ঢাকা থেকে দাউদকান্দি যাবো। সায়েদাবাদ থেকে যাত্রাবাড়ীর এক ঘন্টার জ্যামটা অ্যাভয়েড করি নানা উপায়ে সরাসরি যাত্রাবাড়ী এসে সেখান থেকে বাসে উঠে। যাত্রাবাড়ী থেকে বাসে উঠার পর মোগরাপাড়ার আগে চৈতি টেক্সটাইল থেকে জ্যামে পড়লাম। মনে মনে আশা করছিলাম এ জ্যাম যেন সর্বোচ্চ মোগরাপাড়া চৌরাস্তা পর্যন্ত হয়, কিন্তু হলোনা। মেঘনা ব্রিজ থেকে জ্যাম আর তা দুইদিকে বিশ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে।
জ্যামের এ অংশটা পেরোতে ৩ ঘন্টা লাগলো। যাত্রাবাড়ী থেকে উঠার চার ঘন্টা পর দাউদকান্দি পৌঁছালাম।
এ চিত্র যদি একদিনের হতো তাহলে তা সহনীয় ছিলো, কিন্তু এ হলো প্রায় প্রতিদিনের বাস্তব অবস্থা। বিগত কয়েক বছরে জ্যাম ছাড়া যে কেউ ঢাকা থেকে কুমিল্লার ৯৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে সে নিজেকে সৌভাগ্যবান ভেবেছে। আমাদের ছোটবেলায় কুমিল্লা থেকে ঢাকা আসার পথে ফেরী ছিলো দুইটা।
জার্নিটা আমাদের অনেক প্রিয় ছিলো ফেরী দুটোর কারণে। নদীর বুকে ভেসে চলা এবং এর সাথে সাথে হকারের হরেক রকম মজাদার খাবার খেতে আব্বা শুধু সেই সময়টাতেই মানা করতেন না। সে সময় ঢাকা থেকে কুমিল্লা যেতে সময় লাগতো মোটামুটি ৫ ঘন্টা। দুঃখের বিষয়, আজ ফেরী নেই। রাস্তাও আগের চেয়ে উঁচু আর ভালো।
যানবাহন যদিও অনেক বেড়েছে, কুমিল্লা থেকে ঢাকা যেতে কম-বেশী ৫ ঘন্টা লাগে এবং মাঝখানের সে সময়টা নদীর সংস্পর্শে না থেকে গরমে সিদ্ধ হতে হয়। এর সাথে ক্ষুধা আর গরমের কষ্টে বাচ্চাদের যদি অসুস্থ্য হয়ে পড়তে হয় তাহলে তা কষ্টের বিষয় অবশ্যই। পথে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, এয়ারপোর্টগামী বিদেশ যাত্রীদের অবর্ণনীয় কষ্ট সবার কষ্টকেই ছাড়িয়ে যায়। ব্যক্তিগত সুখ দুঃখে যদি রাষ্ট্রের কিছু যায় না আসে তাহলেও বলা যায়, রপ্তানী পণ্য নিয়ে আটকে থাকা কাভার্ড ভ্যান যদি শিপমেন্ট মিস করে কিংবা পচনশীল পন্যবাহী ট্রাকের পণ্য পথেই নষ্ট হয়, রাষ্ট্রের ইকোনমিতে তা বিরূপ প্রভাব নিশ্চয়ই ফেলে।
আমার খুব ছোটবেলায় কাঁচপুর ব্রিজের নীচটাও ফেরী দিয়ে পার হয়ে ঢাকা আসতে হতো।
অনেক বছর আগের তৈরী সে ব্রিজও চার লেনের করা হয়েছে রাস্তাটার গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে। এছাড়াও শুধুমাত্র মেঘনা এবং দাউদকান্দি ব্রিজ বাদে দেশের আর সকল গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ তৈরী করা হয়েছে চার লেন করে। মেঘনা আর দাউদকান্দি ব্রিজের মতো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দুটি ব্রিজ কেন চার লেন করা হয়নি তার জবাব দেবার মতো এখন কি কেউ আছেন? এ কি আরেকটি আংশিক ‘সেতু ট্র্যাজেডি’?
দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হলো এই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। রেলপথের গুরুত্ব বিবেচনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথও একই গুরুত্ববাহী। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের এই রেলপথ বৃটিশ আমলে তৈরী করা।
এর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম অংশটি মোটামুটি সড়কপথের সমান্তরাল। দুই পথে যেতে একই সময় লাগে। সমস্যা হলো কুমিল্লা থেকে ঢাকা অংশটিকে নিয়ে। বৃটিশ আমলে মালবাহী ট্রেনে করে সকল জুট মিল আর সার কারখানা ধরে আসার সুবিধার্থে কুমিল্লা থেকে কসবা, আখাউড়া, ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া, আশুগঞ্জ, ঘোড়াশাল, নরসিংদী, টঙ্গী হয়ে রেলপথ তৈরী করা হয়েছিলো। ঢাকা-কুমিল্লার মাত্র দুই ঘন্টার পথ এতে করে সাড়ে পাঁচ-ছয় ঘন্টার পথে পরিণত হয়েছে।
দেশে কতো বড় বড় প্ল্যান হচ্ছে, যা বাস্তবায়িত হোক না হোক শুনেও ভালো লাগে। স্কাই ট্রেন, বহুমুখী পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল আরো কতো কিছু। ঢাকা থেকে কুমিল্লার সরাসরি একটা রেলপথ কি এই প্ল্যানে আসতে পারে না? প্রতিদিন এই পথে কতো হাজার লোক চলাচল করে তা গুনে শেষ করা যাবেনা। এই পথে সোজা একটা রেললাইন যে কোন মাস্টারপ্ল্যানের চেয়ে ড্রামাটিক রেজাল্ট দিতে পারে। এমনকি এটা হতে পারে বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম পথ।
দুঃখের সাথেই কথাগুলো লিখলাম। আমার দৌড় ব্লগ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। “নীতি নির্ধারক নামের অদৃশ্য লোকদের কানে এ কথাগুলো যাবে”-ঢাকা চট্টগ্রাম রোডে আবার জ্যামে আটকে হয়তো এটাই বসে বসে ভাববো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।