎসবের কোলাহলে সকলেই যোগদান করিল, কেবল জ্ঞানরত্ন আপন পাঠাভ্যাসের বিঘ্নসৃষ্টিকারী নানাবিধ শব্দতরঙ্গের উৎপাতে যারপরনাই বিরক্ত হইলেন। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিজয়ে মতিয়া ওঠা জাতির প্রতি কিছুক্ষণ আক্ষেপ প্রকাশ করিলেন। অতঃপর সশব্দে গবাক্ষ কপাট বন্ধ করিয়া ক্ষীণতম শব্দও প্রবেশের পথ রুদ্ধ করিযা পুর্নবার পাঠে মনোযোগী হইবার প্রয়াস করিলেন।

অযথা কালক্ষেপণের অবসর তাঁহার একেবারেই নাই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।