আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

~~ তাহাদের কথা~~

নীলান্তিকা: অরিত্র মনে পড়ে সেই প্রথম দেখার কথা? ফাগুনের সেই পড়ন্ত বিকেল, চৈতালী হাওয়া, কৃষ্ণচুড়ার দিনগুলি মন হারাবার বেলা... অরিত্র সে রক্তিম গোধুলী রঙধনু রঙ আর আলোকিত ক্ষণ সে কি ভোলা যায়? আবৃত্তি পরিষদের মিটিং ছিলো সেদিন, টি,এস,সি এর বারান্দায় একলা বসে আমি এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়েছিলো জোড়ায় জোড়ায় কপোত কপোতীরা বেনসনের প্যাক হতে টেনে নিলাম ধুমকাঠি ঠোঁটে চেপে অগ্নি সংযোগ করে সামনে তাকাতেই থমকে গেলাম...... লম্বা বারান্দাটার মাঝ বরাবর হেঁটে আসছিলে তুমি, স্বর্গের অপ্সরী ....... রাজ হংসী গ্রীবায় দোদুল্যমান কাঁঠালচাঁপার মালা বাসন্তী রঙ শাড়ী, এলোখোঁপায় গোঁজা শ্বেত গন্ধরাজ! আমার চোখে চোখ পড়তেই মুখ ফিরিয়ে নিলে........ তোমাকে দেখবার পর, জীবনানন্দ হয়ে গেলাম আমি.. খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আর উদভ্রান্ত চোখে উদাসীন এক কবি, রাত জেগে লিখেছিলাম একশো এক প্রেমপদ্য, নীলান্তিকা সব তোমারই জন্য সেসব কি কোনো মহাকবির মহাকাব্যের চাইতে কম কিছু ছিলো? নীলান্তিকা: অরিত্র, পাগলামীতে তুমি সবার সেরা সর্বযুগের সর্বকালের আস্ত এক পাগল তুমি.. অরিত্র: শুধু পাগল! তোমাকে ভালোবেসে উন্মাদ হতেও রাজী আমি, তোমার জন্য অনায়াসে পাড়ি দিতে পারি সাত সমুদ্র, তেরো নদী এভারেস্টের চুড়োয় উড়িয়ে দিতে পারি তোমার আঁচল ছিঁড়ে এক টুকরো পতাকা.... গন গনে সূর্য্যের বুকে এঁকে দিয়ে আসতে পারি তোমার কপালের রক্ত লাল টিপ। নীলান্তিকা: হয়েছে, হয়েছে থামো এইবার... আর বড়াই করে কাজ নেই....... অরিত্র তাহলে এবার বলো ভালোবাসার পরীক্ষায় কত নম্বর দেবে তুমি আমায়? নীলান্তিকা হা হা হা অরিত্র ভালোবাসার পরীক্ষায় তোমাকে একশোতে দুশো নম্বর দেওয়া হলো। সত্যি স্বপ্নরাঙানো দিনগুলি ছিলো সেসব!!! অরিত্র: এখনও কি নেই? নীলান্তিকা: আরে আছে তো.. বলতে দাও আমাকে.... চৈত্র গেলো বোশেখ গেলো আষাড় শ্রাবনে পুরো একটা বছর... ঘর বাঁধলাম আমরা, ছোট্ট দুকামরার সংসার... জানালার গ্রীলে মায়াবী জ্যোস্নালোক... আঁধোরাতে ঘুম ভেঙে দেখেছি কতবার সপ্নলোকের রাজকুমারের মুখচ্ছবি...... চুপিচুপি অগোচরে...... অরিত্র: আর তারপর!!! আমার রাজকন্যা!!! হাতে হাত রেখে হেঁটেছিলাম বালুকাবেলায় নগ্ন পায়ে একেঁছিলাম যুগল মানচিত্র ভেজা বেলাভুমি্তে, রুপালী সৈকতে আছড়ে পড়ছিলো নীল জলরাশি .. আঁকাশে উড়ছিলো সিগাল.. নীলান্তিকা: আর বাতাসে আমার নীলাঁচল, ঝাপটা খাচ্ছিলো বারেবার তোমার গায়ে, ঠিক সে মুহূর্তে আমরা ছিলাম পৃথিবীর সবচাইতে সুখী মানব মানবী আমি গেয়েছিলাম গুন গুন ....... সেই ঝিনুকফোটা সাগরবেলার গান..... অরিত্র: সে ছিলো আমাদের অনেকদিনের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়িত ক্ষন আমার কাঁধে মাথা রেখে তুমি দেখেছিলে সূর্য্যাস্ত...... সীমান্ত জুড়ে নেমেছিলো একটু পর গাঢ় জমাট নীলরঙ আকাশে একটা দুটো করে হীরকমালা থেকে ছড়িয়ে পড়ছিলো হীরকখন্ড... নীলান্তিকা: আর তারপর!! তারপর অরিত্র.. সেই সর্বনাশা ক্ষন!!!! কালোস্রীনি রাহুর গ্রাসে ঢাকলো কোজাগরী চাঁদ! ওহ অরিত্র!!!এত কষ্ট ......এত ব্যাথা!!! এত কষ্ট দিলে আমায় অরিত্র কি করে পারলে? তোমার দেওয়া নীলমনিনাগের বিষাক্ত দংশনে ডানা ঝাপটে মরেছে....নীলকন্ঠী ময়ূরী .. অনাবিল শূন্যতা আর অব্যাক্ত হাহাকার.... দীর্ঘ সেসব দিনরাত্রীর নিষ্ঠুর খেলায় প্রস্তর পুত্তলিকা হেঁটেছে, চলেছে, শেষ করেছে সকল কাজ সুচারুরূপে প্রানহীন এক রোবো মানবী..... অরিত্র: পাগলী!! ভুল কি শুধু আমারই ছিলো??? দোষ কি সব আমারই? সে কটাদিন আমিই কি সুখে ছিলাম?? অহর্নিশ নিকোটিন ধোঁয়া আর কন্টক মুকুট দুশচিন্তার মাইগ্রেন ইনসমোনিয়াক রাতের নিয়ন আলো, অপার নিসঙ্গতা..... কুঁরে কুঁরে খেয়েছে অবিরাম ঘুনপোকাদের দল!! ক্ষমা করো প্রিয়া... ন্যায় অন্যায়, দোষ ত্রুটির বিভেদ ভুলে মাথায় তুলে নিলাম আজ সকল অপরাধ, সকল অপবাদ... মুছে ফেলো দ্বিধার কাজল, ছুড়ে ফেলো সব অভিমান.. মম হৃদয় রক্তরাগে আজ রন্জিত হোক তোমার পদতল .... নীলান্তিকা: অরিত্র, দুঃখ দিওনা আর কখনও আমায়.... অরিত্র: নীলান্তি, দেখো সন্ধ্যা নেমেছে ঐ দূরের ঝাউ বনে চলো ঘুরে আসি আর একটাবার ঐ অজানায়.... এ লেখাটা আমি কিছুদিন আগে এক কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানে ডুয়েট আবৃত্তি করেছিলাম।আবৃত্তিটার ভিডিও আছে কিন্তু অডিও নেই। যাইহোক এই লেখাটা বেঈমান আমি ভাইয়াকে উৎসর্গ করছি!!! যদিও ভাইয়াটা নির্বাক হয়ে আছে। উৎসর্গের সাথে সাথে তার বাকশক্তি ফিরে পাবার আন্তরিক কামনা করছি।  

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।